দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছি : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের। এই বাংলাদেশের একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না, ঠিকানাবিহীন থাকবে না। প্রতি ঘরে ঘরে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। শিক্ষার হার বৃদ্ধি করেছি, দারিদ্রের হার কমিয়ে এনেছি, উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।

আজ সোমবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

বক্তব্যের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। এই মাসেই তিনি জন্ম নেন। আবার এই মাসেই তিনি সেই ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন। যা বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রু মোকাবিলা করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় এনে দিয়েছিল।

তিনি বলেন, যে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সেই স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার হবে না, এমন আইন করে হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। তখন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ উল্টোপথে যাত্রা শুরু করে। যেই জাতি যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে, সেই বিজয়ের কথা মাথা উঁচু করে তারা বলতে পারেনি, এমন একটা পরিবেশ তখন বিরাজমান ছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে যে মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতায় এসেছিল, তারাও এ দেশে একাত্তরের মতোই গণহত্যা চালিয়েছিল। আমাদের সেনা অফিসারদের একের পর এক হত্যা করা হয়েছে। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছে এবং এরপরে নির্বাচনী প্রহসন, দল গঠন, দল ভাঙন। নানান ধরনের খেলা ২১টি বছর আমাদের ওপর চলেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫’র পর স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। যে জয় বাংলা স্লোগান নিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল সেই স্লোগানকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সে সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের এবং সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা ও নির্যাতন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সরকার গঠনের পর আবারও হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ। এখন ৭ই মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, জয় বাংলা স্লোগান জাতীয় স্লোগান হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু রাষ্ট্রটি দেননি, বাংলাদেশ কীভাবে চলবে, সেই পথরেখাও তিনি দেখিয়েছেন। আবার বঙ্গবন্ধুর কারণে স্বাধীন বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়ে বসেনি ভারত। যে উদ্দেশ্যে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য ও হারানো গৌবর ফিরিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ।

এ সময় বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারী ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে সারা বিশ্বেই। তবুও আমাদের দেশের মানুষের যেন সমস্যা না হয় সেজন্য এই রমজান মাসে আমরা বিনা পয়সায় খাদ্য বিতরণ করছি। আমরা ইফতার পার্টি বাদ দিয়েছি। আমাদের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাছে আহবান জানিয়েছি যে, ইফতার পার্টি না করে ইফতার সাধারণ মানুষের মাঝে বণ্টন করতে। ইফতার পার্টি খাওয়াটা বড় কথা নয়, মানুষকে দেওয়াটাই বড় কথা। এভাবেই আমরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমাদের লক্ষ্য আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।

শেখ হাসিনা বলেন, আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলে, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গঠনে আমার এগিয়ে যাবো। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, এটাই আমাদের নীতি। তারপরও দেশে কিছু মানুষ আছে যারা আগুন সন্ত্রাস করে, অগ্নিসন্ত্রাস না করে, তাদের সুমতি হোক সেটাই চাই আমরা।

এর আগে, অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১০ বিশিষ্টজনের হাতে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন—স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে কাজী আব্দুস সাত্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট সার্জেন্ট মো. ফজলুল হক (মরণোত্তর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ আবু নঈম মো. নজিব উদ্দীন খাঁন (খুররম) (মরণোত্তর), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ড. মোবারক আহমদ খান, চিকিৎসাবিদ্যায় ডা. হরিশংকর দাশ, সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, ক্রীড়ায় ফিরোজা খাতুন, সমাজ বা জনসেবায় অরন্য চিরান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী ও এসএম আব্রাহাম লিংকন।

পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ৫০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়ে আসছে। এটি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক সম্মাননা।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা আজ Oct 09, 2025
img
চে গুয়েভারার আজ ৫৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী Oct 09, 2025
img
মুক্তির প্রথম ৬ দিনেই ৪০০ কোটির ক্লাবে ‘কান্তারা ১’ Oct 09, 2025
img
মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা সাইফের অজানা গল্প Oct 09, 2025
img
‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে এবার ফেসবুকে পোস্ট উপদেষ্টা আসিফের Oct 09, 2025
img
চ্যাটজিপিটির সাহায্যে শনাক্ত অগ্নিকাণ্ডের সন্দেহভাজন Oct 09, 2025
img
'আল-আকসার মালিক আমরা' Oct 09, 2025
img
অস্থিতিশীল ফ্রান্সে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন ম্যাক্রোঁ Oct 09, 2025
img
‘দেশের হয়ে টেস্ট খেলতে ইচ্ছুক অভিষেক’, জানালেন লারা Oct 09, 2025
img
শেখ হাসিনার সাথে ৫ জন উপদেষ্টা হাত মিলিয়েছে : রাশেদ খান Oct 09, 2025
img
জানা গেল শহিদুল আলমসহ আটক অধিকারকর্মীদের অবস্থান Oct 09, 2025
img

অভিনেত্রী সৌমি পাল

‘বাড়িতেও ঢুকতে দেয়নি, আমার কি চরিত্র খারাপ ছিল?’ Oct 09, 2025
img
ট্রাম্প প্রস্তাবিত ‘শান্তি পরিকল্পনা’র ১ম ধাপ কার্যকরে একমত দুই দেশ Oct 09, 2025
img
প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছে ২ দেশ, জানালেন ট্রাম্প Oct 09, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে একসঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন বাপ্পী চৌধুরী ও মাহিয়া মাহি Oct 09, 2025
img
বিসিবি নির্বাচনে শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ Oct 09, 2025
img
হাতিরঝিলে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে বাসযাত্রী, আটক ৫ Oct 09, 2025
img
২ অজি ক্রিকেটারকে জাতীয় দল ছাড়ার প্রস্তাব আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির Oct 09, 2025
img
নানা আয়োজনে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডাক দিবস Oct 09, 2025
img
আল্লাহ নিশ্চয়ই মৃত্যুর পর মুগ্ধর সাথে আমার দেখা করাবেন: স্নিগ্ধ Oct 09, 2025