বলিউডে এক সময় দাপিয়ে অভিনয় করা ঊর্মিলা মাতন্ডকরের জীবন যেন এক অসমাপ্ত সম্ভাবনার গল্প। ‘মাসুম’ ছবির সেই নিষ্পাপ ছোট্ট মেয়েটি যে একদিন ‘রঙ্গীলা’ বা ‘এক হাসিনা থি’-এর মতো ছবিতে নিজস্ব এক ছাপ রেখে যাবেন— এমনটা হয়তো কল্পনাও করেননি কেউ। অথচ তিনিই হয়ে উঠেছিলেন নব্বই দশকের অন্যতম সাহসী, শক্তিশালী এবং স্টাইল আইকন অভিনেত্রী। তা সত্ত্বেও, কেরিয়ারের শীর্ষ মুহূর্তেই যেন হঠাৎ করেই থেমে গিয়েছিল তাঁর যাত্রাপথ।
শোনা যায়, ইন্ডাস্ট্রিতে কানাঘুষো চলত যে ঊর্মিলা নাকি অনেক সময় নায়কদের তুলনায় বেশি পারিশ্রমিক দাবি করতেন। এটা কি তাঁকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছবির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে? হতে পারে। তবে শুধুই এই কারণে কি কেরিয়ারে ভাটা? সিনেমাপাড়া তেমনটাই ভাবে না। বরং তাঁদের মতে, তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলের নাম রামগোপাল ভার্মা।
ঊর্মিলা আর আরজিভি— নব্বইয়ের দশকের বলিউডে এই জুটি একসময় ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ‘রঙ্গীলা’, ‘দৌড়’, ‘সত্যা’, ‘ভূত’— একের পর এক হিট ছবি তাঁদের ঝুলিতে। তবে এই সম্পর্ক পেশাগত না কি তার বাইরেও কিছু ছিল, তা নিয়ে গসিপ থামেনি কখনও। আরজিভির সঙ্গে অতিরিক্ত নির্ভরতা অনেকের মতে ঊর্মিলার পেশাগত বৈচিত্র্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যখন সেই জুটি ভেঙে গেল, ঊর্মিলার চলচ্চিত্রজগতেও যেন নেমে এল দীর্ঘ অন্ধকার।
তবে ভাগ্যশ্রী বা অন্যান্য নায়িকাদের মতো ব্যক্তিগত জীবন ঊর্মিলার কেরিয়ার নষ্ট করেনি। যখন তিনি কাশ্মীরি মডেল এবং ব্যবসায়ী মহসিন আখতারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, তখন তিনি অনেকটাই সিনেমার জগৎ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর কেরিয়ারের পতনের পেছনে দায়ী ছিল পেশাগত সিদ্ধান্ত, স্ক্রিপ্ট চয়েস, এবং এক বিশেষ নির্মাতার প্রতি একরকম অন্ধ আস্থা।
সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো, ঊর্মিলা প্রমাণ করেছিলেন যে শিশু অভিনেত্রী হয়েও বড় পর্দায় টিকে থাকা সম্ভব। অভিনয়, নাচ, এক্সপ্রেশন— সবেতেই ছিলেন পারদর্শী। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা ও বিচক্ষণতার অভাবে এক সম্ভাবনাময় তারকার আলোর পথ যেন মাঝপথেই থেমে গেল।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ঊর্মিলা বলিউডে ফিরবেন কি না, বা ফিরলেও আগের মতো প্রভাব ফেলতে পারবেন কি না, সেটা সময়ই বলবে। তবে একথা নিশ্চিত— বলিউডের ইতিহাসে তিনি রয়ে যাবেন এক উজ্জ্বল কিন্তু অসমাপ্ত অধ্যায় হিসেবে।