বিশ্ববিখ্যাত টেসলা সিইও ইলন মাস্ক একটি বড় ‘সন্তান দলের’ পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছেন। সন্তান জন্মদানের জন্য তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্ভাব্য মায়েদের খুঁজেছেন এবং এমনকি সারোগেট মায়ের ব্যবহারের প্রস্তাবও দিয়েছেন বলে জানিয়েছে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
ভারতের এনডিটিভি সূত্রে জানা যায়, মাস্কের এই পরিকল্পনা ঘিরে তার চারপাশে তৈরি হয়েছে এক ধরনের ‘হারেম-সংক্রান্ত নাটক’। অভিযোগ রয়েছে, মাস্ক সন্তানদের মায়েদের আর্থিক প্রণোদনা এবং কঠোর গোপনীয়তা চুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখেন।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মাস্কের ১৩তম সন্তানের জন্ম দেন ২৬ বছর বয়সী রক্ষণশীল ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাশলি সেন্ট ক্লেয়ার। তিনি জানিয়েছেন, মাস্ক একাধিকবার তাকে বার্তা পাঠিয়েছেন এবং জানান যে তিনি একটি বড় সন্তান দল গড়তে চান। এক বার্তায় মাস্ক স্পষ্টভাবে বলেন, “আমি তোমাকে আবার গর্ভবতী করতে চাই।”
বর্তমানে মাস্ক কমপক্ষে চারজন পরিচিত নারীর সঙ্গে ১৪টি সন্তানের জনক হয়েছেন—তাদের মধ্যে আছেন গায়িকা গ্রাইমস, নিউরালিঙ্কের নির্বাহী শিভন জিলিস, প্রাক্তন স্ত্রী জাস্টিন মাস্ক এবং সেন্ট ক্লেয়ার। তবে, তার ঘনিষ্ঠ মহল বিশ্বাস করে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, জাপানের কিছু কর্মকর্তার অনুরোধে মাস্ক একজন পরিচিত জাপানি নারীর কাছে তার শুক্রাণু পাঠিয়েছেন। মাস্কের ঘনিষ্ঠ সহযোগী শিভন জিলিস, যিনি তার চার সন্তানের মা, একটি ‘বিশেষ মর্যাদা’ পান বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। তাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং বিশ্বনেতাদের এক নৈশভোজেও দেখা গেছে মাস্কের সঙ্গে।
সেন্ট ক্লেয়ার জানান, সন্তান জন্মদানের সময় মাস্কের এক ঘনিষ্ঠ সহকারী জ্যারেড বার্চাল তাকে একটি প্রস্তাব দেন—যদি তিনি সন্তানের জন্মসনদে মাস্কের নাম না লেখেন এবং বাবার পরিচয় গোপন রাখেন, তাহলে তিনি ১.৫ কোটি ডলার ও প্রতি মাসে ১ লাখ ডলার সহায়তা পাবেন। যদিও তিনি গোপনীয়তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেননি, তবুও সন্তান জন্মসনদে মাস্কের নাম লেখেননি। তবে ফেব্রুয়ারিতে তিনি সম্পর্কটি প্রকাশ্যে আনলে আর্থিক সহায়তা ধাপে ধাপে কমিয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া, মাস্ক আরও কয়েকজন নারী, যেমন ক্রিপ্টো ইনফ্লুয়েন্সার টিফানি ফং-এর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন। ফং দাবি করেন, মাস্ক তাকে সন্তান ধারণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পরে তিনি এই বার্তাগুলো প্রকাশ করলে মাস্ক তাকে এক্স থেকে আনফলো করেন।
অনেক নারীই বলছেন, মাস্কের টিম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অর্থ ও গোপনীয়তা চুক্তি ব্যবহার করে। সহকারী বার্চাল এই অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীকে ‘মেরিটোক্র্যাসি’ বলে উল্লেখ করেছেন—যেখানে “ভালো কাজ করলে” সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়।
মাস্ক বহুবার বলেছেন, পৃথিবীতে জন্মহার কমে যাওয়াটা মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি এবং তার মতে, বুদ্ধিমান মানুষদের আরও বেশি সন্তান নেওয়া উচিত—এই বিশ্বাস থেকেই তার এমন প্রচেষ্টা।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, মাস্কের জীবন জটিল আইনি ও আর্থিক সুরক্ষার মধ্যে ঘেরা। তার ও গ্রাইমসের তিনটি সন্তান রয়েছে, এবং সন্তানদের অভিভাবকত্ব নিয়ে গ্রাইমসকে একাধিকবার আইনি লড়াইয়ে নামতে হয়েছে।
ফোর্বস অনুসারে, ইলন মাস্ক বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৬৭.৯ বিলিয়ন ডলার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগে’র প্রধান এবং একজন উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন।
আরআর/এসএন