ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শুকিয়ে যাওয়া তিস্তার হাঁটুজলে নেমে ন্যায্য হিস্যা দাবি করছেন উত্তরের জনপদের হাজারো মানুষ। ভারতের উজানে বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশের মানুষকে বঞ্চিত করার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন তারা। উত্তরবঙ্গের ১১টি স্থানে একযোগে এই কর্মসূচি চলছে দুদিনব্যাপী। এদিন বিভিন্ন জেলায় পদযাত্রা করেছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।
লালমনিরহাট ও রংপুরের তিস্তা রেলসেতু প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ তিস্তা নদীর হাঁটু পানিতে নামে। ভারতের পানি আগ্রাসন বন্ধ করা, মরুকররণ থেকে নদী রক্ষায় তিস্তা পানির ন্যায্য হিস্যা প্রদান এবং বন্যার ভাঙন থেকে তিস্তাপাড়ের মানুষকে রক্ষায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়। এ সময় ‘তিস্তা নদী আমার মা, মরতে আমরা দিব না’, ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা।
৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা অববাহিকার ১১৫ কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশে। তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্ত্বেও ভারত এক তরফা বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং প্রায় ছয় লাখ হেক্টর জমিতে সেচের জন্য পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর বাংলাদেশের জন্য পানি ছাড়ে। যে পানি আশীর্বাদ না হয়ে বেশির ভাগ সময়ে এ দেশের মানুষের জন্য বয়ে আনছে অভিশাপ। ফলে অসময়ে তিস্তাপাড়ে বন্যা দেখা দিচ্ছে, বছর বছর বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
পানিতে দাঁড়িয়ে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে আন্দোলনে অংশ নেওয়া কাউনিয়ার সারাই ইউনিয়নের কৃষক মফিজুর রহমান বলেন, ‘মুই দশ বিঘা ভুঁই আবাদ করো। এ্যালা শ্যালো মেশিন আর কারেন দিয়্যা আবাদ করা নাগোচে। আর যখন বানের (বন্যা) সময় তখন পানি ছাড়ি দিয়্যা হামাক ডুবি দেয়, আর এ্যালা পানি অভাবোত হামার আবাদ হয় না।’
লালমনিরহাট সদরের মিশন মোড় থেকে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, আগের সরকার হামাক আশায় আশায় ঘুরাইছে, কিন্তু হামার কোন কাজ করি দেয় নাই। এই সরকার এবার কি করে তাকে দেখার আশায় বসি আছি।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিস্তা রেল সেতু লালমনিরহাট পয়েন্ট থেকে গণপদযাত্রা শুরু হয়। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর নেতৃত্বে পদযাত্রাটি তিস্তা সড়ক সেতু হয়ে তিস্তা রেল সেতু পয়েন্ট গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে গতকাল সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে তিস্তা পাড়ে ৪৮ ঘণ্টা লাগাতার অবস্থান, জনতার সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচি। রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার তিস্তা রেলওয়ে সেতু-সংলগ্ন পয়েন্টে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিস্তা বিস্তৃত রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও কুড়িগ্রামের ১১টি পয়েন্টে অনুষ্ঠানরত স্মরণকালের এই বৃহৎ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে এ অঞ্চলের সর্বস্তরের লাখো মানুষ। প্রথম দিনের মতো আজ সমাপনী দিনেও সকাল থেকেই ১১টি পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করছে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি’। সেই সঙ্গে প্রতিবাদ হিসেবে দেশীয় সংগীত, নৃত্য, খেলাধুলাও চলছে।
কর্মসূচির সমাপনী সমাবেশে বিকেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন।