'বিচারক,আমলাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাকে অবসরে পাঠানো মানে অপরাধকে জিইয়ে রাখা'

বাংলাদেশে আমলা, পুলিশ ও বিচারকদের অনেকের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে অভিযোগ উঠেছে এমন কর্মকর্তা ও বিচারকদের কেউ কেউ অবসর চেয়ে আবেদন করেছেন।

দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর কাউকে অবসরে পাঠানো হলে তাতে অপরাধ জিইয়ে রাখা হয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকদের অনেকে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রশাসন ও পুলিশে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। সেই অভ্যুত্থানের পর পরই বিচার বিভাগ থেকে সরে যেতে হয়েছে সাবেক প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারকদের। হাইকোর্ট বিভাগের কয়েকজন বিচারপতিও পদত্যাগ করেছেন।

এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তা - কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে একটি চিঠি জারি করেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা চিঠিটি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তরের মহাপরিচালক, নির্বাহী পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান এবং বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে পাঠানো হয়েছে গত রোববার (২৩শে মার্চ) ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, "মন্ত্রণালয়-বিভাগ এবং আওতাধীন দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যাদের বিষয়ে জনমনে দুর্নীতিবাজ হিসেবে ব্যাপক ধারণা রয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।"

প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো, ঐচ্ছিক অবসর নেওয়া এবং ওএসডি করে রাখার মতো বিভাগীয় পদক্ষেপের নজির উল্লেখযোগ্য।

এর থেকে বাদ যায়নি বিচার বিভাগও।

নানা অভিযোগের মুখে আপিল বিভাগ ছাড়াও হাইকোর্টের বেশ কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ বলছে।

এছাড়া সর্বশেষ আইন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার সাবেক যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা, ঢাকার সাবেক মুখ্য মহানগর হাকিম এবং অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিমকে আর্থিক দুর্নীতি, অসদাচরণ এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে ওই নোটিশ পাওয়ার পরপরই চাকরি থেকে ঐচ্ছিক অবসর গ্রহণের আবেদন করেছেন বিকাশ কুমার সাহা।

একই ঘটনা ঘটেছিলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মতিউর রহমানের ক্ষেত্রেও।

ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর স্বেচ্ছা অবসরের আবেদন করলে তা গ্রহণ করে এনবিআর।

আইন অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তারা অবসরের আবেদন করলেও অভিযোগ ওঠার পরে এ ধরনের আবেদন নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

সরকারি কর্মকর্তা - কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সেগুলোর বিষয়ে তদন্ত না করে অবসরে পাঠানো, বদলী করা বা ওএসডি করা হলে অপরাধকেই জিইয়ে রাখা হয় বলে প্রশ্ন উঠেছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন কী না এবং তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ আবু তাহের বিবিসি বাংলাকে বলেন, " তাদের বিষয়ে বিভাগীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে।"

তবে বিস্তারিত কোন কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান এই সরকারি আমলা।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অবস্থান জানতে চেয়ে দুই জনকে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে ফোন করা হলে রিসিভ করেননি তারা।

নাম ও পরিচয় উল্লেখ করে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তার কোনো জবাব দেননি তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগের দুর্নীতি, অপশাসনের যে অভিযোগ উঠেছে, সেটার অন্যতম কারণ দলীয় রাজনীতির প্রভাব।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, " শুধু গত ১৫ বছরে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব হয়েছে তা নয়, বরং এটি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। তাই বিচার বিভাগের সহজে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ করা সম্ভব নয়। তবে যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেটিকে আরও ত্বরান্বিত করতে হবে।"

সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সেগুলোর তদন্ত করা উচিত উল্লেখ করে মি. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, " একটি সুনির্দিষ্ট ঘটনার ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি আবেদন করেছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে বিচার নিশ্চিত হওয়ার আগে পর্যন্ত এই অবসরের আবেদন বিবেচনাযোগ্য নয় বলে আমি মনে করি। "

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
শিশুশিল্পী থেকে রণবীরের নায়িকা, কে এই সারা অর্জুন! Nov 18, 2025
img
ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন না দেখে মওদুদ আহমদের চলে যাওয়া দুঃখজনক: মির্জা ফখরুল Nov 18, 2025
img
জন্মদিনে সংগীতশিল্পী জুবিনকে স্মরণ করলেন মমতা Nov 18, 2025
img
তফসিল ঘোষণা করল ব্রাকসু, নির্বাচন ২৯ ডিসেম্বর Nov 18, 2025
img
হাসিনা-কামালের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির প্রক্রিয়া শুরু Nov 18, 2025
img
হামজাদের খেলা দেখতে গ্যালারিতে শান্তদের কোচ ফিল সিমন্স Nov 18, 2025
img
বেরোবির প্রথম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির সম্মতি, সভাপতিত্ব করবেন শিক্ষা উপদেষ্টা Nov 18, 2025
img
দেশীয় বাজারে ফের কমল স্বর্ণের দাম Nov 18, 2025
img
হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের আমন্ত্রণ পেলেন রোনালদো, কি নিয়ে কথা হবে? Nov 18, 2025
img
মামদানি ভারতীয়দের ঘৃণা করেন: এরিক ট্রাম্প Nov 18, 2025
img

ক্লাউডফ্লেয়ার ডাউন

বাংলাদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ বিশ্বের বহু ওয়েবসাইটে হঠাৎ বিপর্যয় Nov 18, 2025
img
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আত্মিক ও ঐতিহাসিক : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Nov 18, 2025
img
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ফ্রান্সের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের প্রথম সাক্ষাৎ Nov 18, 2025
img
২০ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বিক্রি বন্ধ ঘোষণা Nov 18, 2025
img
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু Nov 18, 2025
img
এনসিপি ও বাসদ মার্কসবাদীকে নিবন্ধন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে ইসি Nov 18, 2025
img
৩ দিনের সফরে শনিবার ঢাকায় আসছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোগবে Nov 18, 2025
img
দিল্লি গেলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর Nov 18, 2025
img
মেহেরপুরে কাথুলী সীমান্তে ২৪ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর বিএসএফের Nov 18, 2025
img

বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ

হামজা স্লোগানে মুখরিত জাতীয় স্টেডিয়াম Nov 18, 2025