রাজনৈতিক দল ও জনমতের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে জুলাই সনদ প্রকাশ করবে তার আলোকেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা উত্তরকালে এই প্রথমবারের মতো আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে সবার অংশগ্রহণের একটা পথ পদ্ধতি তৈরি করেছি। এটা সম্ভব হয়েছে এই দেশের গণমানুষের সংগ্রামের কারণে।’
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে সংলাপের শুরুতে এ সব কথা বলেন আলী রীয়াজ।
নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিল্লুর চৌধুরী দীপুর নেতৃত্বে ১০ সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদল এই সংলাপে অংশ নেয়। এ সময় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘এই সংলাপের মধ্য দিয়ে আমরা একটা জায়গায় দাঁড়াতে পারব, যেখানে আমরা একটা জাতীয় সনদ তৈরি করতে পারব। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত।এই সময়ের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে জুলাই সনদ, যাতে আগামীর বাংলাদেশের একটি পথরেখা তৈরি হয়। এরই একটি অংশ হিসেবে নির্বাচন হবে। নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে জুলাই সনদের একটা বড় রকমের ভূমিকা থাকবে।
জাতীয় সনদের একটা বড় রকমের ভূমিকা থাকবে, এটা আমরা আশা করি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা পথ খুঁজছি যাতে করে আমাদের লক্ষ্যগুলো অর্জনের পথ আমরা সুনির্দিষ্ট করতে পারি। একত্রে অগ্রসর হতে পারি, ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা অগ্রসর হতে পারি।’
এ সময় নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিল্লুর চৌধুরী দীপু বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এই দেশের মানুষের স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষাগুলো শুধু মুখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। দীর্ঘ ৫৪ বছর পর দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার সে উদ্যোগটা নিয়েছে, এই উদ্যোগটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র, আইনের অধিকার, সুশাসন অর্থাৎ শতভাগ গণতন্ত্র মানুষ অর্জন করতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া স্প্রেড শিটে (ছক আকারে) মতামত চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কমিশনের দেওয়া স্প্রেড শিটে আমরা ১৬৬টার মধ্যে ১১৪টিতে একমত হয়েছি, ১১টিতে আংশিক একমত হয়েছি। বাকিগুলোতে একমত হতে পারিনি। আশা করি, আলোচনায় আপনাদের ব্যাখ্যা জানতে পারব।’
উল্লেখ্য, সংস্কার বিষয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, দুদক, জনপ্রশাসন সংস্কারে গঠিত পাঁচটি কমিশনের ১৬৬ সুপারিশে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে মতামত চায় কমিশন। এতে ২৯টি দল তাদের মতামত দিয়েছে। মতামত দেওয়া দলগুলোর সঙ্গে গত ২০ মার্চ থেকে প্রথম দফার সংলাপ শুরু হয়েছে।
এর আগে এলডিপি, খেলাফত মজলিস, লেবার পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও এবি পার্টির সঙ্গে সংলাপ করেছে কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনার মাধ্যমে যেসব বিষয়ে একমত হবে, সেগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিতে সই হবে জুলাই সনদ।
এদিকে আজ বুধবার বিকল্পধারা ও গণ অধিকার পরিষদ লিখিত মতামত জমা দেবে বলে জানা গেছে।
এফপি/টিএ