আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতাকারীদের দমনে ব্যবহার করা হতো ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’। শেখ হাসিনা বা তাঁর দলের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কেউ স্ট্যাটাস দিলেও, তাকে ওই আইনে গ্রেপ্তার করে দেওয়া হতো জেলে। আর সাংবাদিক ও বিরোধী রাজনীতিকদের ধরতে চাইলেই দেওয়া হতো এই আইনে মামলা। পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সেই আইনটির নাম বদলে রাখা হয় ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন।
এরপর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর, অন্তর্বর্তী সরকার এই আইনটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এই আইনে ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ৪৫১ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এর মধ্যে ৯৭ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। তাঁদের মধ্যে ২৫৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাঁদের লেখা রিপোর্টের জন্য।
আবার গত ৩০ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩-এর অধীন গত আগস্ট পর্যন্ত দেশের ৮টি সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোট ৫ হাজার ৮১৮টি মামলা চলছে। যার মধ্যে স্পিচ অফেন্স-সম্পর্কিত মোট ১ হাজার ৩৪০টি মামলা চলমান, যার মধ্যে ৪৬১টি মামলা তদন্তাধীন। ৮৭৯টি মামলা দেশের ৮টি সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।
এবার এই সাইবার সিকিউরিটি আইনের অধীনে সারা দেশে যত মামলা রয়েছে সব প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ২১ জানুয়ারি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। বলেন ‘আগামী ৭ দিনের মধ্যে এসব মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়া হবে। একইসঙ্গে সাইবার সিকিউরিটি আইন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ করছে।’
বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের বিষয়ে ইতিমধ্যে এর আগেই গত বছর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। তবে এই আইন বাতিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাইবার সুরক্ষা আইনের কথাও বলা হয়। সেসময় আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন সাইবার সুরক্ষা আইনে কম্পিউটার ও হ্যাকিং সম্পর্কিত অপরাধের বর্ণনা থাকবে। তা নাহলে তথ্য ও প্রযুক্তির নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে। এর সঙ্গে মানুষের কথা বলার অধিকারের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
টিএ/