মানুষ গরিব কারণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সমান সুযোগ দেয়নি: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মানুষ দক্ষতা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার অভাবে গরিব হয় না, তারা গরিব কারণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তাদের কখনই সমান সুযোগ দেয়নি। সুতরাং দরিদ্রতা কোনও ব্যক্তির ভেতরে থাকা কিছু নয়। এখানে তাদের কোনও দোষ নেই। এটি এই ব্যবস্থার ত্রুটি যেটা আমরা আমাদের জন্য তৈরি করি। সেটি দরিদ্রতার কারণ। ভুল চিন্তা মানুষের মধ্যে সব ধরনের সমস্যা তৈরি করার কারণ।

শনিবার (২৯ মার্চ) বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি নিজেকে দোষারোপ করি আগামী প্রজন্মের কাছে ভুল চিন্তার প্রসারে ভূমিকা রাখা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশ হওয়ায়। আমার মধ্যে অপরাধবোধ হয়, কারণ আমরা এখন পর্যন্ত ধারণার পরিবর্তন করতে পারিনি। যে কারণে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমার কাজ হলো, যে ব্যবস্থায় আমরা তরুণদের শেখাচ্ছি সেগুলোর ত্রুটি খুঁজে বের করা। যাতে একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি আগামী প্রজন্মের মধ্যে না হয়। এই ব্যবস্থা ধনীদের উদ্দেশ্যে সাজানো হয়েছে, গরিবদের জন্য নয়। এই বাস্তবতা আমাকে একটি বিপরীত কিছু তৈরির জন্য উদ্বুদ্ধ করে।’

লাখো তরুণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্বীকৃতি আমাকে লাখো তরুণের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমার প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দেয়। গত বছর থেকে তারাই মূলত বাংলাদেশের পরিবর্তনের অগ্রদূত। তাদের লক্ষ্য একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরি করা, যেখানে দারিদ্র ও ক্ষুধা থাকবে না। তাদের এই লক্ষ্য বাস্তবে রূপান্তর করতে আমরা বেশ কিছু সংস্কার কাজে হাত দিয়েছি। সুশাসন, স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ যেন নিশ্চিত হয়, অর্থনৈতিক নীতিমালার পরিবর্তন করে অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় এবং সবাই যেন সমান সুযোগ পায়। সংস্কার কাজ আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমাদের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট এবং কর্মপরিকল্পনা সুদূরপ্রসারী। বাংলাদেশকে শক্তিশালী এবং আরও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় আমরা উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে অর্থনৈতিক রূপান্তর করছি।’

