আইপিএলে আরও একটি ব্যর্থ মিশন শেষ করেছে রাজস্থান রয়্যালস। গতকাল বৃহস্পতিবার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের কাছে ১০০ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে দ্বিতীয় দল হিসেবে চলতি আসর থেকে ছিটকে গেছে রিয়ান পরাগের নেতৃত্বাধীন দলটি। আর সবার আগে বাদ পড়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস।
২০০৮ সালে আইপিএলের উদ্বোধনী আসরে শিরোপা জিতেছিল রাজস্থান। এরপর ২০২২ সালে উঠেছিল ফাইনালে, তাতে কোনো লাভ হয়নি। ওই মৌসুমে রাজস্থানকে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপা জিতেছিল গুজরাট টাইটানস।
দলে অনেক তরুণ ক্রিকেটার আছেন। কিন্তু চলতি আসরে রাজস্থান দলে একটি জিনিসের ঘাটতি ছিল, সেটি অভিজ্ঞতা। অধিকাংশ ক্রিকেটারের বেশি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নেই। উদাহরণ হিসেবে বৈভব সূর্যবংশীর কথাই বলা যায়, মাত্র ১৪ বছরের কিশোর।
কেন জস বাটলার-টেন্ট্র বোল্টদের মতো প্রতিষ্ঠা তারকাদের ছেড়ে দিলো রাজস্থান, বৃহস্পতিবারের হারের পর এমন প্রশ্ন উঠেছে সংবাদ সম্মেলনে।
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আত্মবিশ্বাসী উত্তর দিয়েছেন রাজস্থানের ফিল্ডিং কোচ দিশান্ত ইয়াগনিক। তিনি নিজেদের কৌশলকেই ডিফেন্ড করেছেন। জানিয়েছেন তরুণদের নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা। আগামী আসরগুলোতেও একই পরিকল্পনা নিয়ে খেলবেন। প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার কেনায় মনোযোগ নয়, বরং তরুণ ট্যালেন্টগুলোকে কীভাবে পরিপূর্ণরূপে গড়ে তোলা যায়, সেটিই রাজস্থানের ভাবনা।
ইয়ানিক বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে যখনই নতুন কোনো খেলোয়াড় আমাদের দলে এসেছে, তারা তখনই বড় তারকা ছিল না। তারা আমাদের ফ্র্যাঞ্চাইজিতে এসে তারকায় পরিণত হয়েছে। বর্তমান দলটিকে নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী — ওরাও তারকা হয়ে উঠবে। আমরা ওদের তারকা বানাবো। আমরা সুপারস্টার কিনি না, আমরা সুপারস্টার তৈরি করি — এটাই আমাদের ট্যাগলাইন। উদাহরণ হিসেবে ধরুন বৈভব সূর্যবংশীকে। যেভাবে সে ব্যাট করেছে, সবাই খুব খুশি এবং আবেগাপ্লুত হয়েছিল। তাই আগামী বছরগুলোতে ওর মতো ছেলেরা তারকা হয়ে উঠবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন সময় এসেছে এসব বিষয়ের ঊর্ধ্বে উঠে ভাবার। যখন আমাদের কাছে কেউ নেই, তখন তাদের ভুলে গিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। এখন আমাদের কাছে বৈভব আছে, যশস্বী জয়সওয়াল আছে, সঞ্জু স্যামসন আমাদের অধিনায়ক। আমরা এই দল নিয়েই এগিয়ে যাব এবং এই দল নিয়েই আমাদের জয়ের সামর্থ্য প্রমাণ করবো।’
অভিজ্ঞ তারকা বেশি না থাকলেও বড় দলগুলোর সঙ্গে খুব বেশি ব্যবধানে হারেনি রাজস্থান, সেটিও উল্লেখ করলেন ইয়ানিক। দিল্লি ক্যাপিটালস, লখনৌ সুপার জায়ান্টস এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে রান তাড়ায় একেবারে কাছাকাছি গিয়ে হেরেছে দলটি। এসব ম্যাচে শেষ ওভারে এক অঙ্কের রান বা সহজ লক্ষ্যমাত্রা প্রয়োজন ছিল রাজস্থানের। কিন্তু সেটি করতে ব্যর্থ করতে হয় তারা।
ইয়ানিক বলেন, ‘যদি আপনি বেশিরভাগ ম্যাচ দেখেন, আমরা প্রায়শই জয়ের খুব কাছাকাছি ছিলাম। ওই চাপের মুহূর্তগুলোতে সঠিক বাস্তবায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেখানেই আমরা সম্ভবত একটু পিছিয়ে পড়েছি। সেখান থেকেই আমাদের দুই পয়েন্ট হাতছাড়া হয়েছে। আপনি জানেন, আমরা ওই তিনটি ম্যাচে আধিপত্য বজায় রেখেছিলাম, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে সঠিক বাস্তবায়নের ঘাটতি ছিল। এটা ক্রিকেটে হয়।’
এছাড়াও এই মৌসুমে রাজস্থানের ফিল্ডিং পারফরম্যান্স উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল ছিল। একাধিক সহজ ক্যাচ ফেলায় দলকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। বিশেষ করে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ম্যাচে সূর্যকুমার যাদবকে একাধিকবার জীবন দান করে রাজস্থানের ফিল্ডাররা।
এ বিষয়ে ইয়ানিক বলেন, ‘আমি গত আট বছর ধরে ফিল্ডিং কোচ হিসেবে রয়েছি। ২০১৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত যদি আপনি পরিসংখ্যান দেখেন, আমরা সবসময়ই শীর্ষ তিনে ছিলাম। মাঝে মাঝে এমন একটা মৌসুম আসে, যখন পরপর কয়েকটি ম্যাচে অনেক ক্যাচ মিস হয়। এটা সব ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গেই ঘটে। ক্রিকেটে ক্যাচ ধরা আর মিস করাটা খেলারই অংশ। আজকেও তিনটি ক্যাচ মিস হয়েছে। আসল বিষয় হলো, আপনি কতটা প্রস্তুত।’
এমআর/টিএ