'রিয়েল স্টোরিজ বাই রিয়েল পিপল’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগের আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হয়েছে কমিউনিটি ডিজিটাল স্টোরিটেলিং ফেস্টিভ্যাল (CDSTF)। এবারের উৎসবের মূল বিষয় ছিল "উপকূলীয় জীবন", যেখানে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা, সংগ্রাম, সংস্কৃতি ও টিকে থাকার লড়াই তুলে ধরা হয়েছে।
১৭ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি (সোম- মঙ্গলবার) সাভারের আশুলিয়ায় ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটিতে অবস্থিত ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স হলে দু’দিনব্যাপী এই ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মানবিক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. লিজা সারমিন ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন করে বলেন, কমিউনিটি ডিজিটাল স্টোরিটেলিং ফেস্টিভ্যাল আমাদের সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগের একটি সিগনেচার প্রোগ্রাম। এখানে মূলত পিছিয়ে পড়া, দুর্ভোগে থাকা মানুষদের গল্পগুলো উঠে আসে। সাংবাদিকতা বিভাগ সবসময়ই সৃজনশীল প্রোগ্রামের আয়োজন করে। আর প্রোগ্রামগুলো মূলত আমাদের শিক্ষার্থীরাই আয়োজন করে। তাদের উদ্যোগ এবং কার্যক্রমে আমি সবসময়ই বিমোহিত হই।
ফেস্টিভ্যালের প্রথমদিনে উদ্বোধনী অধিবেশনে আলোচনাসভা, ফেস্টিভ্যালের ৪টি ক্যাটাগরির মধ্যে স্বাধীন এবং সাংবাদিকতা ক্যাটাগরি নির্বাচিত চলচিত্রগুলো প্রদর্শনী করা হয়। দুপুরের পর সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগের প্রধান আফতাব হোসেন এর সঞ্চালনায় "নতুন বাংলাদেশের গল্প বলা: চলচ্চিত্র নির্মাণের সমগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি" বিষয়ের উপর একটি আলোচনা পর্বের আয়োজন করা হয়। এতে আলোচক হিসেবে অংশ নেন ফেস্টিভ্যালের বিচারক চ্যানেল–২৪-এর সাংবাদিক এবং জনপ্রিয় কনটেন্ট নির্মাতা আশ্বাস এম এ চৌধুরী, স্টুডিও ইয়েলো সামথিং লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা এবং চলচ্চিত্র পরিচালক রাকা নওশিন নওয়ার। আলোচনাটিতে উঠে আসে সাংবাদিকতা এবং সিনেমা নির্মাণের নানা দিক। বিশেষ করে রাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক সচেতনতা, সুন্দর এবং অপরাধমূলক সমাজ বিনির্মাণে চলচ্চিত্রে যেন উঠে আসে সেই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয় দিন (মঙ্গলবার) সকালে সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং ফেস্টিভ্যালের আহ্বায়ক ড. আব্দুল কাবিল খান জামিল এর সঞ্চালনায় ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর সমন্বয়ে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান মো: আব্দুল কাইয়ূম, ইউএনডিপি'র পরিবেশগত স্থায়িত্ব ও জ্বালানি বিভাগের আরিফ ফয়সাল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহফুজা পারভীন এবং অনলাইনে যুক্ত ছিলেন আইসিডির প্রতিষ্ঠাতা আতিকুজ্জামান। এছাড়া খুলনার উপকূলীয় অঞ্চল কয়রা থেকে মুন্ডা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত ছিলেন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সুব্রত কুমার মুন্ডা। তিনি কয়রা অঞ্চলের সাড়ে ৩ হাজার পরিবারের দুর্ভোগগুলো তুলে ধরেন।
পুরো সেমিনারে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের প্রান্তিক এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের সমস্যা, উত্তোরণ আর সম্ভাবনার বিষয়গুলো উঠে আসে। এছাড়া আলোচনা শেষে ইউএনডিপি'র পরিবেশগত স্থায়িত্ব ও জ্বালানি বিভাগের আরিফ ফয়সাল উপস্থিত অতিথি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাইকে পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতামূলক শপথ পাঠ করান।
