ভারতে অভিনেত্রী হত্যা, ম্যানহোলে ফেলে সিল করে দেন পুরোহিত
মোজো ডেস্ক 04:48PM, Mar 28, 2025
২০২৩ সালের জুন মাসে ভারতের তেলেঙ্গানার জনপ্রিয় টেলিভিশন অভিনেত্রীকে হত্যা করে মরদেহ ম্যানহোলে ফেলে সিমেন্ট দিয়ে সিল করে দিয়েছিলেন এক পুরোহিত। বুধবার (২৬ মার্চ) অভিযুক্ত পুরোহিতকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে তেলেঙ্গানার স্থানীয় এক আদালত।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইয়্যাগারি ভেঙ্কট সাইকৃষ্ণ নামের সেই অভিযুক্ত পুরোহিত যেই অভিনেত্রীকে হত্যা করেছিলেন, তার নাম কুরুগান্তি অপ্সরা। শুধু তাই নয় হত্যার পর তার দেহ একটি ম্যানহোলে ফেলেও দেয় সে। তারপর তা লাল মাটি এবং সিমেন্ট দিয়ে সিলও করে দেয়।
এদিকে তেলেঙ্গানার রাঙ্গারেড্ডি জেলা আদালত দোষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে ১০ লক্ষ রুপি জরিমানাও করে। যার মধ্যে মৃতের পরিবারকে ৯ লক্ষ ৭৫ হাজার রুপি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর বাকি ২৫ হাজার রুপি আদালতকে দিতে হবে।
তদন্তে জানা গেছে, নিহত অভিনেত্রী অপ্সরার মা প্রায়শই মন্দিরে পুজা দিতে যেতেন। সেই মন্দিরের পুরোহিত ছিলেন সাইকৃষ্ণ। মায়ের সঙ্গে অভিনেত্রীও মন্দিরে যেতেন। তখনই অপ্সরারর সঙ্গে পুরোহিতের পরিচয় হয় এবং ২০২৩ সালের শুরুর দিকে তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু অভিযুক্ত পুরোহিত আগে থেকেই বিবাহিত ছিলেন, তবুও তিনি অভিনেত্রীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এরপর যখন অপ্সরা তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে শুরু করেন, তখনই অপ্সরাকে খুনের ষড়যন্ত্র করেন সাইকৃষ্ণ।
পুলিশ জানায়, পুরোহিত ভেঙ্কট সাইকৃষ্ণ ২০২৩ সালের ৩ জুন কোয়েম্বাটুর যাওয়ার অজুহাতে অপ্সরাকে লোভ দেখিয়ে বাইরে নিয়ে যান এবং তারপর তাকে খুন করেন। সাইকৃষ্ণ অভিনেত্রীকে বলেছিলেন যে তিনি কোয়েম্বাটুরের বিমানের টিকিট বুক করেছেন এবং তাকে তার সঙ্গে নিয়ে যেতে চান। সাইকৃষ্ণ অপ্সরার মাকে বলেছিলেন যে, অভিনেত্রীর কোয়েম্বাটুরে কিছু ব্যক্তিগত কাজ আছে এবং সে তাকে শামশাবাদ বিমানবন্দরে নামিয়ে দেবে।
সেই মতো ওই পুরোহিত অভিনেত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে যান। ওই রাতে, দু’জনে রাত সোয়া ৮ টার দিকে সরুরনগর থেকে বের হন এবং রাত ১০ টায় শামশাবাদ মণ্ডলের রাল্লাগুড়ার একটি হোটেলে রাতের খাবার খান। পরে ওই পুরোহিত সুলতানপল্লীর একটি গোশালায় যান। ৪ জুন ভোর সাড়ে ৩ টার দিকে তারা নারকুডার একটি নির্জন স্থানে পৌঁছান। সেখানে একটি নির্মাণস্থলে অভিনেত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করেন ওই পুরোহিত। এরপর অভিনেত্রীর দেহ বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এবং দুই দিন ধরে পার্কিংয়ে রাখা গাড়িতে দেহটি লুকিয়ে রাখেন। গন্ধ লুকানোর জন্য প্রতিদিন রুম ফ্রেশনার স্প্রে ব্যবহার করতেন অভিযুক্ত।
এরপর সাইকৃষ্ণ অভিনেত্রীর মৃতদেহ বাড়ির কাছে একটি সরকারি অফিস কমপ্লেক্সের সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেন। এমনকি অব্যবহৃত ম্যানহোলটি বালি-সিমেন্ট ও লাল মাটি দিয়ে ভরাট করে দেন। এরপর সে অভিনেত্রীর মায়ের সঙ্গে মিলে থানায় নিখোঁজ অভিযোগ দায়ের করেন। এবং পুলিশের কাছে দাবি করেন, তিনি অভিনেত্রীর মাকে বোনের মতো দেখেন। তাই সম্পর্কে অভিনেত্রী তার ভাগ্নি হন। এরপর ভাগ্নি অপ্সরার নিখোঁজ বিষয়ে থানায় ডায়েরি করেন। কিন্তু সম্পূর্ণ ঠান্ডা মাথায় প্ল্যান করেও রক্ষা পান না অভিযুক্ত। পুলিশ তদন্তের পর পুরো ঘটনা খুঁজে বের করেন এবং পুরোহিতকে গ্রেফতার করেন। অবশেষে ২ বছর মামলা চলার পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল পুরোহিতের।