৫৮ ঘন্টা পর অনশন ভাঙলেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ শরীফুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সংবাদ শুনে ৫৮ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙেছেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
 
বুধবার দিবাগত রাতে ইউজিসির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর তানজিমউদ্দীন খান শিক্ষার্থীদের জুস পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান। এসময় শিক্ষার্থীরা উল্লাস শুরু করেন, বিভিন্ন শ্লোগান দেন এবং আনন্দ মিছিল বের করেন।
 
এর আগে কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া সভায় বুধবার বিকেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৪ মে থেকে চালু করা হবে। বুধবার (২৩ এপ্রিল) কুয়েট সিন্ডিকেটের ১০২তম (জরুরি) সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সভায় জানানো হয়, গত ১৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০১তম (জরুরি) সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালু করা এবং ২ মে আবাসিক হলসমূহ খোলার বিষয়ে বলা হয়। বুধবার (২৩ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০২তম (জরুরি) সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ ২ মে-এর পরিবর্তে আজ ২৩ এপ্রিল বিকেলে খোলা হবে। আর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৪ মে থেকে চালু করা হবে।বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল পৌনে ১০টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা কুয়েটে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের দাবি শোনেন এবং তাদের অনশন ভেঙে আইনের ওপর আস্থা রাখার অনুরোধ করেন। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই অনুযায়ী জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

তিনি এ সময় অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দ্রুত চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তবে শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টার আশ্বাসে আশ্বস্ত না হয়ে কুয়েট উপাচার্যকে অপসারণ না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তিন সদস্যের কমিটি এসে সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। অবশেষে রাতে অনশনের প্রায় ৫৮ ঘন্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা। গত সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল থেকে অনশনে বসেছিলেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার দিবাগত রাতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কুয়েটের উপাচার্য ও উপ উপাচার্যকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ প্রদান করা হবে । অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকগণের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে।

এর আগে গত ১৪ এপ্রিল রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিগত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির কাছে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করা হয়।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এমআর/টিএ


Share this news on: