ভারতে তীব্র হচ্ছে পানি সংকট

এখনো হয়তো ক্ষুধা-দারিদ্র্য পৃথিবীর বড় একটা সমস্যা। কিন্তু এর থেকেও মারাত্মক সমস্যা হলো তৃষ্ণা নিবারণ। পৃথিবীর মোট চার ভাগের তিন ভাগ পানি হলেও সুপেয় পানির আধার দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে। সেইসঙ্গে পানি নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবী যে মহা সংকটে পড়তে যাচ্ছে সে আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে দিন দিন। কেবলই কি খাবার পানি? না, নিত্য ব্যবহারের জন্য সাধারণ মিঠা পানির সংকটও বাড়ছে।

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। এটি পৃথিবীর ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। হাজারো সমস্যার মধ্যে পানি এখানকার প্রধান সমস্যা। দক্ষিণ দিল্লির ভাসন্ত কুনি বস্তি। শহরের সবচেয়ে বড় এ বস্তিতে প্রান্তিক লোকেদের বাস। সেখানকার পানির চিত্রটি যদি তুলে ধরা হয় তবে তা এক কথায় ভয়ংকর। বস্তির বসতির সামনে খালি জায়গায় সারি সারি প্লাস্টিকের ড্রাম পড়ে আছে। শুষ্ক ময়লাযুক্ত জায়গায় রাখা এ ড্রামগুলোর অপেক্ষা সরকারি পানিবাহী ট্যাঙ্কারের জন্য। ১০ দিন পর এমন অপেক্ষা। কেননা এখানকার বাসিন্দারা গত ১০ দিন আগে সর্বশেষ এভাবে পানি সংগ্রহ করেছিল। অনেক পরিবার আছে যাদের ড্রামগুলো ক’দিন আগেই খালি হয়ে গেছে। তারা এখন খুবই পিপাসার্ত। এমনকী অপরিচ্ছন্নও।

বস্তিবাসীদের পানি সংগ্রহকাজে তদারকি করেন ফাতিমা বিবি (৩০)। তার মতে, এই পানি দিয়েই সব কিছু করতে হয়। খাওয়া, রান্না, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং কাপড়-চোপড় ধোয়ার কাজ। এভাবে বেঁচে থাকা সত্যিই কঠিন।

এখান থেকে শহরের অভিজাত শপিং মলের দূরত্ব ১০ মিনিটের পথ। যেখানে আপনি ১ হাজার রুপিতে এক জোড়া জুতা পাবেন। কিন্তু এখানকার লোকেরা লোহার সঙ্গে শক্ত বস্তুযুক্ত জুতা পরে। ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় লোকগুলোর ভেতর থেকে বাষ্প বের হয় যেন।

কম্পাউন্ডে পানির ট্যাঙ্কার আসা মাত্রই চারপাশে শোরগোল পড়ে যায়। ভিড়ভাট্টা ঠেলে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ছুটে আসে সেটির কাছে। তারা ট্যাঙ্কারের সবুজ পাইপ নিয়ে ড্রাম্পগুলো ভরতে শুরু করে। এখানে প্রত্যেক পরিবারকে ৬০০ লিটার করে পানি দেয়া হয়। যা দিয়ে আসলে পরবর্তী রেশন পর্যন্ত বেঁচে থাকা অসম্ভব।

ভারত সরকার পরিচালিত নীতি আয়োগের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটি পানি সংকট ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। এখানে অন্তত ৬০ কোটি মানুষ ভয়ানক পানি সংকটের মধ্যে দিন গুজরান করছেন। অপর্যাপ্ত পানি কিংবা দূষিত পানির ফলে প্রতি বছর গড়ে ২ লাখ ভারতীয় প্রাণ হারায়।

২০২০ সাল নাগাদ ভারতের প্রধান ২১টি শহরের ভূগর্ভস্থ পানি নাগালের বাইরে চলে যাবে। যেহেতু ভারত ১৩০ কোটি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে উন্নতির দিকে যাচ্ছে সে কারণে এই লোকগুলোই খুব খারাপভাবে পানি সংকট মোকাবিলা করবে।

