ঢাকা শহরের রাস্তায় একসময় চলত লাখো প্যাডেলচালিত রিকশা। কিন্তু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সহজলভ্যতা ও চালকদের ঝোঁকের কারণে সেই সংখ্যা এখন অনেকটাই কমে এসেছে। চালকের অভাবে গ্যারেজে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে রিকশাগুলো। বাধ্য হয়ে অনেক মালিক রিকশা বিক্রি করছেন ভাঙারির দোকানে।
মোহাম্মদপুরের জহুরি মহল্লার ‘বিশ্বাস গ্যারেজ’ চালান বাবু বিশ্বাস। তিনি জানান, তার বাবা ইস্কান্দার বিশ্বাসের হাতে গড়া এই গ্যারেজে একসময় দেড় শতাধিক রিকশা থাকলেও এখন আছে মাত্র ৫০টি। তবে সেগুলোরও চালক মেলে না।
“আগে একজন রিকশা জমা দেওয়ার আগেই আরেকজন সেটি চালানোর জন্য অপেক্ষা করত। এখন গ্যারেজে রিকশা পড়ে থাকে, চালকের দেখা মেলে না,” — বলেন তিনি।
বাবু বিশ্বাস আরও জানান, চালকের অভাবে রিকশাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করতে হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। অথচ নতুন একটি রিকশা তৈরিতে খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা।
অন্যদিকে আদাবরের গ্যারেজ মালিক মো. আলাউদ্দীন জানান, ব্যবসায় লোকসান গুণে তিনি গ্যারেজ বন্ধ করে দিয়েছেন। “২০টা রিকশা বিক্রি করেও একটাও অটোরিকশা কেনার টাকাও উঠল না। এখন ফুটপাতে কাপড়ের দোকান দিয়েছি,”— বলেন তিনি।
ঢাকা রিকশা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও রিকশা মালিক ঐক্য জোটের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান মজিদ বলেন, “আমাদের হিসাব অনুযায়ী ঢাকায় ৩ লাখ প্যাডেলচালিত রিকশা থাকলেও রাস্তায় চলে মাত্র ৫০ হাজার। চালকের অভাবে বাকিগুলো গ্যারেজে বসে আছে।”
তিনি আরও জানান, গ্যারেজ চালাতে প্রতিমাসে তার খরচ হয় লাখ টাকার বেশি। গ্যারেজ ভাড়া, মিস্ত্রি, নিরাপত্তাকর্মী ও ইউটিলিটি বিল মেটাতে গিয়ে এখন ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
নগর পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম প্যাডেলচালিত রিকশা আজ সংকটে। অটোরিকশার দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঐতিহ্যবাহী বাহন। রিকশা মালিকরা বলছেন, সঠিক নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ না থাকলে একসময় হয়তো ইতিহাসে ঠাঁই নেবে প্যাডেল রিকশা।
এফপি/এস এন