বিদেশে অর্থ পাচারের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। শিবলী রুবাইয়াত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন – বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক তিনি।
ডিবি জানায় শিবলী রুবাইয়াতের বিরুদ্ধে দেশের আর্থিক খাত ধ্বংস করাসহ প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ের ঘটনায় কয়েকটি মামলাতেও শিবলীকে আসামি করা হয়েছে।
শিবলী রুবাইয়াতের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ আছে। শেয়ারের দাম বাড়াতে তিনি কারসাজিকারকদের নানাভাবে সহায়তা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর প্রশ্রয়ে শেয়ারবাজারে একটি চক্র গড়ে ওঠে। এই চক্র শেয়ারবাজার থেকে অর্থ লোপাটে নানাভাবে তাঁর কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা পেত বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এর আগেও অর্থঋণ আদালতে মামলায় ২০০৭ সাল থেকেই টানা প্রায় ১৬ বছর গ্রেপ্তারি জারি ছিলো শিবলী রুবাইয়াতের বিরুদ্ধে। ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাইন গার্মেন্টের খেলাপি ঋণের দায়ে পরিচালক ও এমডি হিসেবে ঋণখেলাপি ছিলেন।
সরকারের নীতি অনুযায়ী, ঋণখেলাপি ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে নিয়োগের সুযোগ না থাকার পরও ২০২০ সালের মে মাসে তাঁকে চার বছর মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়। চেয়ারম্যান নিযুক্ত হওয়া প্রথম দুই বছর চার মাস পর্যন্ত তিনি ঋণখেলাপি ছিলেন এবং তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল ছিল।
২০২৪ সালের মার্চে প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে দ্বিতীয় দফায় তাঁকে আরও চার বছর মেয়াদে নিয়োগ দেয় শেখ হাসিনা সরকার। অর্থাৎ ২০২৪এর ১৬ মে আবারও বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন শিবলী রুবাইয়াত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পাঁচ দিন পর তিনি পদত্যাগ করেন।
এছাড়াও বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে ‘ফ্লোর প্রাইস’ তোলা, তালিকাভুক্ত বন্ধ কারখানা চালুর উদ্যোগ, লোকসানি কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার মতো বিভিন্ন উদ্যোগ বিনিয়োগকারীদের প্রশংসা পেলেও বিপুল খরচ করে বিদেশে রোড শো, বাজার কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতা, বড় অঙ্কের কারসাজির বিপরীতে নামমাত্র জরিমানার ঘটনায় সমালোচিত হন শিবলী।
এর আগে ৩০ জানুয়ারি শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পাসপোর্ট বাতিল করে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। এছাড়াও শিবলী রুবাইয়াত ও তাঁর ছেলে জুহায়ের সারার ইসলামের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছে।
গত ২০ আগস্ট শিবলী ও তাঁর ছেলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট - বিএফআইইউ। এর পর ২২ আগস্ট তাদের বিও হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশও দেওয়া হয়।
গত বছরের ১০ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন শিবলী রুবাইয়াত। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বিভাগে ফিরে যান। তবে শিবলী রুবাইয়াতকে শিক্ষার্থীরা বর্জন করায় তিনি ক্লাস নিতে পারেননি। তিনি আড়াই মাসের ছুটি নিয়েছিলেন, যা গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। ছুটি শেষ হওয়ার পর তিনি আর বিভাগে যোগ দেননি।
টিএ/