চকলেট আমদানিতে কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি, তদন্তে এনবিআর

শ্রীলঙ্কা থেকে চকলেট (কিন্ডার জয়) আমদানিতে কোটি টাকার বেশি শুল্ক-কর ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। শুধু রাজস্ব ফাঁকি নয়, শুল্ক-কর আদায় না করে পণ্য খালাস হয়ে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান বরাবর এরূপ একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। যা খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআরের বোর্ড প্রশাসন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের নভেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কা থেকে আমদানি করা হয় চকলেট (কিন্ডার জয়) জাতীয় পণ্য। দুইটি ইনভয়েসের মাধ্যমে আমদানি করা এই চকলেটের মোট আমদানি মূল্য এক লাখ ৬৭ হাজার ২৯২ মার্কিন ডলার। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে বিল অব এন্ট্রিতে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে মাত্র ৪৬ হাজার ৮৪১ দশমিক ৭৬ ডলার। অর্থাৎ পণ্যের মূল্য এক লাখ ২০ হাজার ৪৫০ দশমিক ২৪ ডলার গোপন করা হয়েছে। যার ওপর শুল্ক-কর ফাঁকি হয়েছে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা।

তবে বিল অব এন্ট্রির সঙ্গে ভুয়া ইনভয়েস দেওয়া হয়েছে। আর এই শুল্ক-কর ফাঁকি দিতে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ বলছে ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) নেতা মো. আলতাফ হোসাইন চৌধুরী বাচচু বিপ্লব ট্রেড ওভারসিজ লাইসেন্সের মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে ঘুষের বিনিময়ে পণ্য চালানটি খালাস করেছেন। অভিযোগে দাবি করা হয়, কাস্টমস ইনভয়েস খতিয়ে দেখে মামলা করলে শুল্ক-কর ফাঁকিসহ এই চালান থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের বোর্ড প্রশাসন শাখার প্রথম সচিব মো. জাহিদ নেওয়াজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে কোনো অভিযোগ জমা হলে আইনি ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রেরণ করা হয়। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নেতা মো. আলতাফ হোসাইন চৌধুরী বাচ্চুর ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। আর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, চট্টগ্রামের জুবলী রোডের আমদানিকারক বি অ্যান্ড বি ফুড অ্যান্ড বেভারেজ। আইজিএম’র তথ্যমতে, প্রতিষ্ঠানটি শ্রীলঙ্কার কলম্বো থেকে বিএস কার্গোর মাধ্যমে চকলেট (কিন্ডার জয়) আমদানি করেছে। আর আমদানিকারকের ইনভয়েস বলছে, আমদানিকারক দুবাইয়ের প্যানমার্ক ইম্পেক্স মেগা ট্রেডিং এলএলসি থেকে পণ্য ক্রয় করলেও শ্রীলঙ্কার দি কর্মাশিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসিতে ডলারে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করেছে। তবে পণ্যটির কান্ট্রি অব অরজিন হলো ইন্ডিয়া। দুইটি ইনভয়েসে মোট এক লাখ ৬৭ হাজার ২৯২ ডলারের পণ্য ক্রয় করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় দুই কোটি ৭৫ হাজার ৪০ টাকা (এক ডলার ১২০ টাকা)। এর মধ্যে প্রথম ইনভয়েসে ৮৩ হাজার ৫৯২ ডলার ও দ্বিতীয় ইনভয়েসে ৮৩ হাজার ৭০০ ডলার। ইনভয়েস অনুযায়ী, ২০২৪ সালর ৩ জুলাই চালানটির শিপমেন্ট হয়েছে।

তবে বিল অব এন্ট্রিতে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট তথ্যের ব্যাপক গরমিল করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ভুয়া ইনভয়েস দেখিয়ে পণ্য চালান খালাস করেছে। ১০ নভেম্বর আমদানিকারকের পক্ষে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি (বিল অব এন্ট্রি নং-২০৮০০৭২) দাখিল করে সিঅ্যান্ডএফ বিপ্লব ট্রেড ওভারসিজ। যার মালিক চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসাইন চৌধুরী বাচ্চু।

অভিযোগ রয়েছে, বাচ্চু ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে প্রভাব খাটিয়ে শুল্কফাঁকি ও মিথ্যা ঘোষণার পণ্য খালাসের একটি বড় সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাসিনার পতনের পর বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন। পলাতক থাকলেও তার সিন্ডিকেট কাস্টম হাউসের একাধিক কর্মকর্তাকে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চালানটির দফারফা করা হয়। পরে সামান্য মূল্য বৃদ্ধি দেখিয়েছে প্রায় একমাস পর ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর চালানটি খালাস করা হয়েছে। অথচ চালানটিতে শুল্ক-কর ফাঁকি হয়েছে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, কাস্টম হাউস জরিমানা করলে সরকার এই চালান থেকে রাজস্ব আদায় করতে পারতো প্রায় তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণা ও শুল্ককর ফাঁকিতে সহায়তার দায়ে সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্সের বিরুদ্ধে কাস্টম হাউস ব্যবস্থা নিতে পারতো। অথচ মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে সিন্ডিকেটের নেতা বাচ্চুর চালানটি খালাস হয়, সঙ্গে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাচ্চুর একই লাইসেন্স দিয়ে এর আগেও একাধিক মিথ্যা ঘোষণা, শুল্ক-কর ফাঁকি দেওয়া পণ্য খালাস হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে তৎকালীন কাস্টমস গোয়েন্দার সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মো. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, কিন্ডার জয় নামে চকলেট আমদানি হয়। মূলত কিন্ডার জয় মানে চকলেট ও খেলনা একসঙ্গে থাকে। আমরা তথ্য পেয়ে চালানটি লক করেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল চকলেট আর খেলনা আলাদা আলাদা শুল্কায়ন করা। পরে এনবিআরের নির্দেশনা অনুসারে পণ্য খালাস হয়। আমরা যা করেছি নথিপত্র যাচাই করেই করেছি। ইতোমধ্যে এমন অভিযোগ এনবিআরের একাধিক গোয়েন্দা বিভাগ থেকে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়নি। মূলত সম্মানহানি করতেই একটি চক্র ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ করে যাচ্ছে।

এফপি/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর

৫ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি Dec 22, 2025
img
আজকের আবহাওয়া : রাজধানী ঢাকার আকাশ মেঘলা থাকতে পারে Dec 22, 2025
img
কমিশন নিয়ে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য ছড়ানো হচ্ছে : গুম কমিশন Dec 22, 2025
img
২২ ডিসেম্বর: ইতিহাসে এই দিনটিও গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় Dec 22, 2025
img
অপরাধী গ্রেপ্তার না হওয়ায় রহুল কবির রিজভীর ক্ষোভ প্রকাশ Dec 22, 2025
img
দেশের বাজারে আজ কত দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ Dec 22, 2025
img
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক Dec 22, 2025
img
বলিউডের 'জুবিলি গার্ল' আশা পারেখ কেন বিয়ে করেননি Dec 22, 2025
img
ওয়ানডে বিশ্বকাপে হারের পরেই অবসর নিতে চেয়েছিলেন রোহিত! Dec 22, 2025
img
ইউরোপিয়ান ক্লাবে ফিরলেন থিয়াগো সিলভা Dec 22, 2025
img
বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলে, আমি একটি গোল করবো: নেইমার Dec 22, 2025
img
শরীর নিয়ে কটূক্তি, শুটিং সেটে তিক্ত অভিজ্ঞতা রাধিকার Dec 22, 2025
img
ইচ্ছাকৃত কনসার্ট বাতিলের অভিযোগ, শিরোনামহীনের প্রতিক্রিয়া Dec 22, 2025
img
একই সিনেমার পরিচালনা, প্রযোজনা ও অভিনয়ে কেট উইন্সলেট Dec 22, 2025
img
তামিল থেকে হিন্দি, নতুন বছরে ব্যস্ত শ্রীলীলা Dec 22, 2025
img
দক্ষিণী সিনেমায় নতুন চমক, নজর কাড়ছেন ভাগ্যশ্রী বরসে Dec 22, 2025
img
আমি দর্শকদের মতামত দ্বারা প্রভাবিত হই না: চিত্রাঙ্গদা সিং Dec 22, 2025
img
রাষ্ট্র গভীর সংকটে, উদ্ধার করতে পারে একমাত্র বিএনপি : শেখ রবিউল আলম রবি Dec 22, 2025
img
বলিউড ছাড়ার গুঞ্জনে ঊর্মিলা মাতন্ডকরের মন্তব্য Dec 22, 2025
img
বাংলাদেশ স্থিতিশীল ও শান্তিতে থাকুক চায় না শেখ হাসিনা : রিজভী Dec 22, 2025