বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ ফুটবল লিগ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। সেই লিগে খেলা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরী বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন। কানাডা জাতীয় দলে খেলা সামিত সোম সম্প্রতি বাংলাদেশের হয়ে খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
হামজা চৌধুরী বাংলাদেশ দলে আসার পরই ফুটবলের আবহ বদলে গেছে। দলীয় শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি সর্বত্রই এখন ফুটবল নিয়ে আলোচনা। সামিত সোমও যোগ হলে বাংলাদেশ দলের মান আরও অনেক বাড়বে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়া বাংলাদেশ দলে প্রথম খেলেন। সময়ের পরিক্রমায় তিনি বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়কত্ব করছেন অর্ধযুগের বেশি সময়। জামালকে অনুসরণ করে ফুটবল দলে তারিক কাজী, রাহবার ও কাজেম শাহ খেলেছেন।
ফুটবলের মতো অন্য খেলাগুলোতেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ক্রীড়াবিদ অর্ন্তভুক্তির সুযোগ রয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। প্রবাসী ক্রীড়াবিদদের বাংলাদেশের হয়ে খেলতে হলে পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন, বাবা-মায়ের কাগজপত্র হালনাগাদসহ আরও অনেক বিষয়াদির আনুষ্ঠানিকতা থাকে।
এই সংক্রান্ত বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন বলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি কোনো ফেডারেশন/ক্রীড়া সংস্থা এই সংক্রান্ত উদ্যোগ গ্রহণ করলে অভিভাবক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও পাশে থাকবে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আমেরিকান প্রবাসী জিমন্যাস্ট জ্যাক আশিকুল ইসলামের অনুকূলে বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সম্পৃক্ত রয়েছে।
ফুটবলের বাইরে অ্যাথলেটিক্স, বক্সিং, জিমন্যাস্টিক্স ও সাঁতারে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ক্রীড়াবিদরা অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের দ্রুততম মানব ইংল্যান্ড প্রবাসী ইমরানুর রহমান এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিক্সে স্বর্ণ জিতেছেন। যা বাংলাদেশের অ্যাথলেটিক্সের ইতিহাস। ২০১২ সালে আমেরিকান প্রবাসী সাইক সিজার লন্ডন অলিম্পিকে খেলেছিলেন। ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে তিনি আমেরিকান জিমন্যাস্টিক্স দলের সহকারী কোচ ছিলেন। নিউজিল্যান্ড প্রবাসী জিমন্যাস্ট আলী কাদির ২০২২ সালে তুরস্কে ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছিলেন। ২০২৩ হাংজু এশিয়ান গেমসে আমেরিকান প্রবাসী জিনাত অংশগ্রহণ করেছিলেন। যদিও তিনি কাঙ্ক্ষিত আশা পূরণ করতে পারেননি। ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে লন্ডন প্রবাসী জুনাইনা আহমেদ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
অন্য খেলার মধ্যে অ্যাথলেটিক্সে ইমরানুর রহমানই সর্বোচ্চ সাফল্য দিয়েছেন বাংলাদেশকে। অন্যরা এশিয়ান গেমস, অলিম্পিকের আসরে খেলার সুযোগ পেলেও প্রত্যাশার মাত্রা পুরোপুরি পূরণ করতে পারেনি। মহাদেশীয় বা অলিম্পিকের মতো আসরে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্নতার ঘটনাও আছে।
ভালো মানের এবং বাংলাদেশের পক্ষে দীর্ঘদিন খেলতে পারেন এমন বংশোদ্ভুতদের সম্পৃক্ত করতে পারলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সফলতার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এজন্য চিঠিতে ‘স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কৃতি খেলোয়াড়গণকে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করার সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ সংক্রান্ত’ শিরোনাম করেছে। ফেডারেশনগুলো গুরুত্ব দিয়ে এই নির্দেশনা অনুসরণ করলে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন এগিয়ে যেতে পারবে।
আরএম/টিএ