ঈদের পর নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেটের তৎপরতা, কৌশলে বাড়ছে দাম

ঈদ উৎসব শেষ হতেই আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেট। পণ্য সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও কৌশলে মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের। এর ফলে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলু ও মসুর ডালের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা করে বেড়েছে। বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা ও মসুর ডাল ১৪০ টাকা কেজিতে। ফার্মের ডিমের দামও ডজনপ্রতি বেড়েছে ৬-৭ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৩৬ টাকায়।

তেলের দামেও রয়েছে ভিন্নতা। বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ১৭৫ টাকা হলেও খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা, যা ঈদের আগেও ছিল ১৬৮ টাকা।

নয়াবাজারে পণ্য কিনতে আসা ভ্যানচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, “রোজায় কিছুটা স্বস্তিতে ছিলাম, কিন্তু এখন আবার সব পণ্যের দাম বাড়ছে। গরিব মানুষদের জন্য ডাল, আলু, ডিমই ভরসা, কিন্তু এগুলোর দামও হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।”

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, “পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সমাজের উচ্চবিত্তরা না টের পেলেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। তাই বাজার তদারকির ব্যবস্থাকে রোজার সময়ের মতো জোরালোভাবে চালু রাখা জরুরি।”

অন্যদিকে, পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকা, যা ঈদের আগেও ছিল ৪৫ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ২৪০ টাকায়। হলুদ, আদা ও অন্যান্য মসলা পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী—হলুদের কেজি ৪০০-৪২০ টাকা, আদা মানভেদে ১০০-২০০ টাকা, জিরা ৬৫০-৭৫০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ টাকা এবং এলাচ ৫১০০ টাকা প্রতি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

সবজির বাজারেও রয়েছে অস্থিরতা। টমেটো, পেঁপে, শসা ও কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০-৪০ টাকা পর্যন্ত। টমেটো ৬০-৬৫, পেঁপে ৬০, শসা ৬০-৭০ এবং কাঁচামরিচ ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি লেবুর দাম ৮-১০ টাকা।

মাছের বাজারেও দেখা গেছে দাম বৃদ্ধির প্রবণতা। পাঙাশ ও তেলাপিয়া এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা, সরপুঁটি ২৩০, কই ২৫০, রুই ৩০০-৪০০, কাতল ৩০০-৩৫০, চাষের চিংড়ি ৬৫০-৭৫০ এবং নদীর চিংড়ি ৮০০-১০০০ টাকায়। শিং ও ট্যাংরা মাছের দাম যথাক্রমে ৮৫০-৯০০ এবং ৭০০-৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিক্রেতারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কার্যকর মনিটরিং ও কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।


এসএস

Share this news on:

সর্বশেষ

দীপিকার অর্জনে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি বৈশ্বিক স্বীকৃতি Jul 04, 2025
হোটেলে হাঁটছিলাম, কেউ আমার দিকে ঘুরেও তাকাল না: অভিষেক Jul 04, 2025
চলতে পারে বরফে, উড়তে নয়—দেশে প্রথম হোমমেড ‘এয়ার স্লেজ’! Jul 04, 2025
“জুলাই শুধু এক দলের নয়!"যে কারণে সরে গেলেন উমামা ফাতেমা! Jul 04, 2025
৫৪ বছরে বহু ও ১৭ বছরও বহু রাজনীতি দেখেছেন কিন্তু মুক্তি দিয়েছে ছাত্র জনতা Jul 04, 2025
img
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশে পরিবর্তন, তদন্ত ছাড়া আর শাস্তি নয় Jul 04, 2025
img
ব্রাজিলে ২০২৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে দেখতে চান আফিদা Jul 04, 2025
img
শুটিংয়ের ফাঁকে রাজ-শুভশ্রীর লাক্সারি ট্রিপ Jul 04, 2025
img
টিভি ও সংবাদপত্রের কিছু কর্তা সরাসরি সহিংসতা উসকে দিয়েছিলেন: উপ-প্রেস সচিব Jul 04, 2025
img
সহ-অভিনেতাদের বলা হতো আমাকে এড়িয়ে চলতে: ফাতিমা সানা শেখ Jul 04, 2025
img
শুরুটা ভালো হলেও ব্যাটিং ধসে লঙ্কানদের বিপক্ষে পরাজয় বাংলাদেশের Jul 04, 2025
img
সাফল্য নয়, সংগ্রামই তৈরি করেছে ঋতুপর্ণাকে Jul 04, 2025
img
'সে তো আজও বোঝে না' - সোহম চক্রবর্তীর অচেনা রূপ ফার্স্ট লুকে! Jul 04, 2025
img
সাজিদ খানের সঙ্গে তিক্ত অভিজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এষা Jul 04, 2025
img
আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার এখনো পাই নাই: আবু সাঈদের ভাই Jul 04, 2025
জিম নয়, জাদুকরী পানীয়ই অক্ষয়ের ফিটনেসের চাবিকাঠি! Jul 04, 2025
ঘটনার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন জুলাই শহীদ রনির মা! Jul 04, 2025
img
প্রচারের চেয়ে অভিনয়ে বেশি মনোযোগ অমৃতা চট্টোপাধ্যায়ের Jul 04, 2025
img
বিচার-সংস্কারের মধ্য দিয়ে নির্বাচন আমাদের মূল লক্ষ্য : হাসনাত আবদুল্লাহ Jul 04, 2025
img
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ পরিবারের কেউ ভর্তি হতে এলে বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে : উপাচার্য Jul 04, 2025