কেন বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙেছেন, জানালেন শওকত মাহমুদ

বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাংবাদিক শওকত মাহমুদ দলটির সঙ্গে বিচ্ছেদের কারণ জানালেন। আজ শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ‘রুপসী বাংলা’য় নতুন দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নতুন দলের মহাসচিব হিসেবে বিএনপির সঙ্গে বিচ্ছেদের এই কারণ জানান তিনি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদসহ দল থেকে বহিষ্কারের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত দূরত্ব হয়েছে- সেটার কারণ হচ্ছে, আমরা বেগম খালেদা জিয়ার অনুমতিতে ২০১২ সালে জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি গঠন করেছিলাম। সেই কমিটি যখন আমরা পুনরুজ্জীবত করি তখন আমরা বলেছিলাম যে, ইনসাফ কায়েম কমিটি একটা গণঅভ্যুত্থান করতে চায়, যে গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা থাকা প্রয়োজন। আমাদের এই আহ্বানকে বিএনপির কোনো কোনো নেতা ভুল বুঝেছিলেন। তারা মনে করেছেন যে, আমরা দলকে বোধহয় ভাঙতে চাই। সে কারণে আমার সঙ্গে বিএনপির একটা বিচ্ছেদ ঘটে।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু বাস্তবে সাধারণ মানুষ যে গণঅভ্যুত্থান চেয়েছিল বা রাজনৈতিক দলগুলো যে গণঅভ্যুত্থানের কথা বলেছিল, সেই গণঅভ্যুত্থানটি অরাজনৈতিক গণঅভ্যুত্থান বা অরাজনৈতিক ছাত্রদের নেতৃত্বেই সম্পন্ন হয়েছে। আমার এখানে বিএনপির কাউকে দোষ দেবার কিছু নেই, আমার কিছু বলার নেই। আমি আশা করব, সবাই উপলব্ধি করবেন গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশে যখন নতুন জাতীয় ঐক্যের আহ্বান এসেছে এবং প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে…আমি নতুন দল করেছি। আমাদের ভেতরে কতগুলো উপলব্ধি আছে, সেই উপলব্ধির সঙ্গে বিএনপির হয়তো খানিকটা দূরত্ব থাকতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা এগুলোর ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব নেই। হয়তো কৌশলের ক্ষেত্রে আমাদের পার্থক্য নেই।’

২০২৪ সালে একদলীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে শওকত মাহমুদ বলেন, ‘প্রথমত হচ্ছে, আমরা কোনো রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য এই নতুন দল গঠন করেনি। ২০২৪ সালের যে নির্বাচনটি হয়েছে সেখানে অনেকে বাধ্য হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আমার ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে বলতে পারি, আমাকে গোয়েন্দা সংস্থা তুলে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে যে ৭০টি মামলা ছিল, সে মামলার একটির রায় ঘোষণা করা হবে… এমন ভয় দেখিয়ে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে যারা নির্বাচনে গেছে, ২০২৪ সালে নির্বাচনে যাওয়া আর ২০১৮ সালে নির্বাচনে যাওয়ার মধ্যে আমরা কোনো পার্থক্য দেখি না। ২৪ সালের নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করি। কিন্তু একই সঙ্গে যারা ১৮ সালে নির্বাচনে গেছেন এবং নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন, তাদেরও তো দুঃখ প্রকাশ করা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই সময়ে সরকারের নিপীড়ন এমনই ছিল যে, আমাদের অনেককে তখন নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। আপনারা এটাও লক্ষ করবেন, ছাত্র সমন্বয়কদের আন্দোলন যখন সুতীব্র হয়, সেই সুতীব্র আন্দোলনের মধ্যে সমন্বয়কদের ডিবিতে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়… সরকারের চাপে তারা আন্দোলনের কর্মসূচি পর্যন্ত প্রত্যাহার করতে ঘোষণা দিয়েছিল অর্থাৎ ব্যক্তি বাঁচতে এরকম পদক্ষেপ নিতে আমাদের বাধ্য হতে হয়েছে।’

শওকত মাহমুদ বলেন, ‘২০১৮ সালে একটি দল নির্বাচনে গেছে তাদের নিবন্ধন বাঁচাতে। অর্থাৎ আমি মনে করি, এখন যে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান এসেছে- যারা ফ্যাসিস্টদের দোসর গণহত্যায় অংশ নিয়েছে, মানুষের ওপর জুলুম করেছে, তাদের বাদ দিয়ে নতুন ঐক্য গড়তে আমাদের সবাইকে লাগবে।’

কোনো জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে কি না জানতে চাইলে নতুন দলের মহাসচিব বলেন, ‘এটা সময় বলে দেবে। আমাদের দলের আদর্শ-উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ যদি কোনো জোট হয় সে জোটের সঙ্গে আমাদের যেতে কোনো অসুবিধা নেই। আমরা দলও গোছাব এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি দুটিই থাকবে। তবে এই মুহূর্তে কোনো জোটে যাব বা কোনো ঘাটবন্ধনে যাব এ ধরনের কোনো চিন্তা আমাদের নেই।’

আরএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো হবে: উপ-প্রেস সচিব Jul 12, 2025
img
টলিউডে পুজার নতুন শুরু, সঙ্গী দুলকার Jul 12, 2025
img
মিটফোর্ডে হত্যার ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 12, 2025
img
ধাড়াক ২ ট্রেলারে নজর কাড়লেন সিদ্ধান্ত ও তৃপ্তি Jul 12, 2025
img
'জবাবদিহিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি', সায়মা ওয়াজেদকে বাধ্যতামূলক ছুটি নিয়ে প্রেস সচিব Jul 12, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ার আভাস Jul 12, 2025
img
‘বাহুবলী ৩’ কি আসবে? দশ বছর পরেও প্রশ্ন অনড় Jul 12, 2025
img
‘সরকার বরাবরের মতোই নীরব’, মিটফোর্ডের ঘটনায় বাঁধন Jul 12, 2025
img
মিটফোর্ডের ঘটনায় আরও একজনসহ মোট গ্রেফতার ৫ Jul 12, 2025
img
কেবল পর্দার সামনে নয়, ক্যামেরার পেছনেও আসছেন এই অভিনেতারা Jul 12, 2025
তোমরা তো ১৩ মাসের নেতা; মুখ খুললেন সাংবাদিক নেতারা! Jul 12, 2025
img
'তারেক রহমানকে নিয়ে রাজপথে যে অশ্লীল অশ্রাব্য স্লোগান দেয়া হচ্ছে তার পরিণতি ভালো হবে না' Jul 12, 2025
img
নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতায় আসমান জমিন ফারাক: রিফাত রশিদ Jul 12, 2025
img
শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিলেও ফিনিশিংয়ে ভরসা পাচ্ছেন না কোচ Jul 12, 2025
img
কুবি শিক্ষার্থীদের ৩টি বাস উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ Jul 12, 2025
img
ফেনীর বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম Jul 12, 2025
img
মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের ‘শান্তির তত্ত্ব’ ভেস্তে গেছে: ইরান Jul 12, 2025
img
আবারও একসঙ্গে রাজ–মন্দিরা, আসছে ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ Jul 12, 2025
img
জোতাকে সম্মান জানিয়ে চিরতরে অবসরে লিভারপুলের ২০ নম্বর জার্সি Jul 12, 2025
img
পাশবিক এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে: আসিফ নজরুল Jul 12, 2025