ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন এ নির্বাচন অপ্রয়োজনীয়।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত ‘পরামর্শক কমিটির’ করা ডাকসু নির্বাচনসংক্রান্ত শিক্ষার্থী মতামত জরিপে শিক্ষার্থীরা এসব মতামত দেন।
গত ২৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল এই জরিপ কার্যক্রম শুরু করে।
শিক্ষার্থীরা তাদের ইনস্টিটিউটশনাল ই-মেইল ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব প্রোফাইলে ঢুকে ১৪টি বিষয় জানতে চাওয়া জরিপটি সম্পন্ন করেছে।
মোট ১৭৪৩ জন শিক্ষার্থী জরিপটিতে অংশ নেন। এতে ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডাকসু নির্বাচন প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন। মাত্র চার শতাংশের মতো শিক্ষার্থী মনে করেছে ডাকসু অপ্রয়োজনীয়।
গত ৬ এপ্রিল পরামর্শক কমিটির কাছে জমা দেওয়া জরিপের ফলাফলের কপি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জরিপটিতে জানতে চাওয়া মোট ১৪টি বিষয়ের মধ্যে আটটি বিষয় ছিল ডাকসু নির্বাচনসংক্রান্ত। জরিপে ‘ডাকসু নির্বাচন কবে হলে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ হবে’ প্রশ্নে জুনের মধ্যে মত দিয়েছেন ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মত দিয়েছেন সেপ্টেম্বরের মধ্যে ও বাকি নয় শতাংশ শিক্ষার্থী মত দিয়েছেন আরো এক বছর বা তারও পরে হলে ডাকসু নির্বাচন হলে সেটি গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ হবে।
জরিপে ‘শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ কী—প্রশ্নে প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী।
ভোট গ্রহণ ও গণনা সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশনে প্রায় ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী মত দিয়েছেন। এ ছাড়া ডাকসু নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত, ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে পূর্বসম্মতি ও সংলাপ এই দুটি পদক্ষেপে প্রতিটিতে ১৪ শতাংশ করে শিক্ষার্থী মত দিয়েছেন।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয় প্রতিটি হলে। প্রত্যেক হলের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন।
তবে সর্বশেষ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে হলের মধ্যে ভোটকেন্দ্র হওয়ায় সেখানে বাড়তি সুবিধা আদায় করেছিল ছাত্রলীগ।
হলে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে ভোটার লাইনে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রেখেছিল তারা, যাতে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা কোনো ভোট দিতে না পারে। জরিপে ‘ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কোথায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে’—প্রশ্নে বাছাই করা কিছু একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী। হল ও একাডেমিক ভবন মিলিয়ে উভয় জায়গায় ভোটকেন্দ্র স্থাপনে মত দিয়েছেন প্রায় ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। মাত্র ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মত দিয়েছেন হলের মধ্যে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে।
এ ছাড়া জরিপে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ায় ছাত্র-শিক্ষক যৌথভাবে নির্বাচন কমিশন নির্ধারণ, প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান মানদণ্ড প্রার্থিতা দাখিলের দিন থেকে কমপক্ষে এক বছর বৈধ ছাত্রত্বের মেয়াদ থাকার পক্ষে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মতামত দিয়েছেন।
পরামর্শক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, পরামর্শক কমিটি এই জরিপের ফলাফলসহ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন সিন্ডিকেটের কাছে জমা দেবেন। সিন্ডিকেট প্রয়োজনের ভিত্তিতে সেটি নিয়ে আলোচনা করতে পারে পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায়। আলোচনার ভিত্তিতে পরামর্শগুলো থেকে যেগুলো বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, নির্বাচন কমিটি বাস্তবায়ন করবে।
আরআর/টিএ