বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দলের ওপর চালানো নিপীড়নের প্রতিশোধ তাঁরা জুলুম করে নিতে চান না। বরং রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই সেই জুলুমের জবাব দিতে চায় বিএনপি। গতকাল বুধবার বিকেলে রংপুর, নীলফামারী ও সৈয়দপুরে আয়োজিত বিএনপির প্রশিক্ষণ কর্মশালায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে আমার পরিবার এবং দলের অনেক নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।কিন্তু আমরা তাদের মতো হয়ে জুলুমে প্রতিশোধ চাই না। আমরা জনগণের আস্থা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের ২০ কোটি মানুষের সঙ্গে বিএনপি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতেই এই ৩১ দফা। এই দফাগুলো ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে।কারণ, এখানেই রয়েছে আমাদের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা।’
কর্মশালায় তারেক রহমান বলেন, ‘রাজনীতিতে যারা অদৃশ্য প্রতিপক্ষ ছিল, তারা এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। আমাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চলছে। এসব মোকাবেলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করলে হবে না, সবাইকে এক কাতারে থাকতে হবে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশনায় আমরা যত বেশি কাজ করব, তত বেশি শক্তিশালী হব।’
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে শিক্ষিত বেকারদের জন্য ভাতা, কৃষকদের জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধা এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের পণ্যে রপ্তানি সহায়তা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটি বেকার রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে কারিগরি শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
কর্মশালায় যোগ দেওয়া নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনি পদ অনুযায়ী এখানে নেতা হিসেবে যোগ দিয়েছেন, আপনার ফলোয়ার আছে, সহকর্মী আছে। আপনার দায়িত্ব হচ্ছে শুধু আস্থা অর্জন ধরে রাখবেন, এটি একা করলে হবে না। বিএনপি হোক, যুবদল হোক, ছাত্রদল হোক প্রত্যেক নেতাকর্মীকে জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে।’
রংপুর, নীলফামারী ও সৈয়দপুরে একযোগে আয়োজিত এই কর্মশালায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় আড়াই হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। কর্মশালায় দলের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
সৈয়দপুরের কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকার। প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান। উদ্বোধন করেন সংগীতশিল্পী ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বেবী নাজনীন। প্রধান আলোচক ছিলেন ড. মাহাদী আমিন।
বক্তব্য শেষে তারেক রহমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। জনগণ যদি আমাদের নির্বাচিত করে, আমরা ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের উন্নয়ন নিশ্চিত করব।’
দলের কর্মশালায় তারেক রহমানের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। বরং ৩১ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন এবং রাষ্ট্রের কাঠামো সংস্কার করাই হবে দলের আসল ‘প্রতিশোধ’। দলের তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা ঐক্যবদ্ধ থাকুন, আস্থা ধরে রাখুন, জনগণের সঙ্গে থাকুন।
এমআর/টিএ