মালয়েশিয়া—বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার। কিন্তু দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে গত ১ আগস্ট থেকে দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ। এতে করে প্রায় ৩১ হাজার ভিসা-পাসপোর্টধারী কর্মীর স্বপ্ন ভেঙে যায়, বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়া গমনের সব পথ।
বিগত ১০ মাসে এই সংকট কাটেনি। বরং সেখানে থাকা অনেক বাংলাদেশি অবৈধ অবস্থানে চলে গেছেন, কেউ কেউ কাজ না পেয়ে আত্মগোপনে, অনেকে আবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন। গত ১৮ এপ্রিল মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ ১৫৬ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে।
এই সংকট নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন, যেখানে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ মিটিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধানে আলোচনা করার কথা। তবে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে এখনো তেমন ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
প্রসঙ্গত, এই শ্রমবাজারে দুর্নীতির ইতিহাস দীর্ঘ। ২০০৯ সালে প্রথমবার মালয়েশিয়া কর্মী নেওয়া বন্ধ করে। পরে ২০১৬ সালে পুনরায় চালু হলেও সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয় মাত্র ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে দিয়ে। অনিয়মের কারণে ২০১৮ সালে আবারও বন্ধ হয় এই বাজার। বারবার বন্ধ-চালুর এই চক্রে লাভবান হয়েছেন কিছু প্রভাবশালী এজেন্সি, আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হাজারো শ্রমিক।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার যদি শ্রমবাজারটি পুনরায় খোলা হয়, তবে তা হতে হবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে। দুই দেশের সরকারকেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে। অতীতের অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তও জরুরি।
রামরু (রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট)-এর চেয়ারম্যান ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, “আজ হাজার হাজার কর্মী পথে পথে ঘুরছে, কেউ কেউ জেলে যাচ্ছেন, অনেকে হতাশ হয়ে দেশে ফিরে আসছেন। সরকারের উচিত তাদের দায়িত্ব নেওয়া।”
এই পরিস্থিতিতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও, বাস্তব পরিবর্তনের জন্য দ্বিপক্ষীয় সদিচ্ছা ও কার্যকর সংস্কার জরুরি বলে মনে করছেন অভিজ্ঞজনেরা।
এসএস/টিএ