সম্প্রতি ভারতের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে দাবি করা হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারকে সুপরিকল্পিতভাবে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক দাবি করেছেন, কোনো মাস্টার প্ল্যান না থাকলে কেবল মাত্র ছাত্র আন্দোলন থেকে সরকার পতনের মতো ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। গণমাধ্যমটি আরও দাবি করেছে, ‘মার্চ টু ঢাকা’ সুপরিকল্পিত কোন ষড়যন্ত্রেরই অংশ ছিলো।
সব চেয়ে চাঞ্চল্যের তথ্য এই যে, ভারতীয় এ গণমাধ্যমের দাবি বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার তৈরী করা একটি প্রতিবেদন তাদের হাতে এসে পৌঁছেছে এবং সেই প্রতিবেদনে এমন কিছু মানুষের নাম উঠে এসেছে যারা সরাসরি আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পেতনে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের এ সঞ্চালক দাবি করেছেন, সরকার পতনের মাস্টারপ্ল্যানে ১৬ জন ব্যক্তি এই ষড়যন্ত্রে সরাসরি জড়িত। তাদের মধ্যে তিনজন নাকি তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরই ৩ প্রতাপশালী ব্যক্তি। গণমাধ্যমটির দাবি ‘ঘরের শত্রু বিভিষণ’এর মতো শেখ হাসিনার নিজের মন্ত্রিসভার কিছু সদস্য এবং আশেপাশের লোকজনই তথ্য ফাঁস করতো। পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা এবং বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাও জড়িত বলে দাবি করেছে গণমাধ্যমটি।
আওয়ামী লীগের ৩ জনের মধ্যে দুইজন মন্ত্রী এবং একজন যুবনেতার কথা উল্লেখ করেছে ভারতীয় ওই গণমাধ্যম। তারা দাবি করেছে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরিকল্পনা মাস্টারপ্ল্যানের অংশ। ষড়যন্ত্রকারীদের তালিকায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও জড়িত ছিলেন। ২০২৪ এর ১৩ আগস্ট গ্রেপ্তার হন আনিসুল হক, তবে ওই গণমাধ্যমটি বলছে এই গ্রেপ্তার কেবল মাত্র লোক দেখানো হলেও হতে পারে। হয়তো আনিসুল হক জেলে থেকে সরকারকে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করে যাচ্ছে।
অভিযোগ আনা হয় জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধেও। গণমাধ্যমটি বলছে সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককের নামও রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার ওই তালিকায়। জুলাই আন্দোলন চলাকালে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ন্ত্রণের মূল হোতা পলক নাকি দীর্ঘদিন ধরে নানানভাবে জামায়াত নেতাদের সহায়তা করে আসছিলেন।
সরকার পতনের পরে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জুনাইদ আহমেদ পলককে। এই গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে গণমাধ্যমটির দাবি পলকের এই গ্রেপ্তার এক প্রকার আত্মসমর্পন ছিলো। হয়তো পলক কারাগারে বসে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ তথ্য হয়তো সরকারকে সরবরাহ করছে।
উঠে আসে সাদ্দাম হোসেনের নামও। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে নিখোঁজ। ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশেই নেই তিনি। ভরতীয় ওই গণমাধ্যম বলছে আগষ্টে আওয়ামী লীগের এত নেতা কর্মী দেশ ত্যাগ করতে গিয়ে ধরা পড়লেন, সেখানে সাদ্দাম হোসেন কিভাবে নিরাপদে সরে যেতে পারলো?
বারবার ফোনালাপের কথা উল্লেখ করা হয় ভারতীয় গণমাধ্যমের ওই টকশোতে। যদিও প্রমাণ হিসাবে কোন রেকডিং তারা উপস্থাপন করেনি। তারা আরও বলে, বাংলাদেশ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারের পতনের মাত্র সাত দিন আগে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানতে পারে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই নাকি বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে এই ষড়যন্ত্রের বিষয়ে তথ্য দিয়েছিল।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় ভূমিকা এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর যোগসূত্রের কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, সরকারের পতনে পাকিস্তান শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ঢাকায় আইএসআই-এর কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ার কথাও এই টকশোতে বলা হয়েছে।
এদিকে ভারতীয় ঐ গণমাধ্যমটির এই প্রতিবেদনে উত্থাপিত অভিযোগ এবং তথ্যের সত্যতা এখনো যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এটি কি নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা, নাকি রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন, প্রতিবেদনটি দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি হতে পারে।
টিএ/