ভারতের পানি ও স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করে ফোর্স নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। এটির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জয়তি শর্মা বলেন, চাহিদার তুলনায় অনেক কম পানি পেয়ে থাকে এমন ভারতীয়র সংখ্যা অনেক। এটা আসলেই দূর্ভাগ্যজনক যে, তারা বাস্তবিকভাবে কতটা দুর্ভোগের শিকার তা লোকগুলো দেখে না। তার মতে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে ভারতের মতো শুষ্ক দেশগুলো ‍শুকিয়ে যায়। তার আশঙ্কা অদূর ভবিষ্যতে পানিই হয়ে দাঁড়াবে বৈশ্বিক সমস্যা।

সহজভাবে বলতে গেলে ভারতের পানি সংকটের প্রধান কারণ জলাধারগুলো শুকিয়ে যাওয়া এবং ভূগর্ভস্থ পানির নির্ভরতা। দীর্ঘদিন ধরে এর বিকল্প কি হতে পারে তা ভাবা হয়নি।

জলবায়ু বিষয়ক পত্রিকা থার্ড পোল’র দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সম্পাদক জয়দেব গুপ্তার মতে, ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারকারী দেশ। যা অত্যন্ত ভয়ানক। এটি দেশকে সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

যেহেতু ভারতে নগরায়নের হারটা অনেক বেশি, লাখ লাখ লোক প্রতিবছর নগরমুখী হচ্ছে- সে কারণে পানির চাহিদাও বাড়ছে। এ কারণে শহরকেও পানির বিকল্প সংস্থান এবং ভবিষ্যতের বিষয়টি ভাবতে হবে। যেটা শত কিলোমিটার দূর থেকে পাম্পের সাহায্যেও হতে পারে।

সমীক্ষা বলছে- দিল্লি, হায়দ্রাবাদ, বেঙ্গালুরুসহ অনেক শহর অচিরেই ভূগর্ভস্থ পানি শূন্য হয়ে যাবে। এতে প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী হবে অন্তত ১০ কোটি মানুষ।

ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ। দেশটির ৮০ ভাগ পানিই কৃষিতে ব্যবহার হয়। যার মধ্যে ধান এবং আখ ক্ষেতের সেচ কাজে ব্যবহৃত হয় সিংহ ভাগ পানি।

 

টাইমস/এমএস

 

 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
এনসিপির আগমন ঠেকাতে আ. লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সড়ক অবরোধ Jul 16, 2025
img
‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ মঞ্চে হামলা Jul 16, 2025
img
শিগগিরই পর্দায় আসছে ‘বজরঙ্গী ভাইজান ২’ Jul 16, 2025
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ লাখ নেতাকর্মীর সমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী Jul 16, 2025
ভোগান্তির অবসান, মালয়েশিয়ায় এখন থেকে মাল্টিপল ভিসা পাবেন বাংলাদেশিরা Jul 16, 2025
img
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা, ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী Jul 16, 2025
img
‘রামায়ণ’ দেখে কৌশল পাল্টাল ‘গড অব ওয়ার’ নির্মাতারা Jul 16, 2025
img
গোপালগঞ্জকে সঙ্গে নিয়েই নতুন বাংলাদেশ গড়বো: তাসনিম জারা Jul 16, 2025
img
গোপালগঞ্জে আ.লীগ-নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে সেনাবাহিনী Jul 16, 2025
img
নিজ বাড়ি থেকে তারকা দম্পতির মরদেহ উদ্ধার Jul 16, 2025
img
বিশ্ব বাজারে বেড়েছে ডলারের মান ও ট্রেজারি বন্ডের সুদহার Jul 16, 2025
img
কিছু কিছু ম্যাচ সারা জীবন মনে থাকে: মোহাম্মদ সিরাজ Jul 16, 2025
img
ঘুষ দিতে গিয়ে মালয়েশিয়ায় এয়ারপোর্টে দুই বাংলাদেশি আটক Jul 16, 2025
img
‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Jul 16, 2025
img
অভিনেতা রবি তেজার বাবা আর নেই Jul 16, 2025
img
ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে রেখে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় : বিআরটিএ চেয়ারম্যান Jul 16, 2025
img
বিসিবি এবার টাইগারদের জন্য নিয়োগ দিল ‘পাওয়ার হিটিং’-এর জনক Jul 16, 2025
img
লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্রিকেটের সময়সূচি ঘোষণা Jul 16, 2025
img
ওমান সাগরে ২০ লাখ লিটার তেলসহ ট্যাংকার জব্দ করলো ইরান Jul 16, 2025
img
ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি ও দাম কমাতে কাজ করছে সরকার: ফয়েজ আহমদ Jul 16, 2025