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘লেখাপড়া করে চাকরি খুঁজতে যায় আমাদের তরুণরা। আমি বরাবরই বলে আসছি, এটি একটি ভুল পদ্ধতি। মানুষ চাকরি প্রার্থী হওয়ার জন্য জন্ম নেয় না। চাকরি জিনিসটাই একটি ভুল ধারণা। মানুষ হলো সৃজনশীল। তারা সৃজনশীল কাজ করতেই পছন্দ করেন। চাকরি সৃজনশীলতাকে অস্বীকার করে। চাকরি আপনাকে সেই কাজ করতে বাধ্য করে যেটি আপনার সুপারভাইজর চায়। চাকরি এক ধরনের প্রথাগত দাসত্ব। মানুষ কোনোভাবেই দাসত্বের উপযোগী না, তারা স্বাধীন। তাদের এই ধারণার প্রচার করা উচিত, মানুষ উদ্যোক্তা হয়েই জন্ম নেয়, চাকরি প্রার্থী নয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রস্তুত করা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এমনভাবে প্রস্তুত করা উচিত, তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যেন সফল উদ্যোক্তা হয়, চাকরি প্রার্থী নয়। এই ধারণা একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকে এসেছে। আমি যেখানে পড়াতাম সেখানের কাছেই কিছু গ্রামীণ নারীদের মাধ্যমে আমি একটি ক্ষুদ্র উদ্যোগ নেই। আমি ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া শুরু করলাম শুধু এই মনে করে যে, সে যেন এই অর্থ কাজে লাগিয়ে তার জীবন বদলাতে পারে। আমি তখন জানতাম না, এই উদ্যোগ কাজে আসবে কিনা। কিন্তু দেখা গেলো তাদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়ে গেলো এবং তারা বরাবরই এই কাজের মধ্যে সচল হয়ে গেলো। এভাবে লাখো নারীর অবস্থা পাল্টে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘এই উদাহরণ আমাকে আশ্বস্ত করেছে যে, সব মানুষই উদ্যোক্তা। আমাদের বইয়ে শেখানো হয়, বিশেষ কিছু মানুষ উদ্যোক্তা হয়ে জন্ম নেয়। বাকিদের তাদের অধীনে কাজ করতে হয়। আমি বললাম যে এটি একেবারেই ভুল ধারণা। ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে যদি বাংলাদেশের অতি দরিদ্র অশিক্ষিত নারীরা উদ্যোক্তা হতে পারে, যে কেউ হতে পারে। আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দেই না, কাউকে বলিও না যে কীভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়, তারা নিজেরাই সব ব্যবস্থা করে নেয়। সুতরাং এখানে একটি বড় প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, শিক্ষার আসলে মূল উদ্দেশ্য কী? সেজন্য আমি বলে আসছি, শিক্ষা একজনের ছতরের সৃজনশীল সক্ষমতা বের করে এনে পৃথিবীর পরিবর্তন করে।’

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
শেখ হাসিনা উপমহাদেশের ইতিহাসে সেরা খুনি : রেজাউল করিম Nov 18, 2025
img
রাজধানীর আশুলিয়ায় চলন্ত বাসে আগুন Nov 18, 2025
img
অনেক আগেই হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে: এমরান সালেহ প্রিন্স Nov 18, 2025
img
ক্লাউডফ্লেয়ারের বৈশ্বিক বিভ্রাট স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে Nov 18, 2025
img
নওগাঁয় বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে মশাল মিছিল Nov 18, 2025
img
বলিউডে নেপোটিজম বিতর্কে সরব কারিনা Nov 18, 2025
img
সৌদি আরবের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র Nov 18, 2025
img
ভোট দিতে চাইলে প্রবাসীদের ৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক Nov 18, 2025
img
বিগ বসের ঘরে চমক দেখালেন গৌরব খান্নার স্ত্রী Nov 18, 2025
img
রাজধানীর সদরঘাটে সেনাবাহিনীর অভিযানে ককটেল উদ্ধার, আটক ৩ Nov 18, 2025
img
জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনের সুযোগ দিলে গণঅধিকার পরিষদ বর্জন করবে: রাশেদ খান Nov 18, 2025
১০০ টেস্টের মাইলফলক স্পর্শ :মুশফিকের প্রশংসায় ভাসলেন তামিম Nov 18, 2025
সিদ্ধান্ত তার নিজের-মুশফিককে ঘিরে প্রধান কোচের মন্তব্য Nov 18, 2025
২৭ লাখ টাকার অভিযোগে আলোচনায় আমিরুল ইসলাম Nov 18, 2025
ফ্লপ ছবির পর সামাজিক মাধ্যমে হেনস্থা, পায়েলের কাহিনী Nov 18, 2025
img
ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচারে ক্ষুব্ধ হাসনাত, হাইকমিশনারকে তলবের আহ্বান Nov 18, 2025
বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের জন্য লড়ছেন জেসিয়া ইসলাম Nov 18, 2025
রাজধানীতে বাড়ছে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা, ডিএমপির উদ্বেগ Nov 18, 2025
হাসিনার রায়ের খুশিতে ঢাবিতে ভুড়িভোজ, যা জানালেন আব্দুল কাদের Nov 18, 2025
ঢাকা-১৯ এ পরিবর্তনের আহ্বান এনসিপির Nov 18, 2025