ডিসি ব্যবস্থা না নিলে আমাকেই নিতে হবে : রিজওয়ানা

কুড়িগ্রামের চাকিরপশার বিলের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে ব্যবস্থা নিতে কুড়িগ্রামের ডিসিকে নির্দেশনা দিয়েছেন বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি ব্যর্থ হলে উপদেষ্টা নিজেই ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে রংপুরে ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইনপ্রয়োগ’-বিষয়ক একটি কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি কুড়িগ্রামের ডিসিকে এ কথা বলেন।

বিলের নাম উল্লেখ না করে রিজওয়ানা বলেন, পাবলিক প্রসিকিউটর, পুলিশবাহিনী ও প্রশাসনসহ সবাই মিলে সরকারের আইন মেনে কাজ করে নদী ও জলাশয়গুলোকে দূষণমুক্ত করব। একটি বিশেষ বিল নিয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসককে আমি বহুবার বলেছি কিন্তু উনি আমার সঙ্গে কথা বলার পর কার সঙ্গে জানি কথা বলেন। পরে তার চিন্তা পাল্টে যায় (থিংকস গেট চেইঞ্জড)। আমি তাকে পদক্ষেপ নিতে বলব। ওখানে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আমাকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠান না থাকায় রংপুরের নদ নদীগুলোতে দূষণ কম হয়। পরিবেশ ন্যায়বিচার করতে গিয়ে বৈশ্বিকভাবে ও দেশে আমরা নানাভাবে হুমকি-ধমকির মুখে পড়ি। নানা বিপদে পড়ি। যখন ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে, বালুখেকোদের বিরুদ্ধে, পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন তখন আপনাদের জন্য এটি রোমান্টিক অ্যাজেন্ডা থাকে না।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের বাতাস হচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে দূষিত বাতাস। এটি গত ১০ বছর থেকে ট্রেন্ড চলছে। যখন আপনাদের কাছে অবৈধ ইটভাটাগুলো ভেঙ্গে দিতে অনুরোধ করি তখন অনেকের সহায়তা পাই, অনেকের পাই না। তখন আপনারা শ্রমিক স্বার্থ নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু দেশের আইন অনুযায়ী যে প্রতিষ্ঠানটা চলতে পারে না ওটা চলবে না। ওই দায়িত্বের মধ্যে আপনাদের ঢোকার দরকার নেই। আপনাকে আদালত যা বলেছে, দেশের আইন যা বলেছে আপনাকে সেভাবেই কাজ করতে হবে। রাতারাতি আমাদের ইটভাটাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সুযোগ কম। যতক্ষণ পর্যন্ত ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানে না যাব আমি তো আপনার বাচ্চার জন্য বাতাসটা নিরাপদ করতে পারবো না।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক কৃষি সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের যে পরিমাণ কীটনাশক ও সার ব্যবহার করা হয় তা প্রয়োজনের চাইতে হাজারগুন বেশি। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৬-৮ বছর কমে যাচ্ছে। এজন্য আমরা কৃষিকে নিরাপদ করার কথা বলি। আমরা এমন কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার কথা বলি যেগুলোকে আপনি সৃষ্টি করতে পারবেন না। এখন ঢাকা শহরের মানুষের জন্য পানি আনতে সাতটি নদী রেখে মেঘনা থেকে আনা হয়। সেটার খরচ আমরা নাগরিকরা বহন করছি। কারণ আমরা শিল্পায়নকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, যদি আমরা নিরাপদ খাদ্যকে বুঝি তাহলে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান, পরিবেশগত ছাড়পত্র ও ডিসির লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে বিবেকে বাঁধবে না। কিন্তু আমরা কি প্রশাসনিক, বিচার বিভাগ এবং প্রয়োগকারী সংস্থা হিসাবে প্রতিক্রিয়াশীল হব সবসময় নাকি সক্রিয় হওয়ার সুযোগ আছে এটা চিন্তা করে দেখার জন্য আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে। এখন যদি বুড়িগঙ্গাকে পুনরুদ্ধার করতে চাই তাহলে ২ হাজার কোটি টাকা দরকার। কিন্তু তখনই যদি ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে ট্যানারি শিল্পগুলোকে বর্জ্য ব্যবস্থার আওতায় আনা হতো তাহলে এই খরচটা হতো না । প্রশাসনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করলে অনেকগুলো কাজ করে ফেলা সম্ভব।

পুলিশ ও প্রশাসনকে পরিবেশ রক্ষার অনুরোধ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আইনে বলা হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর যদি পুলিশ প্রশাসন বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সহায়তা চায় তাহলে তারা সাহায্য করতে বাধ্য। আমি খালি শুনি ‘গো স্লো’, ‘গ্লো স্লো’ আর কত স্লো যাব বলেন। আমাদের তো দখল হয়ে যাওয়া বনভূমি উদ্ধার করতে হবে। এটাকে বড় অপরাধ বিবেচনা করে আমাদেরকে সাহায্য করতে হবে। পরিবেশের বিরুদ্ধে অপরাধকে হালকা অপরাধ হিসেবে দেখবেন না। এটা আসলে গুরুতর অপরাধ। এটি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ। রংপুরে কৃষি জমি থেকে থেকে মাটি কেটে যেন ইটভাটায় দেওয়া না হয় এটা জেলা প্রশাসককে নিশ্চিত করতে হবে।

সকালে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় মিলনায়তনে শুরু হওয়া এ কর্মশালায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

এছাড়া কর্মশালায় অংশ নেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, ৮ জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা ও দায়রা জজ, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক, পাবলিক প্রসিকিউটর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি)।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, পৃথিবীর বাদশাহ না: লুলা দা সিলভা Jul 19, 2025
img
সিরিয়ার সার্বভৌমত্বে পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করলো ইরান Jul 19, 2025
img
বিএনপি খালেদা জিয়ার দল, তারেক রহমানের দল: রুমিন ফারহানা Jul 19, 2025
img
তদবির নয়, এবার বিচারপতি নিয়োগে কাঠামোগত পরিবর্তন Jul 19, 2025
img
সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে উইমেন্স ইউরোর সেমিফাইনালে স্পেন Jul 19, 2025
img
ড্রোন ও এআই অস্ত্র নির্মাণে যৌথভাবে কাজ করবে যুক্তরাজ্য-জার্মানি Jul 19, 2025
img
স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ২৫ কেজি দুধে স্নান করলেন হৃদয় মিয়া Jul 19, 2025
img
হাই অল্টিটিউড ম্যাচে কতটা প্রস্তুত জামালরা? Jul 19, 2025
img
সমর্থক গ্রেফতারে শীর্ষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড Jul 19, 2025
img
সরকারই উসকানি দিয়ে এনসিপিকে গোপালগঞ্জ পাঠিয়েছে : এলডিপি মহাসচিব Jul 19, 2025
img
বাংলাদেশ সরকারের কাজের প্রশংসা করলেন স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট Jul 19, 2025
img
কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের লোক ছাত্রদের দল গঠনের বুদ্ধি দিয়েছে : অলি আহমদ Jul 19, 2025
img
পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ চায় না বিএনপি Jul 19, 2025
হলফনামায় শেখ হাসিনার মি'থ্যা তথ্য, ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই ইসির Jul 19, 2025
img
মুজিববাদের কবর দিতে গোপালগঞ্জ যাওয়ার দরকার নেই : এ্যানি Jul 19, 2025
বাংলাদেশে স্টারলিংক কার্যক্রমে সরকারকে ‘নজিরবিহীন’ বললো স্পেসএক্স Jul 19, 2025
‘হিরোস উইদাউট কেপস’ ডকুমেন্টারি: জুলাই আন্দোলনের প্রামাণ্য চিত্র Jul 19, 2025
img
জামালপুরে যুব মহিলা লীগ নেত্রী গ্রেফতার Jul 19, 2025
img
বাংলাদেশে স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে চালু, রিসেলার বিএসসিএল Jul 19, 2025
img
দলীয় উন্নয়নেই মনোযোগ, আজও দ্বিতীয় সারির দল পাঠাবেন বাটলার Jul 19, 2025