বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবা ও শিক্ষা আন্তর্জাতিক মানের করতে হবে

বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবা ও চিকিৎসা শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা। তারা উল্লেখ করেন, আধুনিক ও গবেষণাভিত্তিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে মেডিকেল শিক্ষার কারিকুলাম সংস্কার এবং চিকিৎসা পদ্ধতিতে যুগোপযোগী পরিবর্তন আনা অপরিহার্য। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যয় কমাতে স্বল্পমূল্যের কার্যকর ওষুধ ব্যবহারের ওপরও জোর দেন তারা।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) থেকে রোববার পর্যন্ত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের ২৪তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এসব বক্তব্য তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ডায়াবেটিসের মতো রোগও প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু শারীরিক পরিশ্রম এবং কমদামি ম্যাটফরমিন ট্যাবলেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এ ধরনের উদ্যোগ সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসার ব্যয় কমাতে সহায়ক হবে।

তারা বলেন, স্বল্প খরচে উন্নতমানের সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদেরও নতুন ধারায় প্রস্তুত হতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে অধিকতর কার্যকর ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানো দরকার।

চিকিৎসা শিক্ষায় কারিকুলাম সংস্কারের তাগিদ

বক্তারা আরো বলেন, বিশ্বমানের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে মেডিকেল শিক্ষায় পরিবর্তন জরুরি। গবেষণাভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতি, প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যসূচি চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মনির-উজ-জামান বলেন, মেডিসিন চিকিৎসা ব্যবস্থার মূলধারা। দেশের ১১৪টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে ৩৭টি সরকারি হলেও প্রয়োজনীয় জনবল এখনো ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে নতুন পদ সৃষ্টি এবং পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ জরুরি।

তিনি জানান, সোসাইটি স্বাস্থ্যখাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়

সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন দুই হাজারেরও বেশি দেশি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। পাশাপাশি পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ জন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা প্রথার সংযোগ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সম্মেলনের সমাপনী আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের। বিশেষ অতিথি থাকবেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সরোয়ার বারী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হোসেন।

সম্মাননা ও অতীতের ভূমিকার স্মরণ

সম্মেলনে অধ্যাপক মনির-উজ-জামান ২০২৪ সালের ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে শহীদ ও আহতদের স্মরণ করে বলেন, তখনও মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা নীরবে চিকিৎসা ফ্রন্টে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। আজকের বাংলাদেশের উন্নয়নে তাঁদের অবদান অবিস্মরণীয়।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, সোসাইটির সদস্য সচিব মুহাম্মদ জাকারিয়া আল আজিজ।

আরএম/এসএন 

Share this news on: