পাহাড়ি কন্যা ঋতু-রূপনাদের কল্যাণে দুইবার আনন্দে ভেসেছে দেশ। সাফজয়ী এই নারী ফুটবলাররা দুবারই রাঙামাটিতে বিশাল সংবর্ধনা পেয়েছেন। এই দলেরই অন্যতম এক সদস্য ঋতুপর্ণা চাকমা।
২০২২ সালে প্রথমবার সাফ জয়ের পর জেলা প্রশাসন থেকে বাড়ি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন রাঙামাটির এই কৃতি নারী ফুটবলার। সেটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০২৪ সালে টানা দ্বিতীয়বার সাফ জেতার পর। তবে বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে বাধা পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ঋতুপর্ণা।
প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঋতুপর্ণাকে ঘর নির্মাণের জন্য ১২ শতক জমি বরাদ্দ দিয়েছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। শুধু জমি নয়, ঘর তোলার জন্য প্রাথমিকভাবে ৪ লাখ টাকাও দিয়েছে তারা। এতে দারুণ উচ্ছ্বসিত ঋতুপর্ণা। গত ২০ মার্চ রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিকুর রহমানের সঙ্গে গিয়ে জমি দেখেও এসেছেন ঋতুপর্ণা। সেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন। সঙ্গে তার স্বজনরাও ছিলেন। কিন্তু এই উচ্ছ্বাস বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, ঋতুকে ওই জমিতে ঘর নির্মাণ না করতে নানাভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এমনকি ওই জমি পাওয়ার জন্য অন্য একটি পক্ষ তদবির করে যাচ্ছে বলেও শোনা গেছে। ঋতুপর্ণা এতে মর্মাহত হয়ে পড়েছেন। মন খারাপ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন।
শনিবার (২২ মার্চ) ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘এতদিন পর প্রশাসন আমাকে বাড়ি করে দেওয়ার সদয় সম্মতি দিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যে আমি শুনতে পাচ্ছি, কোনো এক মহল থেকে বাঁধা আসতে শুরু করেছে। তাহলে আমার ঘাগড়ায় কি কোনো ঠাঁই নেই। এখন আমার অনুশোচনা হচ্ছে, ২০১৭ সাল থেকে আমি দেশের জন্য খেলতেছি, দেশের প্রতিনিধিত্ব করতেছি, নিজে জেলার মানুষের কাছে মূল্যায়নটা পাইলাম কই?’
এ বিষয়ে সাফজয়ী ফুটবলার ঋতুপর্ণার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে জায়গাটিতে আমাকে বাড়ি করে দেওয়ার কথা হচ্ছে সেই জায়গাটি নাকি একটি সমিতির দখলে আছে। সমিতিতে প্রায় ৭০ জনের মতো সদস্য আছে। তাদের পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়েছে, যদি আমি এই জায়গাটিতে বাড়ি করি তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যাওয়া হবে এবং আমিও বিতর্কিত হবো। পাশপাশি তারা আমাকে বলেছে, যদি আমি জায়গা বাবদ ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিই, তাহলে বাড়ি করতে পারবো। কিন্তু আমি ক্ষতিপূরণ কেন দেব? আমি কি জোরজবরদস্তি করে জায়গা নিচ্ছি কারো থেকে?
তিনি আরও বলেন, এই ব্যাপারে ইউএনও স্যারসহ প্রশাসন থেকে আমাকে চিন্তামুক্ত থাকতে বলা হয়েছে। বিষয়টি তারা দেখভাল করছেন বলেও জানিয়েছেন। তবে কারা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন—এই ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
ঋতুপর্ণাকে যে জায়গাটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেটি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই জানিয়ে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলছেন, যে জায়গাটি ঋতুপর্ণাকে বাড়ি করে দেওয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি খাস জায়গা। নিয়মানুসারে খাস জায়গার মালিক জেলা প্রশাসন তথা সরকার। এই জায়গাটি কাউকে লিজও দেওয়া হয়নি। আমি ইতোমধ্যেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছি। অর্থ ছাড় হওয়া সাপেক্ষে খুব দ্রুতই ঋতুপর্ণার বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
এসএন