বিলুপ্তির পথে চট্টগ্রামের অষ্টমুখি লাল গরু

রেড ক্যাটল অব চিটাগাং বা চট্টগ্রামের লাল গরু চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, পটিয়া, লোহাগাড়া প্রভৃতি উপজেলায় পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে উৎপত্তি ও বিস্তার লাভ করায় এটি চাটগাঁইয়া গরু নামেও পরিচিত। স্থানীয় ভাবে সুন্দরী গরুও বলা হয়।

একটা সময় চট্টগ্রামের লোকজন লাল গরু ছাড়া কোরবানি দিতেন না। মেজবানি বা বিয়েতেও বেশ চাহিদা ছিল লাল গরুর। নদী কিংবা খাল পাড়ে ঘুরে বেড়ানোর ছবি প্রায় সময় চোখে পড়ত। কিন্তু এখন লাল গরু পাওয়া যায় না বললেই চলে। বিভিন্ন জাতের সংকরায়নের ফলে এই জাতটি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে। অথচ দেশীয় জাতের মধ্যে তুলনামূলক উন্নত বিবেচিত এই জাতটির রয়েছে বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।

আমাদের দেশীয় তুলনামূলক একটি উন্নত জাত হচ্ছে অষ্টমুখি লাল গরু। এ গরু খায় কম। দুধ উৎপাদন, মাংস উৎপাদন ও চাষাবাদের জন্য এ জাতের গরু বেশ উপযুক্ত। এই দুর্লভ প্রজাতির অষ্ট মুখী লাল গরুর দুধ যেমন মিষ্টি, তেমনি ফ্যাটের পরিমাণও বেশী এবং গোশত খুব সুস্বাদু।

বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের গরুর মধ্যে রেড চিটাগাং ক্যাটলের বৈশিষ্ট্য অন্য গরুর চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল শরীর, শিং, চোখ, ঠোঁট, চোখের ভ্রু, মলদ্বার, লেজ ও পায়ের খুর লাল। তাই এই বিশেষ জাতের গরুকে লাল বা অষ্ট মুখী লাল গরু বলা হয়ে থাকে। একটি পূর্ণ বয়স্ক লাল গাভীর ওজন হয় ১৫০-২০০ কেজি পর্যন্ত। ষাঁড়ের ওজন হয় ৩০০-৪৫০ কেজি পর্যন্ত। তাছাড়া পূর্ণবয়স্ক একটি গাভী বাড়তি খাবার ছাড়াই ৩-৪ লিটার দুধ দিয়ে থাকে এবং প্রতি বছরই বাচ্চা দিতে সক্ষম। এমনকি প্রতি ২ বছরে ৩ বার বাচ্চা দেয়।

দেশীয় আবহাওয়া ও সাধারণ খাদ্য দিয়ে এ জাতীয় গরু লালন পালন খুব সহজ।

রেড চিটাগাং ক্যাটল জাতের উৎপত্তিস্থল মূলত চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ, পটিয়া, আনোয়ারা, রাউজান ও সাতকানিয়া উপজেলায় বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। তবে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ায় এ জাতীয় গরু বেশি হওয়ায় অনেকেই মনে করেন এ গরুর উৎপত্তিস্থল চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ায়।

অষ্ট মুখি লাল গরুর রোগবালাই নাই বললেই চলে।দেশীয় আবহাওয়ায় লালন পালন খুব সহজ বলে ব্যাপকভাবে এ গরুর খামার গড়ে তোলা হলে আগামীতে দেশের দুধ ও গরুর গোশতের ঘাটতি মেটানো সম্ভব।

তবে উচ্চমাত্রায় সংকরীকরণের কারণে দেশীয় এ জাতের গরু বিলুপ্তির পথে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কয়েক বছর আগে চালানো হয় জরিপ। অধ্যাপক কবির উল ইসলাম পরিচালিত জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শঙ্খ নদীর তীরবর্তী সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, আনোয়ারাসহ চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলায় বর্তমানে মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার বিশুদ্ধ রেড চিটাগাং গরু রয়েছে। সংকরায়িত গরুগুলোকে হিসাবে ধরলে বর্তমানে এ জাতের মোট গরুর সংখ্যা সর্বোচ্চ ২০ হাজার।

সংশ্লিষ্টদের বলেছেন, মাংস বেশি, দুধ দেয় বেশি, এমন একটি গরুর প্রজাতি এখন বিলুপ্তির পথে। অথচ লাল গরু ছাড়া চট্টগ্রামে মাংসের স্বাদ নেয়া কিংবা দুধ পেতে বিকল্প কোনো চিন্তা করতেন না চট্টগ্রামের মানুষ। যদি সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া যায়, তবে বিলুপ্তির হাত থেকে নিশ্চিতভাবে রক্ষা পাবে লাল গরু। এজন্য প্রকল্প হাতে নিতে হবে।

বর্তমানে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন জাতের গরুর খামার গড়ে উঠলেও দেশী জাতের এই সম্ভাবনাময় অষ্ট মুখী লাল গরু আজ ব্যাপক হারে গড়ে উঠেনি। বর্তমানে লাইফস্টক রিসার্স ইন্সটিটিউট (বিএলআরআই) সহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা খাঁটি রেড চিটাগাং গরু সংগ্রহ করে সেগুলোর বংশবিস্তারের জন্য কাজ করছে। এতে লাল গরুর সংখ্যা হয়তো আগের অবস্থানে চলে আসবে।

 


টাইমস/এএস/এইচইউ

Share this news on: