কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের ক্ষতিপূরণসহ চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে জিগাতলায় বিজিবির ৪ নং গেটের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালাচ্ছেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। সেখান থেকে বিজিবি মহাপরিচালকের সাক্ষাৎ চেয়ে না পেয়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পক্ষ থেকে পাঁচ প্রতিনিধি পিলখানার ৪ নং গেটে যান স্মারকলিপি নিয়ে। তবে তাদের মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়নি। স্মারকলিপি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণের আশ্বাসে তাদের ফেরত পাঠানো হয়।

ফিরে এসে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পক্ষে সাবেক হাবিলদার (তৎকালীন বিডিআর) মো. মাহাবুবুর রহমান ঘোষণা দেন দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত ও সশরীরে সাক্ষাৎ কিংবা বিজিবির ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা অবস্থান কর্মসূচিতে এসে দেখা না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে।

কী আছে স্মারকলিপিতে- 
বিজিবি মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা ২০০৯ সালে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য। আপনার জ্ঞাতার্থে, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিডিআরের ৫৭ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ১০ জন বিভিন্ন পদবির বিডিআর সৈনিক এবং ৭ জন বেসামরিক নাগরিকসহ মোট ৭৪ জন শহীদ হন। এটি আমাদের জাতির ইতিহাসে অন্যতম মর্মান্তিক অধ্যায় এবং আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর এক ভয়াবহ আঘাত। আমরাও এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

তৎকালীন সরকার পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড এবং পিলখানার বাইরে অবস্থানরত অন্যান্য ব্যাটালিয়ন/সেক্টর/ট্রেনিং স্কুলে কর্মরত বিডিআর সদস্যদের বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করার লক্ষ্যে গণহারে নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের বিনা বিচারে জেলখানায় বন্দী রাখা হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যাদের ফৌজদারি মামলায় কোনোভাবে জেল দিতে পারেনি, তাদের বিশেষ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে জেল-জরিমানাসহ সাজা প্রদান করা হয়।

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ পিলখানায় যখন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় তখন পিলখানার বাইরে দেশের অন্যান্য ইউনিটের বিডিআর ক্যাম্পগুলো ছিল পুরোপুরি শান্ত এবং ওই দিন বিভিন্ন ইউনিটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত জোয়ানদের অস্ত্র অস্ত্রাগারে জমা নিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু পরের দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার বাইরে দেশের বিভিন্ন ইউনিটে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ঘটনা ঘটে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা নিম্নরূপ—

ক. ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে সারাদেশে বিডিআরের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নে সেনা সদস্যরা অবস্থান নেয়।

খ. রাজশাহী সেক্টরে জোরপূর্বক অস্ত্রাগারের চাবি নেওয়ার জন্য কিছু সেনা সদস্যের সাথে সেক্টরের গেটে ধস্তাধস্তি হয়।

গ. আনুমানিক সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে পিলখানার বাইরের শুধুমাত্র দু-একটি ইউনিট বাদে বাকি সকল ইউনিট থেকে সেনা কর্মকর্তাদের ইউনিট ত্যাগের পরিকল্পিত নির্দেশনা প্রদান করা হয়; যা ইউনিটগুলোর ‘চেইন অব কমান্ড’ বিলুপ্ত করে সেখানে অভিভাবকশূন্য করা হয়।

ঘ. পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন স্থানে, যেমন- খাগড়াছড়ি, ফেনীর বিডিআর ক্যাম্পে অবস্থান নেয়।

ঙ. উপরোক্ত ঘটনাগুলো টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয় যা দেখে বিডিআর সৈনিকরা উদ্বিগ্ন হয়ে যায়।

এই ঘটনাগুলো দ্বারা দেশের সকল বিডিআরের ইউনিটে অবস্থানরত সৈনিকদের মনে ভীতি সঞ্চার হয় যা দুই বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। যার কারণে নিরাপত্তাহীনতার তাগিদ থেকে কিছু সংখ্যক বিডিআর সদস্য আমাদের পরিবার, সরকারি সম্পদ ও নিজেদের সুরক্ষার জন্য প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যা অন্যায়ভাবে ‘বিদ্রোহ’ হিসেবে চিহ্নিত করে হাজারো নিরীহ বিডিআর সদস্যকে গ্রেপ্তার, জেল-জরিমানা এবং চাকরিচ্যুতির মতো কঠোর শাস্তির সম্মুখীন করা হয়। যা ছিল বিচারের নামে চরম প্রহসন ও স্বেচ্ছাচারিতার এক নগ্ন নিদর্শন।

এ ধরনের প্রহসনমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হাজার হাজার নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের চাকরিচ্যুত করে তৎকালীন সরকার পরিস্থিতিকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে এবং প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, আমরা বিডিআর সদস্যরা শুধুমাত্র পেশাগত জীবনেই ক্ষতিগ্রস্ত হইনি বরং সামাজিক, পারিবারিক এবং অর্থনৈতিক জীবনেও ভয়াবহ বিপর্যয়ের শিকার হয়েছি। আমাদের পরিবারগুলো মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আমাদের পরিবারগুলোর মানসিক শান্তি ও স্থিতি পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে। এ ঘটনার ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সদস্যরা এখনও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়ে যাচ্ছি, যা আমাদের নাগরিক অধিকার, সম্মান ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করছে।

এক দফা দাবি-
স্মারকলিপিতে আন্দোলনকারীরা তাদের এক দফা দাবিও তুলে ধরেছেন। দাবিতে লেখা হয়েছে— পিলখানার ভেতরে ও বাইরের ইউনিটে মহাপরিচালকের বিশেষ আদালত ও অধিনায়কের সামারি কোর্টের অবৈধ রায় বাতিল করে সকল চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের অনতিবিলম্বে ‘ক্ষতিপূরণসহ চাকরিতে পুনর্বহাল’ করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মালয়েশিয়ার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা তদন্তে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ Jul 05, 2025
img
বায়ুদূষণ নিয়ে লেকচার, এবার নিজেই বাজি ফোটালেন প্রিয়াঙ্কা Jul 05, 2025
img
আওয়ামী লীগ দেশে জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি: মঈন খান Jul 05, 2025
img
১৫ বছরের সাংবাদিকতা নিয়ে তদন্ত হবে : প্রেসসচিব Jul 05, 2025
img
মান্নাকে বাংলাদেশের ‘জেমস বন্ড’ মনে করতেন জাহিদ হাসান! Jul 05, 2025
img
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে হারতে দেব না, ঘোষণা চীনের Jul 05, 2025
img
'রামায়ণ' সিনেমায় শূর্পনখার চরিত্রে দেখা যাবে রাকুল প্রীতকে Jul 05, 2025
মালয়েশিয়া ফেরত ৩ বাংলাদেশির জিজ্ঞাসাবাদ চলছে- আসিফ নজরুল Jul 05, 2025
img
২য় ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ Jul 05, 2025
img
এই ফল আমাদের প্রত্যাশিত ছিল না, ব্রাজিলিয়ান তারকা এস্তেভো Jul 05, 2025
img
সঞ্জয়ের ৩০ হাজার কোটি মূল্যের কোম্পানির দায়িত্ব পেলেন জেফ্রি মার্ক ওভারলি Jul 05, 2025
img
এখনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সংস্কার আলোচনার বাইরে : নজরুল ইসলাম Jul 05, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক প্রস্তাব ভারতের Jul 05, 2025
img
অনলাইনে শুল্ক ও কর জমা দিতে ‘এ-চালান’ সিস্টেম চালু করল এনবিআর Jul 05, 2025
img
একদিনে সারাদেশে গ্রেফতার ১৫৪২ জন Jul 05, 2025
img
তুরস্কে দাবানলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দায়ে গ্রেফতার ১০ Jul 05, 2025
img
কেন পর্দায় নায়িকার ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে সালমানের আপত্তি? Jul 05, 2025
img
‘ক্যাপ্টেন চিং’ রূপে ফিরলেন রণবীর, সঙ্গে ববি দেওল, শ্রীলীলা, রাজপাল Jul 05, 2025
img
নতুন মুখ, নতুন রঙে ফিরছে বলিউডের গল্প! Jul 05, 2025
img
জুলাই বিপ্লব নিয়ে কটূক্তি, পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত Jul 05, 2025