আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম সুসংহত ও গতিশীল করার জন্য আরও ২ হাজার ৬৯ কোটি টাকা চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালইয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগকে ২৮ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকার সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও বাড়তি বরাদ্দের অনুরোধ জানিয়ে এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কয়েক বছরে বিভিন্ন বাহিনীর বিশেষায়িত ইউনিট চালু হয়েছে। পাশাপাশি সক্ষমতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে বেতন-ভাতা, যানবাহন, অস্ত্র ও গোলাবারুদ, নিরাপত্তা সামগ্রী, যন্ত্রপাতি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সরঞ্জাম, ভবন নির্মাণ খাতে অর্থের চাহিদা বেড়েছে। তবে অর্থ বিভাগ জননিরাপত্তা বিভাগকে ২৮ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকার মধ্যে আগামী বাজেট প্রস্তুত করার নির্দেশনা দিয়েছে, যা চলতি বাজেটের চেয়ে প্রায় ১ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজেটের দুটি অংশের একটি উন্নয়ন বাজেট, অন্যটি অনুন্নয়ন বা পরিচালন বাজেট। জননিরাপত্তা বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দের প্রায় পুরোটাই থাকে পরিচালন বাজেটে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ২৬ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে ২৫ হাজার ১৬৯ কোটি টাকাই রয়েছে এ খাতে। আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া ২৮ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকার মধ্যে পরিচালন বাজেটে ২৬ হাজার ৮৬৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়। তবে জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ খাতে আরও ২ হাজার ৬৯ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।
অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সমকালকে জানান, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে মজুত গোলাবারুদের অধিকাংশই শেষ হয়ে যায়। গণঅভ্যুত্থানের সময় বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর পর ছয় মাস পার হলেও মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে আসেনি।
তা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি জরুরি। এসব যৌক্তিকতা বিবেচনায় নিয়ে দাবি করা বাড়তি টাকার পুরোটা সম্ভব না হলেও কিছু অর্থ দেওয়ার বিষয়ে সক্রিয় বিবেচনা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগ) মো. আতাউর রহমান খান সমকালকে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মার্চের প্রথম সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। তখনই বরাদ্দ চূড়ান্ত হবে। তবে জননিরাপত্তা বিভাগ আশা করছে, সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বাড়তি বরাদ্দে সম্মতি দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা সমকালকে বলেন, মানুষের মৌলিক তিনটি চাহিদার মধ্যে একটি নিরাপত্তা। তাই জনগণের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়তি বরাদ্দ প্রয়োজন। বিশেষ করে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরে ও আগে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। আবার বাড়তি বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব আদায় কেমন হচ্ছে, সেটিও দেখতে হবে। সব মিলিয়ে যতটুকু বাড়ানো সম্ভব সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।