সেমিনার শেষে দেশ-বিদেশ থেকে জমা পড়া ফিল্মগুলো প্রদর্শনী করা হয়। তারপর ফেস্টিভ্যালের প্রধান অতিথি সাংবাদিকতা, মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগের উপদেষ্টা এবং দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক ড. গোলাম রহমানসহ উপস্থিত অতিথিবৃন্দের উপস্থিতিতে ফেস্টিভ্যালে এক মিনিট ক্যাটাগরির চলচ্চিত্রে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। একই সময়ে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন, ফেস্টিভ্যালের ফিল্ম নির্বাচনে বিচারক পরিষদের সদস্য অস্ট্রেলিয়ার সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. ম্যাক্স শ্লেসার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সিনেমাতে মনোযোগী হতে হবে। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, দুর্ভোগের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, আমি আমার যুবক বয়স থেকেই ফিল্ম দেখা, ফিল্ম বুঝা এবং জানার চেষ্টা করতাম। বর্তমানে আমাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে এমন আগ্রহ দেখে আমি আনন্দিত। আমি আজকের এই সৃজনশীল আয়োজনের জন্য সিডিএসটিএফ কর্তৃপক্ষকে স্বাগত জানাই। কারণ তারা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা তুলে ধরার জন্য একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম তৈরী করেছেন।
ফেস্টিভ্যালের ২য় দিন দুপুরের পর ফেস্টিভ্যালের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি রিলিজ হতে যাওয়া বহুল প্রতিক্ষিত "ঘুমপরী" সিনেমার অভিনেত্রী তানজিন তিশা, ঘুমপরীর পরিচালক জাহিদ প্রীতম, চৌরকির সিইও রেদোয়ান রনি, অভিনেতা এবং গায়ক প্রীতম হাসানসহ ঘুমপরি'র অন্যান্য সদস্যরা।
সাংবাদিকতা, মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগের প্রধান এবং ফেস্টিভ্যালের প্রধান উপদেষ্টা আফতাব হোসেন এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ২দিনব্যাপী ফেস্টিভ্যালে উপস্থিত ছিলেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক ড. মো: ফখরায় হোসাইন, সাংবাদিকতা, মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক ড. গ্রেগরি জন সাইমন, সহযোগী অধ্যাপক এবং ফেস্টিভ্যালের আহ্বায়ক ড. আব্দুল কাবিল খান জামিলসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সবশেষে ফেস্টিভ্যালের বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ এবং ফেস্টিভ্যালের আহ্বায়ক এবং সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল কাবিল খান জামিলের সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে ফেস্টিভ্যালের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। তবে ফেস্টিভ্যালের আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত হলেও আগামীকাল (বুধবার) মিরপুর সিনেপ্লেক্সে ফেস্টিভ্যালের নির্বাচিত সকল ফিল্ম প্রদর্শনী করা হবে।
আয়োজকরা জানান, ২দিনব্যাপী এই স্টোরিটেলিং ফেস্টিভ্যাল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা, মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগ এবং পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ আর উল্লাসে মেতে উঠেছে। সুন্দর এবং সু-শৃঙ্খলভাবে এবারের ফেস্টিভ্যাল সফল হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানায়। এটি ছিল কমিউনিটি ডিজিটাল স্টোরিটেলিং ফেস্টিভ্যালের ২য় আসর। যা আয়োজন করেছে সাংবাদিকতা, মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর গল্পগুলো তুলে ধরার চেষ্টা। এবারের বিষয় ছিল 'উপকূলীয় জীবন'। তারা জানান, সিজন ১ থেকে সিজন ২ অনেক বেশি ব্যতিক্রম এবং আকর্ষণীয় ছিল। এবার ১৮টি থেকে ৪টি ক্যাটাগরিতে ১৫৩টি ফিল্ম জমা পড়েছে। এবং ভবিষ্যতে আরও আকর্ষণীয়ভাবে বিশ্বব্যাপী এই ফেস্টিভ্যালকে তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই আয়োজনকে সফল করতে স্টার সিনেপ্লেক্স, কাজি অ্যান্ড কাজি টি, ওয়ান্ডারওয়ে ট্রাভেলস, এক্সপার্ট কম্পিট ডিভাইস কেয়ার, জেসিআই বরিশাল, লিলি বেলি, প্রথম আলো ডটকম, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ফিল্ম সোসাইটি ও অস্ট্রেলিয়ার সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি পার্টনার হিসেবে যুক্ত ছিল।