শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণসহ ১১ দফা দাবি ও ৩ কর্মসূচি বাকবিশিসের

বিচ্ছিন্নভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ না করে পুরো শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ ও ইউনেস্কোর সুপারিশ মোতাবেক শিক্ষাখাতে জিডিপির ৬% বরাদ্দসহ এগারো দফা দাবি জানিয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস)।

শুক্রবার (২ মে) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় সংগঠনটি৷ এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা জানি শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষক। দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী দ্বারা । অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয় এই যে, একই কারিকুলাম ও সিলেবাসে পাঠদান করা হলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মাত্র ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫% উৎসব ভাতা এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পেয়ে থাকেন। অবসরে যাওয়ার পরেও ৩/৪ বছরেও অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পাচ্ছেন না। উপরন্তু অন্যায়ভাবে বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪% কর্তন করা হচ্ছে। ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ অথবা জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ করার কথা থাকলেও ধারাবাহিকভাবে জিডিপির মাত্র ২ শতাংশের আশপাশে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। বাকবিশিস মনে করে এই বরাদ্দ ন্যূনতম ৪ শতাংশ করলেই শিক্ষাখাতের বিরাজমান সমস্যার বিরাট অংশ সমাধান করা সম্ভব। আমরা আগামী বাজেটে শিক্ষাখাতে ইউনেস্কোর সুপারিশের আলোকে বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, নানা ধরনের শিক্ষার ক্রমবর্ধমান প্রভাবে সাম্প্রদায়িকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমাজ, মধ্যযুগীয় পশ্চাৎপদতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে সমাজমানস। এজন্য শিক্ষকদের ওপর সম্প্রতি নজিরবিহীন হামলা, লাঞ্ছনা ও হয়রানি শুরু হয়েছে। বাকবিশিস চেতনাগত অবস্থান থেকে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, প্রতিবাদ জানিয়েছে, অথচ অন্যান্য শিক্ষক সংগঠনসমূহের নিষ্ক্রিয়তা ও ক্ষমাহীন নিশ্চুপ ভূমিকার কারণে শিক্ষক ও শিক্ষাবিরোধী এ ঘৃণ্য অপতৎপরতার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাচ্ছে না।

‘মব জাস্টিসের কারণে সারা দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকদের দ্রুত পুনর্বাসন এই অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার এবং মব জাস্টিস বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

বাকবিশিসের ১১ দফা দাবিসমূহ—
১। শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ চাই, বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত সরকারিকরণ নয়। ইউনেস্কোর সুপারিশ মোতাবেক শিক্ষাখাতে জিডিপির ৬% বরাদ্দ করতে হবে।
২। সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদেরও শতভাগ উৎসবভাতা, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসাভাতা প্রদান করতে হবে।
৩। অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক ১১টি বিষয়ের ওপর গঠিত ১১টি সংস্কার কমিশনের ন্যায় শিক্ষা বিষয়ের ওপর শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
৪। উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ এবং উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষকের পদ বাতিল করে পূর্বের ন্যায় সহকারী অধ্যাপকের পদ চালু করতে হবে।
৫। বেসরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্সসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করাসহ নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবিলম্বে এমপিওভুক্ত করতে হবে।
৬। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় অবসর সুবিধা প্রদান করতে হবে। তবে এই বিধান না হওয়া পর্যন্ত অবসরে যাওয়ার তিন মাসের মধ্যেই কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর তহবিলের টাকা প্রদান করতে হবে। অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।
৭। বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির জন্য দ্রুত নীতিমালা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। বেসরকারি কলেজে সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের চাকুরির বয়সসীমা ৬৫ বছর করতে হবে।
৮। শিক্ষা প্রশাসনে বেসরকারি শিক্ষকদের আনুপাতিক হারে পদায়ন করতে হবে।
৯। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্বের ন্যায় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে এবং অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগও শিক্ষক নিয়োগের ন্যায় এনটিআরসিএ বা অন্য কোনো বিকল্প শিক্ষক নিয়োগ কমিশনের মাধ্যমে করতে হবে।
১০। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির জন্য শিক্ষকদের ওপর অসত্য অপবাদ দিয়ে হামলা, লাঞ্ছনা, হয়রানি ও চাকুরিচ্যুতি বন্ধ করতে হবে।
১১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে।

কর্মসূচি
১। আগামী ৭ মে বেলা ১১টায় সারা দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান।
২। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বাকবিশিসের ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মতবিনিময় করা।
৩। আগামী ২৪ মে, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ‘জাতীয় প্রেস ক্লাব’, ঢাকায় শিক্ষা ও শিক্ষক আন্দোলনের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে একটি গোল টেবিল বৈঠক।

আরআর/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
১৯ দেশের নাগরিকদের অভিবাসন স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র Dec 04, 2025
img

৪ ডিসেম্বর

ইতিহাসের এই দিনে স্মরণীয় যত ঘটনা Dec 04, 2025
জামায়াত মওদুদীবাদে বিশ্বাস করে, ইসলামে বিশ্বাস করে: মির্জা আব্বাস Dec 04, 2025
যুদ্ধের ক্ষত নিয়েও নতুন জীবনের স্বপ্ন, গাজায় ৫৪ দম্পতির গণবিয়ে Dec 04, 2025
সোমালিয়ার অভিবাসীদের আবর্জনা আখ্যা দিলেন ট্রাম্প Dec 04, 2025
পুঁজিবাদ নয় নারীর পরিচয় ও মর্যাদা নিয়ে কুরআনের নির্দেশনা সর্বোত্তম: খামেনি Dec 04, 2025
ট্রাইব্যুনালে লিখিতভাবে ক্ষমা চাইলেন ফজলুর রহমান Dec 04, 2025
খালেদা জিয়া মৃত্যুবরন করলে আখিরাতেও একই ধরনের সম্মান পাবে-ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান Dec 04, 2025
শেখ হাসিনার চুক্তি এই আমলেও বহাল কেন? প্রশ্ন বন্দর আন্দোলনের নেতাদের Dec 04, 2025
জনগণের সিদ্ধান্তকে আমরা চূড়ান্ত মেনে নিব; হাসনাত আবদুল্লাহ Dec 04, 2025
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে এভারকেয়ারে প্রধান উপদেষ্টা Dec 04, 2025
এইডস দিবসে সানির ব্যতিক্রমী বার্তা Dec 04, 2025
img
লাইফ সাপোর্টে অভিনেতা তিনু করিম Dec 04, 2025
img
মাগুরায় ২ মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেল যুবকের Dec 04, 2025
img
রংপুরের সমাবেশ শেষে ফেরার পথে পিকআপ উল্টে প্রাণ গেল ১ জনের, আহত ৮ Dec 04, 2025
img
বাইসাইকেল কিকে গোল করে মেসিকে কৃতিত্ব দিলেন রোমেরো Dec 04, 2025
img
সংকট নিরস‌নে জরুরি সাহায্যের আহ্বান শ্রীলঙ্কান কমিউনিটির Dec 04, 2025
img
লিডস ইউনাইটেডের কাছে ৩-১ গোলে হারাল চেলসি Dec 04, 2025
img
কিমের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা ‘ভাবছেন’ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট Dec 04, 2025
img

ইউএনওডিসি'র প্রতিবেদন

১০ বছরে মিয়ানমারে আফিমের চাষ সর্বোচ্চে Dec 04, 2025