তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীনা প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তির আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে চীনও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এর প্রতিফলন দেখা যাবে দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে।
আজ রোববার (৩০ মার্চ) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের বিষয়ে জানাতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান।
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা তার চীন সফরে সে দেশের পানিসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানে চীনের পানি বিশেষজ্ঞ সবাই ছিলেন। তিনি আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের পানির চাহিদা নিরসন নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। চীনারা আমাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর মধ্যে আছে নদীর পানি সংরক্ষণ, বন্যার পূর্বাভাস, বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়।”
খলিলুর রহমান ভাষ্য, “তিস্তা প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এই কাজে আমরা চীনা প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তির আগ্রহ ব্যক্ত করেছি। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে তারাও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এর প্রতিফলন দেখতে পারবেন যৌথ বিবৃতিতে।”
চীন সফর শেষে ২০২৪ সালে ১৪ জুলাই গণভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ”তিস্তা প্রকল্প আমাদের করতে হবে। এ নিয়ে চীন-ভারত দুই দেশই আমাদেরকে প্রস্তাব দিয়েছিল। এরই মধ্যে চীন সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। ভারতও সম্ভাব্যতা যাচাই করবে। দুই দেশের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে আমাদের জন্য যুক্তিযুক্ত হবে আমরা সেটা নেবো।”
তিনি বলেছিলেন, “তবে আমি এখানে বেশি প্রাধান্য দেবো যে এটা ইন্ডিয়া করুক। কারণ তিস্তার পানিটা ইন্ডিয়া আটকে রেখেছে। তাদের কাছ থেকে যদি আমাদের আদায় করতে হয় তাহলে এই প্রজেক্টের কাজ তাদেরই করা উচিত। তারা প্রজেক্ট করে যখন যে প্রয়োজন তারা দেবে। এটা তো একটা ডিপ্লোমেসি”।
রোববারের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে ৭৫০ মিলিয়নের মতো আমরা ঋণের কথা বলছি। এর মধ্যে অর্ধেক চট্টগ্রামের চীনা শিল্পাঞ্চল উন্নয়নের জন্য। অন্যদিকে মোংলা বন্দরে আমাদের একটি আধুনিকীকরণের প্রকল্প চলছে। যেহেতু চীন মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণের কাজ করছে, এটার পাশপাশি ওখানেও একটা অর্থনৈতিক অঞ্চল করার চিন্তাভাবনা করছে।”
“তারা আমাদের প্রস্তাব দিয়েছেন, আমরা রাজি থাকলে সেখানে দ্বিতীয় ইকোনমিক জোন নিয়ে তারা কাজ করবেন এবং ওখানে বিনিয়োগ করবেন।” যোগ করেন আশিক চৌধুরী।
তিনি বলেন, “এবার এই ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার থেকে ১ বিলিয়নের বেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি। এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৩০টি চীনা কোম্পানি। এটি মূলত চট্টগ্রামের আনোয়ারাতে চীনা শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর নির্ভর করে। প্রায় ৮০০ একর জমির ওপর এই শিল্পাঞ্চল তৈরির কাজ চলছে। এই জোনের কাজ অনেক আগেই শুরু হয়েছিল কিন্তু ২০২২ সালের পর এটা নিয়ে আর কোনও অগ্রগতি হয়নি। গত তিন মাসে আমরা এখানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি এবং অনেকগুলো বড় বড় সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে। তাদের সঙ্গে একটা নেগসিয়েশনে এসেছে, যে কারণে বিনিয়গকারিরা এখন খুবই কনফিডেন্ট অনুভব করছেন যে এই বছরের কোনও এক সময় আমরা নির্মাণ কাজ শুরু করবো। জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, এখন আমরা নির্মাণকাজে যাবো। সেটার ওপর নির্ভর করেই কিন্তু চীনা কোম্পানি আমাদের এখানে আসার চিন্তা করছে।”
আশিক চৌধুরী বলেন, “চীন এমন একটি মহাদেশ, যেখান থেকে আমাদের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আসা সম্ভব। লাস্ট আগস্ট থেকে এই মার্চ পর্যন্ত ৩৪টি চীনা কোম্পানি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ-বেপজাতে। এখানে আর্থিক প্রতিশ্রুতি প্রায় ১৬০ মিলিয়ন ডলারের মতো।”
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আরএ/এসএন