এক দশকের মধ্যে সাপ্তাহিক কর্মদিবস হতে পারে মাত্র দুই দিন

সপ্তাহের ৫ থেকে ৬ দিন ৯ টা-৫টা অফিস করতে করতে যারা ক্লান্ত, তাদের জন্য আগামী এক দশকের মধ্যেই সুখবর আসবে বলে মনে করেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ এবং সফটওয়্যার কোম্পানি মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক শীর্ষ নির্বাহী বিল গেটস।

তিনি মনে করেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির (এআই) কল্যানে আগামী এক দশকের মধ্যে মানুষের সাপ্তাহিক কর্মদিবস নেমে আসবে ২ দিনে।
সম্প্রতি মার্কিন টেলিভিশন হোস্ট জিমি ফ্যালনের টিভি টক শোতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত গেটস। সেখানে ফ্যালনের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “চাকরির ধরন আসলে কেমন হওয়া উচিত? আমরা কি আমাদের কর্মদিবস ২ থেকে ৩ দিনে নিয়ে আসতে পারি না? আপনি যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করেন, তাহলে অনুভব করতে পারবেন যে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্যে কেবল চাকরি করা নয়। জীবন অনেক বড় একটা ব্যাপার এবং এখানে অনেক কিছু করার আছে।”

“আমি মনে করি এক্ষেত্রে আমাদের জন্য মুক্তির বার্তা নিয়ে আসবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি। আগামী এক দশকের মধ্যে অফিসগুলোর অধিকাংশ কাজ করবে এআই এবং মানুষের সাপ্তাহিক কর্মদিবস নেমে আসবে ২ কিংবা ৩ দিনে।”

বিল গেটস যে এবারই প্রথম সাপ্তাহিক কর্মদিবস কাটছাঁটের পক্ষে বললেন— এমন নয়। এর আগে ২০২৩ সালে যখন চ্যাটজিপিটি সবে বাজারে এলো, সে সময় বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এই তথ্যপ্রযুক্তিবিদ বলেছিলেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কল্যানে একসময় মানুষের কর্মদিবস ৩ দিনে নেমে আসবে এবং মানুষের অবসর সময়ের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বাড়বে।

প্রসঙ্গত, যেসব কর্মজীবী নারী ও পুরুষ নানা ব্যক্তিগত-পারিবারিক-সামাজিক সম্পর্কগত চাপ ও টানাপোড়েনের কারণে মানসিকভাবে ক্লান্ত, একঘেঁয়ে ও অবসাদগ্রস্ত থাকেন, অফিসের কর্মঘণ্টা হ্রাসের সংবাদ তাদের কাছে খুবই আকাঙিক্ষত একটি ব্যাপার। এর ফলে তাদের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

সম্প্রতি একটি পশ্চিমা কোম্পানি জানিয়েছে, তারা অফিসে সাপ্তাহিক ছুটি এক দিন বৃদ্ধি করার পর থেকে কর্মীদের কর্মদক্ষতা বেড়েছে ২৪ শতাংশ।
এখনও বিশ্বজুড়ে কর্মঘণ্টা হ্রাস বা সাপ্তাহিক কর্মদিবস বাড়ানোর নীতি ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়নি, তবে ধীরে ধীরে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জাপানের রাজধানী টোকিওর নগর প্রশাসন সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, এখন থেকে প্রশাসনের সব কর্মকর্তা-কর্মীদের সাপ্তাহিক কর্মদিবস হবে ৪ দিন।

যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক জেপি মর্গানের শীর্ষ নির্বাহী জেমি ডিমনও সম্প্রতি এক টিভি টকশোতে বলেছেন যে তিনি মনে করেন অর্থনীতি ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিভিন্ন খাতে এআইয়ের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির ফলে একসময় মানুষের কর্ম দিবস নেমে আসবে সাড়ে ৩ দিনে।

বিল গেটস অবশ্য এ আই’র ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীলতার বিপক্ষে। তিনি মনে করেন, এ আই যতই দক্ষ হোক, সমাজের কিছু ব্যাপার সবসময়েই এর আওতার বাইরে রাখা উচিত।

“সমাজের কিছু ব্যাপার অবশ্যই আমাদের নিজেদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে; কিন্তু এর বাইরে বিভিন্ন শ্রমসাধ্য কাজ, পরিষেবা, পণ্য স্থানান্তর— এসবের জন্য আমরা সম্পূর্ণরূপে এআইয়ের ওপর নির্ভর করতে পারব শিগগিরই,” জিমি ফ্যালনের টিভি টকশোতে বলেন বিল গেটস।

আরএ/টিএ

Share this news on: