কাউকে মারার কথা ভাবতেও পারেন না, দাবি জ্যোতিকা জ্যোতির

ঢাকাই চলচ্চিত্রের চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, আসনা হাবিব ভাবনা, চিত্রনায়ক জায়েদ খানসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে হত্যাচেষ্টা মামলা করা হয়েছে। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন রাজধানী ঢাকার ভাটার থানাধীন এলাকায় হওয়া এক হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি করা হয়েছে এসব অভিনয়শিল্পীকে। এ মামলায় আছে শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সাবেক পরিচালক ও অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতির নামও।

জ্যোতিকা জ্যোতি জুলাই আন্দোলনের সময় তৈরি করা বিতর্কিত হোয়াটস্যাপ গ্রুপ ‘আলো আসবেই’-এর সদস্য ছিলেন।

শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ছিল ঘনিষ্ঠতা। আওয়ামী লীগের দলীয় পদেও আছেন তিনি। এবার হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি হওয়া প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক দীর্ঘ পোস্ট করেছেন তিনি।

যেখানে জ্যোতি জানান, কাউকে মারার কথা ভাবতেও পারেন না তিনি। আর সেখানে তার বিরুদ্ধেই কিনা এমন মামলা!

ফেসবুক পোস্টে জ্যোতি লেখেন, ‘আজ পর্যন্ত আমার জীবনে আমি কোনো দিন কোনো মানুষের গায়ে হাত তুলিনি। আমার আদর্শের বাইরে, ভিন্নমতের কিংবা আমার শত্রুকেও আমি শারীরিক আঘাত করার কথা ভাবতেও পারি না। আমি কোনো পোকা, পিঁপড়া এদের মারি না।

কখনো মশা মারি না, যারা আমার কাছের তারা জানে। রাস্তাঘাটে ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত প্রাণী দেখলে সাধ্যমতো খাবার, পানি ও আদর করে দিই। আমার ব্যাগে রাখা পানির বোতল থেকে পানি হাতে নিয়ে রাস্তার কুকুরদের খাইয়েছি অনেকবার। এর কারণ আমার ভীষণ মায়া হয়। মানুষ অনেক কিছু পারলেও প্রাণ সৃষ্টি করতে পারে না।

প্রকৃতির প্রতিটা প্রাণ তাই আমার কাছে পূজনীয়।’

নিজেকে অনেক সংবেদনশীল দাবি করে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি কোনো মারামারি, পেটানো, খুন, প্রাণী নির্যাতন, হত্যা—এসব ঘটনা বা ঘটনার ভিডিও দেখলে আমার এমন অনুভূতি হয় যে আমি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাই।

এগুলো মনে গেঁথে থাকে, আমি ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকি। এই আমাকেই কিনা একের পর এক হত্যা মামলার আসামি করা হচ্ছ! যাদের আমি চিনি না, জীবনে নাম শুনিনি তারা বাদী। মামলাগুলো এমনই মিথ্যা যে মানুষ শুনেই হেসে দেয়। কিন্তু এই হাসি-তামাশার মামলাগুলো আমাকে বিষাদগ্রস্ত করে দিচ্ছে। কোনো ভয়-ভীতি নয়, আমাকে মানসিকভাবে যন্ত্রণার মধ্যে ফেলছে। যে যন্ত্রণা আমাকে মানুষের থেকে, কাজের থেকে, স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে দূরে সরিয়ে এক বিষাদভরা জগতে নিয়ে যাচ্ছে। এসব মিথ্যা অপবাদ, সামাজিক মাধ্যমে এক শ্রেণির মানুষের প্রতিহিংসার প্রকাশ-গালাগাল, নোংরামি, আমার জীবনীশক্তি শেষ করে দিচ্ছে।’

অভিনেত্রীকে হেনস্তা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরো লেখেন, ‘আসলে আমার অপরাধ কী, কেন আমাকে এ রকম বিশ্রী সিচুয়েশন পার করতে হচ্ছে? আমার এই ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এসব হেনস্তা, নিপীড়নের মানে কী?’

১৭ জন অভিনয়শিল্পীর বিরুদ্ধে হওয়া মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে―সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের সংশ্লিষ্ট ২৮৩ জন ও অজ্ঞাতনামা তিন-চার শ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেছেন এনামুল হক। এসব আসামি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করার জন্য বিপুল অর্থ জোগান দিয়েছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থ জোগানদাতা হিসেবে আসামি করা হয়েছে ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে। মামলায় আসামি করা হয়েছে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তফা, রোকেয়া প্রাচী, আসনা হাবিব ভাবনা, সোহানা সাবা, মেহের আফরোজ শাওন, জ্যোতিকা জ্যোতি, চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক, জায়েদ খান, আজিজুল হাকিমসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীকে।

এসএম/টিএ

Share this news on: