চা উৎপাদনে ধস, উৎপাদন কমলো ১ কোটি কেজি

২০২৩ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হলেও ২০২৪ সালে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের কারণে উৎপাদন কমে গেছে প্রায় এক কোটি কেজি। তবে উৎপাদন কমলেও, চা রপ্তানির পরিমাণ ও আয় উভয়ই বেড়েছে।

২০২৪ সালে বাংলাদেশ ২ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন কেজি চা রপ্তানি করেছে, যেখানে ২০২৩ সালে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন কেজি। রপ্তানি থেকে আয়ও বেড়েছে—২০২৪ সালে এসেছে ৪৫৯ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন টাকা, যা আগের বছরের ২৭২ দশমিক ৫২ মিলিয়ন টাকার চেয়ে অনেক বেশি।

বাংলাদেশ টি বোর্ড থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদিকে গত সোমবার চায়ের সর্বশেষ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

আগামী ৫ মে থেকে নতুন মৌসুমের প্রথম নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে চা নতুন নিলামের সময়সূচি ঘোষণা করেছে টি বোর্ড। 

২০২৪ সালের উৎপাদিত চায়ের ৪৯টি নিলাম আয়োজন করা হয়েছিল। সর্বশেষ নিলামে ৭২ হাজার ৮৭৮ প্যাকেটে ৩৬ লাখ ৩৬ হাজার ৬১২ কেজি চা নিলামে বিক্রি হয়।  বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুসারে জানা যায়, ২০২৪ সালে ৯ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। ২০২৩ সালে ছিল ১০ কোটি দুই লাখ কেজি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদন কম হলেও দেশের বাজারে চায়ের সংকট হবে না। কারণ ২০২৩ সালের উদ্বৃত্ত উৎপাদন এই ঘাটতি পূরণ করবে। 

বাংলাদেশ চা অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালে উত্তর অঞ্চলের বেশ কিছু চা বাগান বন্ধ ছিল। এতে প্রভাব পড়েছে চায়ের উৎপাদনের। এছাড়া চা শিল্প বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। চা চাষের জন্য নিয়মিত ও মাঝারি বৃষ্টি প্রয়োজন। ২০২৪ সালে অতিরিক্ত বৃষ্টি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।'

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে দুই দশমিক আট লাখ একরেরও বেশি এলাকায় ১৬৯ চা বাগান আছে। এর মধ্যে, মৌলভীবাজারের ৯০ বাগান থেকে দেশের মোট উৎপাদনের ৫৫ শতাংশ আসে। দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক হবিগঞ্জ থেকে আসে ২২ শতাংশ চা, চট্টগ্রামের চা বাগান থেকে ১০ থেকে ১২ শতাংশ যোগ হয়। 

এদিকে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ চা রপ্তানি করেছে। প্রতিযোগিতামূলক দামের কারণে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো প্রধান রপ্তানিকারকদের তুলনায় বাংলাদেশ বাড়তি সুবিধা পেয়েছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে সাড়ে ২৪ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। ২০১৭ সালের পর সর্বোচ্চ। ২০১৭ সালে এই পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ ৬০ হাজার কেজি। ২০২৪ সালে রপ্তানি আয় ছিল চার কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ছয় লাখ কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। ২০১৯ সালে তা কমে হয়েছিল ছয় লাখ কেজি। এর পর ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ২১ লাখ ৭০ হাজার কেজি। তবে ২০২১ সালে কমে হয় ৬ লাখ ৮০ হাজার কেজি। ২০২২ সালে রপ্তানি বেড়ে হয় ৭ লাখ ৮০ হাজার কেজি। ২০২৩ সালে আরও বেড়ে হয় ১০ লাখ ৪০ হাজার কেজি।

মধ্যপ্রাচ্যসহ যে সব দেশে প্রবাসী বাঙালিদের বসবাস সেখানে বাংলাদেশি চায়ের চাহিদা বেশি বলে জানান চা রপ্তানির সঙ্গে জড়িত এক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা। 
এ ছাড়া বাংলাদেশের চায়ের কদর রয়েছে পাকিস্তান, আফগানিস্তানে। নতুন দেশ হিসেবে এবার রপ্তানি হচ্ছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে। এ ছাড়া সিংগাপুর, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, ফ্রান্সে, স্পেনে রপ্তানি হয় বাংলাদেশি চা। 

বাংলাদেশ থেকে চা রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্ট লিমিটেড, সিটি টি স্টেট, ইস্পাহানি টি লিমিটেড অন্যতম প্রতিষ্ঠান। 

২০২৩ সালে বাংলাদেশের ১৬৮টি বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা–চাষিদের হাত ধরে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদ করে নতুন রেকর্ড হয়েছিল। ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে প্রথম পরীক্ষামূলক চা চাষ শুরুর পর ১৮৪ বছরের ইতিহাসে গত বছর প্রথমবারের মতো চা উৎপাদন ১০ কোটি কেজি ছাড়িয়েছে। এবার সেই অর্জন ধরে রাখতে পারেনি বাগান গুলোর। ২০২২ সালের চা উৎপাদন হয়েছিল ৯ কোটি ৩৮ লাখ কেজি। এর আগে ২০২১ সালে ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন রেকর্ড ছিল। ২০১৯ সালে চা উৎপাদিত হয়েছিল ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি। সেসময় তাও রেকর্ড পরিমাণ ছিল। 

বাংলাদেশ চা বোর্ড চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন (এসইউপি, এনডিসি, পিএসসি) খবরের কাগজকে বলেন, ‘চা বোর্ড, বাগানমালিক, শ্রমিক, ক্ষুদ্র চাষি সবার দলগত পরিশ্রমের ফলে গত বছর চা উৎপাদানের রেকর্ড হলেও এবার তা ধরে রাখা যায়নি। তবে এবার চা রপ্তানিতে রেকর্ড হয়েছে। এবার যা উৎপাদন হয়েছে তাতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করতে পারা একটা বড় সাফল্য। এ ধারা অব্যাহত থাকবে। রপ্তানির বাজারও সম্প্রসারিত হচ্ছে। দেশের প্রায় ১২টি চা বাগানে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে উৎপাদন বন্ধ ছিল। এর প্রভাব পড়েছে মোট উৎপাদনের উপর। 

আরএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি, বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান রিজভীর Nov 04, 2025
img
চলতি বছরের সর্বাধিক উপার্জনকারী অভিনেত্রী রাশমিকা Nov 04, 2025
img
মেয়েরাই মেয়েদের বড় সমালোচক: প্রিয়াঙ্কা সরকার Nov 04, 2025
img
এনসিপিসহ ৩ দলকে প্রতীক দিয়ে ইসির বিজ্ঞপ্তি Nov 04, 2025
img
অভিষেকের সঙ্গে খুব আনন্দে আছি: ঐশ্বরিয়া Nov 04, 2025
img
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট দল ঘোষণা Nov 04, 2025
img
‘১৮ মাসে এক কোটি চাকরি’ নিছক বাগ্মিতা নয়, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা: আমীর খসরু Nov 04, 2025
img
এনসিপিকে ‘শাপলা কলি’ প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি Nov 04, 2025
img
দাম কমল ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের Nov 04, 2025
img
অনশন অব্যাহত রাখার ঘোষণা তারেকের, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের অভিযোগ Nov 04, 2025
img
না ফেরার দেশে সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি Nov 04, 2025
img
২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ১ বিলিয়ন ডলারের কৃষি পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের: রাষ্ট্রদূত জ্যাকবসন Nov 04, 2025
img
অনলাইনে জুয়ায় ‌জড়িত অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হবে: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব Nov 04, 2025
img
সালাহউদ্দিনকে প্রত্যাখ্যান, আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়নের দাবিতে বিএনপির বিক্ষোভ ও সভা Nov 04, 2025
img
রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্যে নির্বাচন যেন ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে: ‎জোনায়েদ সাকি Nov 04, 2025
img
উত্তরায় ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেল যুবকের Nov 04, 2025
img
বিচার না হওয়া পর্যন্ত আ. লীগকে বাংলার মাটিতে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না: ড. রেদোয়ান Nov 04, 2025
img
বিএনপির মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে: নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারী Nov 04, 2025
img
দক্ষতা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে সেবা দেওয়ার নির্দেশ বস্ত্র ও পাট সচিবের Nov 04, 2025
img
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের ক্যান্টিনে গ্যাস বিস্ফোরণে ১২ জন আহত Nov 04, 2025