গাজীপুরের শ্রীপুরে শস্যচিত্রে শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলেছেন এক কৃষক। উপজেলার বেকাসাহারা গ্রামের কৃষক এনামুল এক বিঘা জমিতে শস্যচিত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলতে প্রায় এক মাস আগে ধানের চারা রোপণ করেন। সেই চারাগুলোতে এখন আবু সাঈদের সবচেয়ে বড় প্রতিকৃতি দেখা যাচ্ছে।
সবুজ রঙের ধান গাছ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে তার প্রতিকৃতি। হাত ও পা তৈরি করা হয়েছে সবুজ রঙের ধান গাছ লাগিয়ে। সড়ক থেকে বিস্তীর্ণ মাঠে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। সবুজ ধানি জমিতে যেন এক জীবন্ত মানুষ। সড়কে যেতে যেতে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠে এ চিত্র দেখে অনেকে থমকে যান। কেউ কেউ সড়কে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মন দিয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করেন।
শস্যচিত্রটির নির্মাতা এনামুল হক। তিনি উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের বেকাসাহারা গ্রামের বাসিন্দা। কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এনামুল একই গ্রামের আবদুল আউয়ালের ছেলে। স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে তার সংসার। ২০২২ সাল থেকে এনামুল নিয়মিত তার জমিতে শস্যচিত্র তৈরি করছেন। শুরুতে ধানগাছ দিয়ে ‘মা’ শব্দের শস্যচিত্র করেছিলেন। পরের বছর ২০২৩ সালে একই জমিতে গড়েন শস্যচিত্র ‘জাতীয় পতাকা’। তারপর ২০২৪ সালে তিনি হৃদয়ের চিহ্নের আদলে গড়েছিলেন শস্যচিত্র ‘ভালোবাসা’। এবার তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি এঁকেছেন। ২০২২ সাল থেকে এনামুল নিয়মিত তার জমিতে শস্যচিত্র তৈরি করছেন।
নিতান্তই শখ থেকে এমন শস্যচিত্র তৈরি করেন বলে জানালেন এনামুল হক। তিনি বলেন, মানুষ আমার তৈরি শস্যচিত্র দেখতে আসে। এতে যে আনন্দ, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি উৎসাহ পাই।
কীভাবে এমন শস্যচিত্র করেছেন, তা জানতে চাইলে এনামুল বলেন, এবারের শস্যচিত্র তৈরিতে তিনি ব্যবহার করেছেন বেগুনি ও সবুজ জাতের দুই ধরনের ধানের বীজ। প্রথমে জমিতে দড়ি দিয়ে কাঠামো তৈরি করেন। এরপর সময় নিয়ে নিখুঁতভাবে সেখানে রোপণ করেন ধানের চারা।
শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতির কথা জানতে চাইলে কৃষক এনামুল আরও বলেন, আমি প্রথম মোবাইলে ওনার শহীদ হওয়ার ভিডিও দেখি, তিনি দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় আজকে আমার ধানখেতে আমি এ প্রতিকৃতি তৈরি করেছি। তিনি বলেন, ২০২১ সালে তিনি নিজের আধা বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো বেগুনি রঙের ধান চাষ করি। তখন এই রঙিন ধান দিয়ে ব্যতিক্রম কিছু করার ইচ্ছা জাগে। সেই ভাবনা থেকেই প্রতি বছর শস্যচিত্র করছি।
স্থানীয়রা জানায়, শস্যচিত্রে আবু সাঈদের প্রতিকৃতি নিয়ে সাড়া পড়েছে। এই প্রথম আবু সাঈদকে নিয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয়েছে। শহীদ আবু সাঈদকে কখনো ভুলবে না এ দেশের মানুষ।
শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম জানান, এ রকম মানুষের প্রতিকৃতি আগে কখনো দেখি নাই। এটা দেখে আমার ভাই শহীদ আবু সাঈদের কথা মনে পড়ে গেছে। কান্না ধরে রাখতে পারছি না। দর্শনার্থী আ. সালাম জানান, রাস্তা দিয়ে বরমী যাচ্ছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ে ধানখেতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া আবু সাঈদের প্রতিকৃতি। সবুজের মধ্যে নীল রঙের ধানগাছ দিয়ে আঁকা হয়েছে প্রতিকৃতি।
ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান, গত বছর এনামুলের করা শস্যচিত্র দেখতে এসেছিলাম। এর আগের বছরও শস্যচিত্র জাতীয় পতাকা তৈরি করেছিলেন। এ বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া আবু সাঈদের প্রতিকৃতি দেখতে এসেছি। আবু সাঈদের প্রতিকৃতি দেখতে শুধু শ্রীপুর নয়, আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার লোকজন ধানখেতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসছেন।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, কৃষক এনামুলের শস্যচিত্রের কথা শুনেছি। এমন উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়।