যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) কার্যক্রম চালানো হচ্ছে ধার করা চিকিৎসক দিয়ে। নিজস্ব কোন চিকিৎসক না থাকায় কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে ইউনিটটি এখনও সচল রাখা হয়েছে। চিকিৎসক সংকটে যেকোন সময় যশোরবাসীর স্বপ্নের আইসিইউ বন্ধ হতে হয়ে পারে। এতে এই অঞ্চলের মুমূর্ষু রোগীরা সরকারি হাসপাতালে স্বল্প খরচে আইসিইউ সেবা বঞ্চিত হবেন। রোগীদের নিয়ে ছুটতে হবে ঢাকা ও খুলনার হাসপাতালে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে ওঠার কারণে গত ২০২১ সালের মে মাসে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ড করার জন্য ১০ টি ভেন্টিলেটর চেয়ে মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠায় কর্তৃপক্ষ।
জুন মাসে মন্ত্রনালয় ৬ টি ভেন্টিলেটর বরাদ্দ পায়। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ৬টি ভেন্টিলেটর হাসপাতালে এসে পৌঁছায়। পরে দক্ষ চিকিৎসক, সেবিকা, ৬টি শয্যা, মনিটর , অক্সিজেন, পাইপ লাইনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি বরাদ্দের ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। নভেম্বর মাসে ৫ টি বেডের বরাদ্দ পাওয়া যায়। অন্যান্য যন্ত্রপাতির অনুমোদন না মেলার কারণে কবে আইসিইউ কার্যক্রম শুরু হবে তা নিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে সিএমএসডি থেকে বেড , অক্সিজেন সিলিন্ডার ও হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা বরাদ্দ পাওয়ায় এই অনিশ্চিয়তা কেটে যায়। এসব মালামাল থাকলেও মনিটর ও ইনফিউশন পাম্মের কারণে আইসিইউ চালু করা সম্ভব হচ্ছিলো না। অথচ জেলায় করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু আইসিইউ না থাকায় গুরুতর রোগীদের অন্যত্র রেফার্ড করা হচ্ছিলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৭ এপ্রিল করোনা প্রতিরোধ যশোর জেলা সমন্বয় কমিটির আলোচনা সভায় আইসিইউর বিষয়টি নিয়ে জোরালোভাবে আলোচনা হয়। সভায় ব্যক্তি উদ্যোগে আইসিইউ চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
পরে যশোর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, সাবেক মেয়র হায়দার গণী খাঁন পলাশ ও সাবেক পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার ১ টি করে মনিটর দেন। ফলে প্রথম অবস্থায় ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে ৩টি মনিটর স্থাপন করা হয়। পরে বিভিন্ন বিশিষ্টজনের সহায়তায় আইসিইউতে ১০ টি শয্যা চালু করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইআরপিপি বা ইমার্জেন্সি রেসপন্স অব পেন্ডেমিক প্রজেক্টের আওতাভুক্ত হয়ে জোরেসোরে কার্যক্রম চলছিলো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ৪ চিকিৎসককে এখানে দায়িত্ব পালনের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ই আরপিপি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ওই ৪ চিকিৎসককে মন্ত্রনালয়ে ফেরত নেয়া হয়েছে।
হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. রবিউল ইসলাম তুহিন জানান, আইসিইউ বিভাগের নিজস্ব কোন চিকিৎসক নেই। সিভিল সার্জনের সহায়তার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ধার করা ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে কোন রকম আইসিইউ সেবা চালানো হচ্ছে। ৫ চিকিৎসকের সকলে মেডিকেল অফিসার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আইসিইউতে নেই। তিনি আরও জানান, সরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন ৫০০ টাকা ব্যয় করে রোগীরা আইসিইউ সেবা পাচ্ছে। একই সেবা বেরসকারি কোন হাসপাতাল থেকে নিতে হলে প্রতিদিন ব্যয় হবে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
ডা. রবিউল ইসলাম তুহিন আরও জানান, সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ বন্ধ হয়ে গেলে রোগীদের আর্থিক ক্ষতির সাথে দুর্ভোগ বাড়বে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, আইসিইউ এর কার্যক্রম জোড়াতালি চলছে। অথচ এখান থেকে অনেক মানুষ সেবা পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন। যশোরবাসীর স্বার্থে আইসিইউ চালু রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থায়ীভাবে চিকিৎসক পাওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
এসএম