বাংলাদেশ আপনাদের অনুগত রাষ্ট্র থাকবে, এই চেতনা থেকে বেরিয়ে আসুন : সাইফুল হক

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক বলেছেন, ফ্যাসিবাদ জমানার মতো ভারত যদি বাংলাদেশকে ক্লাইন্টস্টেট করতে চান, যদি মনে করেন বাংলাদেশ আপনাদের (ভারত) অনুগত রাষ্ট্র হিসেবে থাকবে, এই চেতনা থেকে আপনারা বেরিয়ে আসেন। হাসিনার চোখ দিয়ে বাংলাদেশকে দেখলে আপনারা ভুল করবেন। বাংলাদেশের বিশেষ দলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি না করে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিপ্লবী যুব সংহতির উদ্যোগে আয়োজিত ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাইফুল হক বলেন, দুদিন আগে দেখলাম, ভারত আমাদের এখানে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা যেটুকু বাণিজ্যিক সুবিধা পেতাম, সেটা তারা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা এই ট্রান্সশিপন্টমেন্ট দিয়ে নেপাল, ভুটানের মতো দেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারতাম। এভাবে কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি এককভাবে ভারত বন্ধ করতে পারে না। এটা ভারতের কোনো সৎ প্রতিবেশীর পরিচয় নয়। এটা বন্ধুত্বের কোনো নমুনা নয়। কয়েকদিন আগে ব্যাংককে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার যে বৈঠক হয়েছে, তাতে আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম যে আট মাস পরে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যে বরফ, সেই বরফ কিছুটা গলতে শুরু করেছে।

কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি ভারত কার্যত সেই বৈঠকের পর থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। পরিষ্কার করে বলতে চাই, ভারত একতরফাভাবে এরকম আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল করতে পারে না।

উপদেষ্টাদেরকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমাদের রামপাল যে বিদ্যুৎ প্রকল্প, যেটা ভারতের স্বার্থে নেওয়া হয়েছিল, এরকম প্রকল্পগুলো অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত যাবতীয় দেশবিরোধী, নিরাপত্তা বিরোধী চুক্তি হয়েছে, সেগুলো প্রকাশ করা দরকার। যেগুলো জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি সেগুলো বন্ধ করা দরকার। ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে, আমরা আমাদের যাবতীয় দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধান করতে চাই।

সাইফুল হক বলেন, গতকাল আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, সরকারকে নাকি আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা দরকার। আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলতে চাই- আপনি কি সরকারের মনের কথা নিজের মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলেন? সরকারের মনের কথা যদি আপনি নিজে উচ্চারণ করে থাকেন, তাহলে সরকারের উচিত হবে এই কথাটি পরিষ্কারভাবে দেশবাসীকে জানানো।

গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা বলেন, ফিলিস্তিনে এই গণহত্যার বিরুদ্ধে, এই জায়নবাদী হামলা-আক্রমণের বিরুদ্ধে পুরো বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আমাদের সরকারকে বলতে চাই, দুই-তিনটা কাজ আপনারা করতে পারেন। প্রথমত- আমাদের পাসপোর্টে আগে যেভাবে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধের কাতারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, পাসপোর্টে এখন সেভাবে উল্লেখ থাকা দরকার। দ্বিতীয়ত- হাসিনা সরকার ইসরায়েলের আড়িপাতা যন্ত্র ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং কোম্পানির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আমদানি করেছিল। গত ১৫ বছর তারা আমাদের ওপর গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়ে ইসরায়েলি প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। যেভাবে এসব প্রযুক্তি আমদানি করা হয়েছে, এগুলো খোলামেলা দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করে বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করতে হবে।

তিনি বলেন, ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করার নামে যেভাবে বাটাসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে যে হামলা করা হচ্ছে, মব সন্ত্রাস যেভাবে জেগে উঠেছে এটাকে বন্ধ করতে হবে। এভাবে ইসরায়েলকে মোকাবিলা করা যাবে না, এভাবে জায়নবাদীদের মোকাবিলা করা যাবে না। এভাবে একটা মব সন্ত্রাস চালিয়ে এই সংকটের সমাধান করা সম্ভব নয়। এগুলোর কারণে বাংলাদেশ সম্পর্কে বাইরে একটা নেতিবাচক বার্তা যাবে। যখন বাংলাদেশে একটা বিনিয়োগ সম্মেলন চলছে। যখন শতশত বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য আসছে, তখন যদি এরকম মব সন্ত্রাস চলতে থাকে তাহলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য বিদেশি কোম্পানি আস্থা পাবে না। মব সন্ত্রাসের নামে লুটপাটের যে তৎপরতা চলছে, কোনোভাবে এটাকে বরদাস্ত করা যাবে না।

এসএম/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দাঁড়িয়ে থাকা বোয়িং বিমানে আঘাত করল লাগেজ ট্রলি Jul 01, 2025
img
সকাল ৯টার মধ্যে ৬ জেলায় ঝড়ের পূর্বাভাস Jul 01, 2025
img
আমি খেতে ভালোবাসি, অত ভাবি না : জয়া আহসান Jul 01, 2025
img
নতুন দায়িত্বে মিরাজ, ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তনের ইঙ্গিত Jul 01, 2025
img
কমেছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম, আজ থেকেই কার্যকর Jul 01, 2025
img
প্যারিসে আইফেল টাওয়ার বন্ধ, রেড অ্যালার্ট জারি Jul 01, 2025
img
বছরের উষ্ণতম দিন দেখলো যুক্তরাজ্য Jul 01, 2025
img
‘জুলাই আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক যুগান্তকারী দলিল’ Jul 01, 2025
img
ভারত-ইংল্যান্ড পরবর্তী দুই টেস্টের আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা Jul 01, 2025
img
ব্রিটেনে ছোট নৌকায় অভিবাসীর আগমনে নতুন রেকর্ড Jul 01, 2025
img
দুদফা কমার পর দেশের বাজারে ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম Jul 01, 2025
img
শক্তিশালী মিয়ানমারের বিপক্ষে জয়ের আশা বাংলাদেশের মেয়েদের Jul 01, 2025
img
ক্ষমতায় এলে চব্বিশের শহীদদের নামে স্থাপনা-সড়কের নামকরণের উদ্যোগ নেবে বিএনপি: তারেক রহমান Jul 01, 2025
img
মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান Jul 01, 2025
img
আধুনিক যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে মনুষ্যবিহীন ড্রোন Jul 01, 2025
img
‘হেরা ফেরি ৩’-এ পারিশ্রমিক নিয়ে কাড়াকাড়ি, পিছিয়ে সুনীল শেট্টি Jul 01, 2025
img
ছাত্র আন্দোলনের অগ্রদূত হাসনাতের জুলাই নিয়ে কিছু কথা Jul 01, 2025
img
একদিনে দুই জনপ্রিয় অভিনেত্রীর বিবাহবিচ্ছেদ Jul 01, 2025
img
যেকোনো মূল্যে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে : খালেদা জিয়া Jul 01, 2025
img
পিআর নির্বাচনব্যবস্থা কতটা উপযোগী, ভেবে দেখতে বললেন তারেক রহমান Jul 01, 2025