কাব্যিক ভাষায় কয়েক লাইন কিংবা নিজের মনের একান্ত অনুভূতিগুলো জুড়িয়ে প্রিয়জনদের জন্য বর্ণিল ঈদকার্ড সংগ্রহ। তারপর সেই কার্ড পৌঁছে দেয়ার তাগিদ। বলা যায়, ঈদকার্ডের মাধ্যমে আপনজনদের শুভেচ্ছা কিংবা দাওয়াত জানানোর সেই দিনগুলো আমাদের জীবন থেকে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ দিনটির খুশি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া, ভাগাভাগি করাই ঈদ।
সেই খুশির বার্তা প্রকাশের কিছু মাধ্যমও ছিল। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান মাধ্যম ঈদকার্ড। একসময় তরুণ-তরুণীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় ছিল ঈদকার্ড বিনিময়ের বিষয়টি। পুরনো কাগজপত্র ঘাঁটলে এখনো অনেকের ঘরে মিলতে পারে হাতের লেখা কার্ডের দেখা।
সেই মানুষগুলো এখন কেন ঈদকার্ড খোঁজে না, কার্ডের দোকানে ভিড় করে না, কার্ড ছাড়তে কুরিয়ার সার্ভিস কিংবা পোস্ট অফিসে ছুটে যাওয়ার জন্য তাদের মন আগের মতো ব্যাকুল হয় না? উত্তর একটাই, সময়।
দুই দশক আগেও ঈদ এলে নানা আন্তরিক কথায় পূর্ণ রং-বেরঙের ঈদকার্ড বিনিময় হতো বন্ধুদের মধ্যে। পাড়ায় পাড়ায় কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণীরা ঈদ এলেই দোকানে ভিড় করতেন নতুন ঈদকার্ড সংগ্রহে। দোকানিরা চেষ্টা করতেন নতুন নতুন ডিজাইন ও লেখাযুক্ত ঈদকার্ড সংগ্রহে রাখতে।
আবার বিভিন্ন পাড়ায় মৌসুমি বিক্রেতারা খুলে বসতেন ঈদকার্ডের পসরা। ৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হতো এসব ঈদকার্ড। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতিতে আজ যেন হারিয়ে গেছে ঈদকার্ডের সেই নস্টালজিয়া। যে নস্টালজিয়া হয়তো আশি বা নব্বইয়ের দশকে শৈশব-তারুণ্য না কাটানো কারো পক্ষে অনুধাবন করা কঠিন।
মোবাইল ফোন সহজলভ্য হওয়ার পর অনেকেই এসএমএসের মাধ্যমে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন।
কিন্তু এখন ফেসবুক, মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে আসে ঈদের শুভেচ্ছা।
ঈদকার্ডের মতোই হারিয়ে গেছে একসময়কার নস্টালজিয়া ক্যাসেট, সিডি, ডিভিডি। ঈদের আগে খ্যাতিমান বিভিন্ন শিল্পীর ঈদ অ্যালবাম এলে দোকানে দোকানে ক্যাসেট, সিডি, ডিভিডি কেনার ভিড় হতো। কোন শিল্পীর নতুন কী অ্যালবাম বের হয়েছে, তা নিয়ে খোঁজ নিতেন তরুণ-তরুণীরা।
কিন্তু হাতে হাতে স্মার্টফোনের এই যুগে হারিয়ে গেছে সেই ট্রেন্ডও। জীবিকার তাগিদে পেশা বদলেছেন ক্যাসেট, সিডি, ডিভিডি ব্যবসায়ীরা।
আরএ/এসএন