সরকারের ঋণ বাড়লেও জিডিপি স্বাভাবিক : আইএমএফ

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, সরকারের ঋণ বাড়লেও তা বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকারের তুলনায় স্বাভাবিক রয়েছে। চলতি অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আয়ের তুলনায় খরচ বেশি হবে। ফলে সরকারের সার্বিক ঘাটতি বাড়বে। আর ঘাটতি মেটাতে সরকারকে বাড়তি ঋণ নিতে হবে বলে মনে করছে আইএমএফ।

বুধবার (১১ অক্টোবর) রাতে প্রকাশিত আইএমএফ-এর ‘ফিসক্যাল মনিটর, অক্টোবর ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থাপনার সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আয়, ব্যয়, ঘাটতি, ঋণ এবং বিভিন্ন খাতে সরকারের ব্যয়ের চিত্র প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে জিডিপির আকার বাড়ছে, কিন্তু জিডিপি বৃদ্ধির তুলনায় রাজস্ব আদায় কমছে। কর জিডিপির অনুপাত কমে যাচ্ছে।

কর জিডিপির অনুপাত ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৪ শতাংশে উঠেছিল। এরপর থেকে এই হার কমছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে কর জিডিপির অনুপাত ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে ৮ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়ায়। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ হার বেড়ে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে।

আগামী অর্থবছরে (২০২৪-২৫) তা আরও বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কর জিডিপির অনুপাত ৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে তা ১০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

এদিকে আইএমএফ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশকে দেয়া ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত ছিল প্রতিবছর জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ করে রাজস্ব বাড়ানো। তা দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত করা। অর্থাৎ দুই বছরে অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কর জিডিপির অনুপাত ১০ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নানা পদক্ষেপ নিলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজস্ব বাড়ে নি।

আইএমএফ প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের রাজস্ব আয় যেভাবে বাড়ানো হচ্ছে, তাতে কর জিডিপির অনুপাত ডাবল ডিজিটে বা ১০ শতাংশে নিতে আরও তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। আইএমএফ ঋণের শর্ত অনুযায়ী ২০২৫-২৬ অর্থবছরেই কর জিডিপির অনুপাত ১০ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করার কথা। কিন্তু অনেক শর্তের মতো এটিও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারের রাজস্ব আহরণ চলতি অর্থবছরে কিছুটা বাড়লেও খরচও বাড়বে। জিডিপির অনুপাতে সরকারের ব্যয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয়েছিল সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এরপর থেকে তা কমছে। গত অর্থবছরে তা কমে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এটি ১৩ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। আগামী অর্থবছরে তা ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ হবে। ২০২৭-২৮ অর্থবছরে তা বেড়ে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।

রাজস্ব চেয়ে খরচ বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে ঘাটতিতে পড়বে সরকার। চলতি অর্থবছরে এ ঘাটতি সাড়ে ৪ শতাংশ হতে পারে। আগামী বছরও ঘাটতি সাড়ে ৪ শতাংশে সীমিত থাকবে। তবে এর পরের বছর ঘাটতি বেড়ে ৫ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের গ্রস ঋণ স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। সাধারণত জিডিপির ৫০ শতাংশের বেশি ঋণ হলে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। গত অর্থবছরে ঋণ ছিল জিডিপির ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে। আগামী অর্থবছরে তা আরও বেড়ে ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারের ঋণ আরও বেড়ে জিডিপির ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। ২০২৭-২৮ অর্থবছরে হবে ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ।

এদিকে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্তও পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আইএমএফ।

বুধবার (১১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর (ডেপুটি গভর্নর ১) কাজী ছাইদুর রহমান, ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ, মো. নাছের ও সাজেদুর রহমান খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নিজেদের কর্মকাণ্ডের ভয়েই দেশি চ্যানেলের টক শোতে নেই আ. লীগ: রুমিন ফারহানা Jul 08, 2025
img
হাইকোর্টের রায় প্রকাশ: তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসহ কয়েকটি সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা Jul 08, 2025
img
কানাডার রাষ্ট্রদূতের সাথে সিইসির সাক্ষাৎ, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা Jul 08, 2025
img
বিগত তিন নির্বাচন বৈধ বলা পর্যবেক্ষকদের সুযোগ দেওয়া হবে না : সিইসি Jul 08, 2025
img
১০ বছর পরেও একসঙ্গে, উইম্বলডনে নজর কাড়লেন ভিরাট-আনুশকা Jul 08, 2025
কোটার বিরুদ্ধে উত্তাল বুয়েট ক্যাম্পাস; ৩ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন! Jul 08, 2025
img
বিএনপির সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ Jul 08, 2025
img
একসঙ্গে রুমে ছিলেন কমল হাসন-রেখা, আচমকা হাজির হয়ে অভিনেতাকে ধমক দিয়েছিলেন তার স্ত্রী! Jul 08, 2025
মায়ের জন্য যোগ্য সঙ্গী চাই বাঁধনের মেয়ে সায়রা Jul 08, 2025
মুরাদনগরে মবের মূল হোতা বাচ্চু মেম্বার,যা জানাল র‍্যাব Jul 08, 2025
img
চলচ্চিত্র অভিনেতা ডিপজলের বিরুদ্ধে মামলা Jul 08, 2025
img
মবই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শক্তি: শামীম হায়দার Jul 08, 2025
img
আর্জেন্টিনার রদ্রিগো ডি পলকে প্রস্তাব দিল মেসির মায়ামি Jul 08, 2025
img
কক্সবাজারে সমুদ্রে গোসলে নেমে প্রাণ গেল চবি শিক্ষার্থীর, নিখোঁজ ২ Jul 08, 2025
img
‘রিংকিকে ছাড়ুন, আমি তো আয়ুষ্মান খুরানার ঠোঁটে চুমু খেয়েছি’, সচিব জিতেন্দ্র কুমার Jul 08, 2025
img
‘উদ্ভট’ ফ্যাশন সেন্সের কারণে কটাক্ষের মুখে নেহা কক্কর Jul 08, 2025
ট্রাম্পের চিঠি ড. ইউনূসকে, বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫% শুল্ক Jul 08, 2025
img
নীল সিনেমায় যোগ দিচ্ছেন আসামের জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার অর্চিতা ফুকান! Jul 08, 2025
img
ফুটবল আমাকে কল্পনার চেয়েও বেশি কিছু দিয়েছে, বিদায় বেলায় রাকিটিচ Jul 08, 2025
img
জুলাই পদযাত্রায় আজ মেহেরপুরে যাচ্ছেন এনসিপির নেতৃবৃন্দ Jul 08, 2025