সম্পত্তিতে নারী – পুরুষের থাকবে সমান অংশিদারিত্ব। নারীদের জন্য সম্পত্তিতে সমান ভাগ নিশ্চিত করতে তাই বড় আইনি পরিবর্তনের সুপারিশ আনছে নারী-বিষয়ক সংস্কার কমিশন। উত্তরাধিকারসহ বিভিন্ন বৈষম্যমূলক আইন সংশোধনের প্রস্তাব রয়েছে চূড়ান্ত পর্যায়ে। নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরন ও নানা সংকটের পিছনে, সম্পদে নারীর সমান অধিকার না থাকাই দায়ী বলে মনে করছে সংস্কার কমিশন।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এই বৈষম্য দূর করা ছাড়া নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। তাই সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তনের সুপারিশ চূড়ান্ত করছে সংশ্লিষ্ট কমিশন। আগামী মার্চে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে।
কিন্তু আইনই যখন বাধা, তখন পরিবর্তন ছাড়া সমাধানই বা কীভাবে সম্ভব? সংবিধানের ২৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের নেই কোনো সুযোগ। তবে ১৯৬১ সালের পারিবারিক আইন, বাংলাদেশে এখনো বহাল। যেখানে নারীদের সম্পত্তিতে নেই পুরুষের সমান অধিকার। যা সংবিধানের ২৬(১) ও (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন অনেকে।
এদিকে, নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া এবং বিয়ে ও বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সমানাধিকারের বিষয়ে সিডও সনদের ২ ধারা এবং ১৬ (১) উপধারা সংরক্ষন করেনি বাংলাদেশ। প্রাধান্য পাচ্ছে পারিবারিক আইন। যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০, ১৯, ২৬, ২৭ ও ২৮-এর মূল নির্যাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। তবে, আইনে বলা আছে, মা-বাবা চাইলে ১৬ বছরেও বিয়ে হতে পারে। এ আইনের সঙ্গে একমত নন চিকিৎসক ও অধিকারকর্মীরা। এটিকে বিদ্যমান শিশু অধিকার সংক্রান্ত নীতির পরিপন্থী উল্লেখ করে এই ধারা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও, নিরাপদ মাতৃত্ব ও নারীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতেও বেশ কিছু বিশেষ প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। সরকারকে দ্রুত গর্ভনিরোধক, নিরাপদ প্রসব পরিষেবা ও এমআরএম কিট সরবরাহ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে তারা। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের নারীদের জন্য এসব সুবিধা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন সংস্কার করে সব ধর্মের নারী-পুরুষের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন চালুর প্রস্তাব করেছে কমিশন। উত্তরাধিকার, বিয়ে ও অভিভাবকত্ব নিয়ে প্রচলিত আইনের মধ্যে যে অসামঞ্জস্য রয়েছে, তা দূর করার সুপারিশও করা হবে। একইসঙ্গে, শ্রমজীবী নারীদের অধিকার ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নে নীতিগত পরিবর্তনের সুপারিশ আসছে।
টিএ/