সাগরতলে পৃথিবীর প্রথম স্থায়ী গবেষণাগার নির্মাণ করছে চীন

প্রযুক্তির জোরে ফের বিশ্বকে চমকে দিতে চলেছে চীন। এবার তারা হাত দিয়েছে এক অভিনব ও উচ্চাভিলাষী প্রকল্পে—পৃথিবীর প্রথম স্থায়ী সাগরতল গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণে। মূলত সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে থাকা মিথেন গ্যাস উত্তোলনের লক্ষ্যেই শুরু হয়েছে এই মেগা প্রজেক্ট, যা ২০২৫ সালের ১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়।

এই প্রকল্প সফল হলে চীন যে পরিমাণ জ্বালানির নিয়ন্ত্রণ পাবে, তা পারস্য উপসাগরের প্রমাণিত তেল মজুদের চেয়েও বেশি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান। প্রায় ৮০ বিলিয়ন টন জ্বালানি তেলের সমান শক্তিশালী মিথেন বরফের (গ্যাস হাইড্রেট) মজুদ রয়েছে চীনের লক্ষ্যস্থলে, যা বিশ্ব জ্বালানি বাজারে এক বড় রদবদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

চীন এই গবেষণা কেন্দ্রকে ‘কোল্ড স্লিপ জোন’ নামে অভিহিত করেছে। গভীর সাগরের তলদেশে নির্মাণাধীন এই স্টেশনে ছয়জন বিজ্ঞানী কাজ করবেন এবং সাগরতলে দীর্ঘ সময় বসবাসের সবরকম সুবিধাই থাকবে সেখানে। প্রকল্পটি ২০৩০ সালের মধ্যে পূর্ণ কার্যক্ষম হবে বলে জানানো হয়েছে।

তবে এটি শুধু গবেষণার বিষয় নয়, বরং কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ চীন সাগর এমন এক এলাকা, যেখানে চীনের প্রভাব নিয়ে ফিলিপাইনসহ একাধিক দেশের আপত্তি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও এই অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে। ফলে এই গবেষণা কেন্দ্র চীনের সামরিক ও জ্বালানি নিরাপত্তার দিক থেকে এক বড় চাল।

প্রশ্ন জাগে—চীন মিথেন নিয়ে এত আগ্রহী কেন? এর জবাব লুকিয়ে আছে পরিবেশ ও কৌশলগত চাহিদায়। কয়লার তুলনায় মিথেন অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব—জ্বালানোর পর অর্ধেক পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়। ফলে এটি চীনের কয়লানির্ভরতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। একইসঙ্গে চীনের তেল আমদানির বড় অংশ মালাক্কা প্রণালির উপর নির্ভরশীল, যা সংকটকালে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। নিজস্ব মিথেন উৎস থাকলে সেই দুর্বলতা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

‘আগুনে বরফ’ নামে পরিচিত গ্যাস হাইড্রেট বরফাকারে থাকা অবস্থায় তার আয়তনের ১৬০ গুণ বেশি মিথেন ধারণ করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে গ্যাস হাইড্রেট আকারে যে পরিমাণ মিথেন আছে, তা সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত পাওয়া জীবাশ্ম জ্বালানির দ্বিগুণ শক্তি ধারণ করছে।

তবে এর বিপদও কম নয়। তাপমাত্রা ও চাপের সামান্য পরিবর্তনেই গ্যাস হাইড্রেট বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। দুর্ঘটনা ঘটলে সাগরতলে বড় ধরনের ভূমিধসের সম্ভাবনাও থেকে যায়।তবুও শক্তির সম্ভাব্য বিপ্লব ও সামরিক দিক থেকে লাভজনক খনিজ সম্পদের আশায় চীন এখন সাগরতলে বাজি ধরছে। আর এই নতুন মিশনে চোখ রাখছে গোটা বিশ্ব—উৎসাহ, উৎকণ্ঠা আর শঙ্কা মিশিয়ে।


এমআর/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
একাকীত্ব নয়, আত্মবিশ্বাসে আলোকিত বলিউডের যে চার নারীর জীবন Apr 08, 2025
img
শ্রদ্ধা কাপুরকে নিয়ে অমর কৌশিকের মন্তব্য, নেটদুনিয়ায় বিতর্কের ঝড় Apr 08, 2025
img
চীনা পণ্যের ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের Apr 08, 2025
img
বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে স্পেন প্রবাসী নিহত, আহত ১২ Apr 08, 2025
img
আমরা তোমাদের মহত্ত্ব ভুলব না এবং তোমাদের মানবতাও ভুলব না : ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত Apr 08, 2025
img
আমরা ইসরায়েলি কোম্পানি নই, দাবি করল বাটা Apr 08, 2025
img
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ গ্রেফতার Apr 08, 2025
img
তুরিন আফরোজের বাড়িতে পুলিশের অভিযান Apr 08, 2025
img
মিয়ানমারে ত্রাণ কার্যক্রমে বৃষ্টির বাধা Apr 07, 2025
img
গাজায় আপাতত ত্রাণ যাবে না : ইসরায়েলের সেনাবাহিনী Apr 07, 2025