ছেলেকে নিয়ে প্রচারে মেতেছেন মাস্ক। এ কারণেই বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে ছেলেকে নিয়ে যান তিনি। অনেকে ধারণা করছেন মাস্কের সন্তানদের নিয়মিত উপস্থিতি এবং ভাইরাল মুহূর্ত তৈরি করা ট্রাম্পের জন্যও উপকারী। মাস্কের সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিয়ে চলছে বিশ্বজুড়ে আলোচনা। বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে শিশু সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হচ্ছেন মাস্ক। এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ অনুসন্ধান করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তাঁকে প্রশাসনের ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’র দায়িত্ব দেন। এর পর থেকেই রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও অনুষ্ঠানে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে যেতে শুরু করেন মাস্ক।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে দেখা যায়, মাস্কের চার বছরের ছেলে লিল এক্স রেজলুট ডেস্কের কোণ ধরে ঝুলছে। তখন তার পরনে ছিল কোট ও কলারযুক্ত শার্ট। এর ঠিক পরদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের সময়ও মাস্কের সন্তানরা উপস্থিত ছিল। তারা মোদির সঙ্গে উপহার বিনিময়ও করেছে। এমনকি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গেও মাস্কের বৈঠকে তার সন্তানদের উপস্থিত দেখা গেছে।
এমন ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে বলে মনে করেন আমেরিকান ইউনিভার্সিটির পাবলিক কমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক কার্ট ব্র্যাডক। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এটি মাস্কের পরিকল্পিত পদক্ষেপ। এতে তিনি সাধারণ জনগণের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবেন এবং তার ভাবমূর্তি ইতিবাচকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।’
তবে মাস্কের সন্তানদের উপস্থিতি অনেক সময় অস্বস্তিকর পরিস্থিতিরও সৃষ্টি করছে। গত বৃহস্পতিবারের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে লিল এক্স কখনো তার বাবার মতো আচরণ করছিল, কখনো মেঝেতে বসে পড়ছিল, আবার কখনো ইশারায় উপস্থিত ব্যক্তিদের চুপ করতে বলছিল।
এই ঘটনাগুলো প্রসঙ্গে অধ্যাপক ব্র্যাডক বলেন, ‘মাস্ক ইচ্ছাকৃতভাবেই এই বিভ্রান্তি তৈরি করছেন, যা ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের জন্য উপকারী হতে পারে।’ কৌশলগত যোগাযোগ পরামর্শক জন হেবারও একই মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘মাস্ক প্রায়ই তার সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ভাইরাল মুহূর্ত তৈরি করেন, যা ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করে। বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি ট্রাম্পের রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।’
তবে মাস্কের সাবেক প্রেমিকা ও লিল এক্সের মা গ্রাইমস এতে মোটেও খুশি নন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লেখেন, ‘লিল এক্সের এভাবে যখন-তখন জনসমক্ষে আসা উচিত নয়। আমি আগে কখনো এমনটা দেখিনি, তবে সৌভাগ্যবশত সে ভদ্র ছিল।’
প্রসঙ্গত, মাস্ক তার সন্তানদের সবসময় নিজের আশপাশে রাখতে ভালোবাসেন। তার আত্মজীবনী লেখক ওয়াল্টার আইজ্যাকসন বলেন, ‘মাস্ক তার সন্তানদের জন্য অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। তিনি শুধু সন্তানদের প্রতিই নয়, তার প্রেমিকা ও স্ত্রীদের প্রতিও একধরনের উন্মাদনার মধ্যে থাকেন। এটা তার সব কাজেই প্রতিফলিত হয়।’
বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবেরদের মধ্যে অন্যতম ইলন মাস্কের ১২টি সন্তান রয়েছে, যাদের জন্ম হয়েছে তিনজন ভিন্ন ভিন্ন নারীর গর্ভে। তবে সবচেয়ে পরিচিত সন্তান লিল এক্স, যার নামের এক্স অক্ষরটির প্রতি মাস্কের বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। টুইটার কেনার পর সেটির নাম পরিবর্তন করে ‘এক্স’ রাখা তার এই ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ।
নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও ইলন মাস্ক তার সিদ্ধান্তে অটল। সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠক ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া তার জন্য কেবল পারিবারিক ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং অনেকের মতে এটি একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশলও।