জুলাই আন্দোলনের সময় সেই হাসিমাখা ছবির পেছনের গল্প জানালেন সাকিব

গেল বছর জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল ছিল দেশ। ছাত্র-জনতার সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছিলেন বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারাও। যদিও সে সময় চুপ ছিলেন সাকিব আল হাসান। পুরো দেশ যখন আন্দোলনে ছিল, ঠিক তখন সাকিবকে দেখা গিয়েছিল কানাডায় সাফারি পার্কে পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়াতে। পরে সেই ছবি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে দিয়েছিলেন সাকিবের স্ত্রী। এরপর সমালোচনার বাণ ছুটে, তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন টাইগার অলরাউন্ডার।

সেই সময়ে নীরব ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি দেশের একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত জানিয়েছেন সাকিব, ‘সত্যি বলতে, আমি তখন বেশ কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলাম। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে মেজর লিগ ক্রিকেট (এমএলসি) খেলতে গেলাম, তারপর কানাডায়। ছবিটি কানাডায় তোলা। আমি নিজে এটি পোস্ট করিনি। তবুও, আমি এর দায়ভার নিচ্ছি। এটা একটা পূর্বপরিকল্পিত পারিবারিক ভ্রমণ ছিল। এখন বুঝতে পারছি, হ্যাঁ, একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে আমার আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল।'

'আমি এটা স্বীকার করছি। তবে আমার মনোযোগ সব সময় ক্রিকেটের দিকে ছিল সংসদ সদস্য হওয়ার আগে এবং পরেও। আমাকে কখনো রাজনীতিতে জড়িত হতে বলা হয়নি। আমাকে সব সময় বলা হয়েছে, শুধু ক্রিকেট খেলো। তাই আমি সেদিকেই মনোযোগ দিয়েছি’—আরও যোগ করেন সাকিব।

ক্রিকেটার সাকিবের রাজনীতিতে নামাও নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। এর ব্যাখ্যায় ইংরেজি দৈনিকটিকে সাকিব বলেন, ‘আমি মাত্র মাস ছয়েকের মতো রাজনীতিতে ছিলাম। নির্বাচনের পর সম্ভবত ৩ দিন মাগুরায় গিয়েছি। ৪-৫ মাসই ক্রিকেট নিয়ে ছিলাম। রাজনীতি করার বা পরিস্থিতি বুঝার সময় পেলাম কই? তখনকার প্রধানমন্ত্রী আমাকে বললেন, তোমাকে রাজনীতি করতে হবে না, ক্রিকেটে মনোযোগ রাখো। আমি সেই পরামর্শ মেনে চললাম।'

সাকিব বলেন, 'আর কোনো এজেন্ডা তো ছিল না। আমার ভাবনাই ছিল যতদিন পারি ক্রিকেট খেলে যাব। আমি চাইলেই ক্রিকেট ছেড়ে ফুল টাইম পলিটিশিয়ান হতে পারতাম। আমার লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা। এরপর আস্তে ধীরে বুঝেশুনে রাজনীতিতে মনোযোগ দিতাম। হুট করে রাজনীতিতে জড়িয়ে যেতে চাইনি। মানুষের দুটি মৌলিক অধিকার আছে- একটা ভোট দেওয়া আরেকটা নিজের পছন্দের রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়া।’

রাজনীতিতে যোগ দেওয়া ভুল ছিল না জানিয়ে সাকিব বলেন, ‘যারা বলছে রাজনীতিতে আসা ঠিক হয়নি তাদের বেশিরভাগই মাগুরার বাইরের। মাগুরার ভোটাররা বিশ্বাস করছে কোনটা- এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা আমাকে না চাইলে ভোট দেবে না। ব্যাপারটা তো খুব সিম্পল। আমি যদি আজও নির্বাচনে দাঁড়াই, মাগুরার লোকজন আমাকে ভোট দিতে আসবে কারণ তারা বিশ্বাস করে আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারব। আমি বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চেয়েছি। আপনি সিস্টেমের মধ্যে না থাকলে সিস্টেম পরিবর্তন করবেন কীভাবে? এখন যারা দেশ চালাচ্ছে, সিস্টেমের বাইরে থাকলে কি কোনো পরিবর্তন আনতে পারত?’

‘এটা মানুষের ব্যাপার। আমি মনে করি যখন আমি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি তখন ব্যাপারটা ঠিক ছিল। আমি এখনও বিশ্বাস করি আমি ঠিক ছিলাম। কারণ আমার ভাবনা ছিল মাগুরার মানুষের জন্য কাজ করা। আমার মনে হয়েছে ওদের জন্য কিছু করতে পারব, তারাও আমাকে চায়। আমার নির্বাচনী এলাকায় সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। আমার মনে হয় না কেউ সন্দেহ প্রকাশ করবে যে আমি যদি আবারো দাঁড়াই আবারো জয়ী হবো।’

জুলাই আন্দোলনের পর সাকিবের দেশের হয়ে খেলাও যেন থমকে গেছে। তবে এখনো জাতীয় দলের হয়ে খেলতে চান এবং নিজের ক্যারিয়ারের একটা সুন্দর সমাপ্তি চান সাবেক এই অধিনায়ক। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি সংসদ সদস্য ছিলাম কিন্তু এখন তো আর নেই এবং কোনো দলে কোনো রাজনৈতিক পদও নেই। যে কাজটি আমি ১৮ থেকে ২০ বছর (খেলা) ধরে করছি, সেটা থামিয়ে দেওয়াটা কি আপত্তিকর নয়? আমি এখনো বাংলাদেশের হয়ে খেলে ভালোভাবে ক্যারিয়ার শেষ করতে চাই। যদি সুযোগ থাকে আমি এক সিরিজ, দুই সিরিজ নাকি আরও এক বছর খেলব, সেই পরিকল্পনা করতে চাই।’

আরও যোগ করেন, ‘দেশের হয়ে খেলাই আমার সবচেয়ে বড় ইচ্ছা এবং সে জন্য আমি নিজের সবকিছু দিয়ে দিতে রাজি। এটাই আমার স্বপ্ন এবং সেটা পূরণ করতে আমি সবকিছুই করছি—ক্রীড়া উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা এবং বিসিবি সভাপতির সঙ্গে কথা বলছি।‘

এসএম/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৩ জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে মামলা করবে বিএনপি Jun 21, 2025
img
ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনায় নিজ দেশে ফিরছেন আফগান শরণার্থীরা Jun 21, 2025
img
উপাচার্য নিয়োগে মৃদু বিএনপিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে : পরিকল্পনা উপদেষ্টা Jun 21, 2025
img
সরকার ভালো কাজ করছে, আমাদের পথ দেখাচ্ছে: মির্জা ফখরুল Jun 21, 2025
img
ট্রাম্পের অভিমান কীভাবে ভাঙবে? Jun 21, 2025
img
ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে আর বিশ্বাস করছে না Jun 21, 2025
img
কীভাবে দুই বন্ধু 'ইরান-ইসরায়েল' হয়ে গেল চরম শত্রু? Jun 21, 2025
img
সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না: জাতীয় সংস্কার জোট Jun 21, 2025
img
সিলেট সীমান্ত এলাকায় কোটি টাকার ভারতীয় চোরাইপণ্য জব্দ Jun 21, 2025
অধিনায়ক হয়ে যা করে দেখালেন শান্ত, তা টেস্ট ইতিহাসে মাত্র ১৬ জনের! Jun 21, 2025
ট্রাম্পের অভিমান ভাঙবে কীভাবে? Jun 21, 2025
ইরান-ইসরায়েল ইস্যুতে আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জরুরি বৈঠক Jun 21, 2025
কালো আইন মুক্ত বাংলাদেশ কতদূর? প্রশ্নে ব্যারিস্টার ফুয়াদ Jun 21, 2025
সালাম দিয়ে ঘরে ঢোকার উপকারিতা | ইসলামিক জ্ঞান Jun 21, 2025
img
এনসিপি নেতা নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী হাসপাতালে Jun 21, 2025
img
আরো ৩ বিচারকের বদলি Jun 21, 2025
img
রাজধানীর ধামরাইয়ে গ্রেফতার সাবেক কাউন্সিলর সাঈদ Jun 21, 2025
img
বিয়ের বয়স কমিয়ে ভয়ংকর উদাহরণ তৈরি করা হয়েছিল : উপদেষ্টা শারমীন Jun 21, 2025
img
বিমান দুর্ঘটনার পর শাস্তির মুখে এয়ার ইন্ডিয়ার সিনিয়র কর্মকর্তারা Jun 21, 2025
img
কেজিএফ এর আলো পেরিয়ে অভিনেত্রী শ্রীনিধি শেঠির নতুন লড়াই Jun 21, 2025