প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় প্রয়োজন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ

প্লাস্টিক দূষণ ঠেকাতে প্রয়োজন বাস্তবমুখী ও সমন্বিত পদক্ষেপ। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ে গঠিত বাস্তবমুখী নীতি পরিবেশ রক্ষা ও দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

‘এনভায়রনমেন্টাল পলিসি ফর প্রোগ্রেস’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা।

বক্তারা বলেন, নিষিদ্ধ কোনো সমাধান নয়। সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য কোনো বিকল্প না রেখে নিষিদ্ধ ঘোষণার পথে যৌক্তিক সমাধান আসে না। বরং এতে সমস্যা আরো ঘণীভূত হয়। ২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয় তবে বাস্তবতার নিরিখে না হওয়ায় ও উৎপাদক-ভোক্তা পর্যায়ে যথেষ্ট সময় না দেওয়ায় জটিলতা বেড়েছিল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নীতিনির্ধারক, বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী ও খাত সংশ্লিষ্টরা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন মোহসিনা ইয়াসমিন, ডিবিএল গ্রুপের চিফ সাস্টেইনিবিলিটি অফিসার জাহিদ উল্লাহ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জাকির হোসেন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক দৌলত আখতার মালা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ রুমি, ইউকে এফসিডিও এর মার্জান নূর, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের রবিউল ইসলাম, রিভার্স রিসোর্স এর মুকিত হাসান প্রমুখ।

আলোচনার শুরুতে দেশে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়ছে। দেশে ২০০৫ সালে জনপ্রতি প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ ছিল তিন কেজি। ২০২০ সালে তা নয় কেজিতে পৌঁছেছে। রাজধানীতে এ হার আরও বেশি। ঢাকায় বছরে জনপ্রতি ২৪ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহৃত হচ্ছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় প্লাস্টিক দূষণ কমাতে উৎপাদকের বর্ধিত দায়িত্ব বা এক্সটেন্ডেড প্রোডিউসার রেসপনসিবিলিটি (ইপিআর) নীতি নিয়ে কাজ করছে। ২০২১ সালে করা হয় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা। পরে সেই বিধিমালায় একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক (এসইউপি) পণ্যের একটি তালিকা সংযোজন করা হয়। এসব পণ্য নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা চলমান। তবে এ নীতি বাস্তবায়নে বিদ্যমান পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকে আমলে না নিলে সার্বিকভাবে তা নেতিবাচক প্রভাব বয়ে আনতে পারে।‘

বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, ‘এসইউপি নিষিদ্ধ করা কোনো সমাধান নয়। এ খাতে চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতাগুলো আগে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক পদক্ষেপ নিয়ে গ্যাপ পূরণ করা প্রয়োজন। তাহলে গৃহিত নীতি যেমন ব্যর্থ হবে না, তেমনি অর্থনীতিও সচল থাকবে। বাস্তবায়নযোগ্য ইপিআর নীতিমালাকে আগে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকারকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা এ বিষয়ে তৃণমূল পর্যায়ে অবকাঠামো নিশ্চিত করা ও সেবা দেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় সরকারই অগ্রনী ভূমিকা রাখবে।’

বেসরকারি সংস্থা ওয়েস্ট কনসার্ন এর সহপ্রতিষ্ঠাতা মাকসুদ সিনহা বলেন, ‘কার্যকর ও টেকসই ইপিআর অর্থনীতিকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের এই দূর্বল অর্থনৈতিক অবস্থায় এমন কোনো অযৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়।’

টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদী ও সমাজভিত্তিক উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে নেসলে বাংলাদেশ এর কোম্পানি সেক্রেটারি এবং হেড অব লিগ্যাল ও ট্যাক্সেশন দেবব্রত রায় চৌধুরী বলেন, ‘কেবল আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে শক্তিশালী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যায় না। উন্নত দেশে এ ব্যাপারে নাগরিকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক ব্যবস্থা রয়েছে। দায়িত্বশীল হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ফল পাওয়া সম্ভব। পুনর্ব্যবহার ও দায়িত্বশীলতার সংস্কৃতি তৈরি করতে হলে সর্বসাধারণকে ইপিআর নীতিমালার আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।’

এছাড়াও বক্তারা বলেন, সংশ্লিষ্ট খাতের মধ্যে আরও আলোচনা ও সহযোগিতা বাড়ানো গেলে বাস্তবসম্মত ও সুদূরপ্রসারী ইপিআর কাঠামো তৈরি ও কার্যকর করা সম্ভব হবে। এছাড়া, দেশে প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধি ও সম্মিলিত কার্যক্রমের জন্য গণমাধ্যম ও জনসাধারণের অংশগ্রহণও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকে দেয়া হয়েছে: গভর্নর Nov 28, 2024
img
সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের: সংসদে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী Nov 28, 2024
img
সংগঠনকে নি‌ষিদ্ধ করার আগে তদন্ত করা হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ Nov 28, 2024
img
হজ নিবন্ধনের সময় বাড়ল Nov 28, 2024
img
প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় প্রয়োজন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ Nov 28, 2024
img
ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরও ৭ জনের Nov 28, 2024
img
আমাকে রংপুরের একজন উপদেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করুন,আবু সাঈদের পরিবারকে ড. ইউনূস Nov 28, 2024
img
শিক্ষার্থীদের আরও দায়িত্ববান হওয়ার আহ্বান সেনাবাহিনীর Nov 28, 2024
img
ঐশ্বরিয়ার নামে নেই ‘বচ্চন’ পদবি, বিচ্ছেদ জল্পনা তুঙ্গে Nov 28, 2024
img
বাংলাদেশ ইস্যুতে মোদির সঙ্গে জয়শঙ্করের বৈঠক Nov 28, 2024