রাষ্ট্র সংস্কার বিষয়ক সংলাপে সংবিধান সংস্কার কমিশনের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে নাগরিক ঐক্য। এছাড়াও অর্থবিল ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার প্রস্তাবেও দলটি পুরোপুরি একমত নয়।
মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিন্নুর আহমেদ চৌধুরী দীপু।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ যেহেতু একটি একক ইউনিটভিত্তিক রাষ্ট্র, তাই এখানে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রয়োজন নেই। অনুপাতিক পদ্ধতিতেও একই রকম কাঠামো তৈরি হবে এবং এতে গুণগত পরিবর্তন আসবে না।”
গত ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে, যার মধ্যে পুলিশ বাদে বাকি পাঁচটির সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ২০ মার্চ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে এই সংলাপ শুরু হয়।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না অনুপস্থিত থাকলেও, দলের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন জিন্নুর আহমেদ।
বর্তমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দিতে পারেন না। সংবিধান সংস্কার কমিশন অর্থবিল ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে এই বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও, নাগরিক ঐক্য অনাস্থা ভোটের ক্ষেত্রে এই বিধান বজায় রাখার পক্ষে।
জিন্নুর বলেন, “এতে পার্লামেন্টে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, সরকার বারবার পরিবর্তন হলে দেশের ক্ষতি হবে—এই ভাবনা থেকেই অনাস্থা ভোটে স্বাধীনতা না দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। তবে বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার সুযোগ আছে।”
সংলাপে তিনি আরও জানান, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাবে নাগরিক ঐক্য একমত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে থাকা মুহাম্মদ ইউনূসের গঠিত সাত সদস্যের দলটি ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে। ১৩ মার্চের মধ্যে ৩৮টি দলকে সুপারিশগুলোর ওপর মতামত দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
এই পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ মোট ২৮টি দল মতামত দিয়েছে।
নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের মধ্যে ১১৪টিতে তারা একমত, ১১টিতে আংশিক দ্বিমত এবং বাকি প্রস্তাবগুলোতে দ্বিমত রয়েছে।
নারীদের জন্য নির্ধারিত ১০০টি আসনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে সরাসরি নির্বাচনের সুযোগ তৈরির সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্য ভিন্ন একটি প্রক্রিয়া প্রস্তাব করেছে এবং ভবিষ্যতে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে চায়।
এছাড়া প্রার্থী হওয়ার বয়সসীমা ২৫ বছর রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে দলটি।
বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ইফতেখারুজ্জামান। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। বিকাল ৩টার পর শুরু হওয়া বৈঠক চলে আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময়।
এসএস/টিএ