আম একটি জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ফল, যা সবাই পছন্দ করে—এমন মন্তব্য করেছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ। তিনি বলেন, আমকে জাতীয় ফল হিসেবে ঘোষণা করা যায় কিনা, তা নিয়ে এখন চিন্তা করা উচিত।
সোমবার (৫ মে) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের বিল্লাল হোসেনের আমবাগানে আম পাড়ার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ডিসি আরও বলেন, কাঁঠালের কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে, যেটা অনেকের অপছন্দের কারণ। কিন্তু আম দেশের অর্থনীতিতে যেমন অবদান রাখে, তেমনি এটি একটি সর্বজনস্বীকৃত প্রিয় ফল।
তিনি বলেন, আমচাষিদের জন্য কৃষি ঋণের ব্যবস্থা থাকা উচিত। অনেক ব্যাংক কৃষি ঋণের টাকা বিতরণে জায়গা পাচ্ছে না। যদি আমরা আমচাষিদের মধ্যে সেই অর্থ বিতরণ করতে পারি, তাহলে তারা উপকৃত হবেন।
বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, আম মৌসুমে কয়েকটি জায়গায় হোলসেল মার্কেট স্থাপনের বিষয়টি আমরা বিবেচনায় নিচ্ছি। সেই সঙ্গে বাজারে যেন সিন্ডিকেট না গড়ে ওঠে, সেই বিষয়েও প্রশাসন তৎপর থাকবে।
সাতক্ষীরায় একটি কোল্ডস্টোরেজ স্থাপন ও আম গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন ডিসি মোস্তাক আহমেদ। তিনি বলেন, আমের ফলন বাড়াতে গবেষণাগার স্থাপন এখন সময়ের দাবি। সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়ার বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগাতে হলে এই গবেষণাকেন্দ্র অপরিহার্য।
এর আগে আমচাষিরা জেলা প্রশাসকের কাছে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙা ও কৃষি ঋণ সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান। আমচাষি বিল্লাল হোসেন বলেন, আমাদের ব্যবসা পুরোপুরি নগদ টাকায় পরিচালিত। একসময় ৫০ শতাংশ টাকা দিয়েও বাগান কেনা যেত, এখন পুরো টাকা নগদে গাছ কিনতে হয়। কেমিক্যাল, যন্ত্রপাতি—সবকিছুর দাম বেড়েছে। এই মৌসুমে আমার ছয়টি বাগানে ১৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে আমরা সঠিক দাম পাই না। প্রশাসন যদি বাজার মনিটর করে, তাহলে আমরা চাষিরা ন্যায্য দাম পাবো।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, সাতক্ষীরার ভৌগোলিক অবস্থান আম চাষের জন্য অনুকূল। এখানকার আম দেশের মধ্যে সবচেয়ে আগে পাকে এবং স্বাদে অতুলনীয়।
তিনি আরও জানান, এ বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার আম বিক্রি ও রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কেমিক্যাল বা ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহার রোধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।”
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে সাতক্ষীরার আম ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। হিমসাগর ও আম্রপালি জাতের আম রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
দেশের অর্থনীতিতে সাতক্ষীরার আম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রশাসন ও চাষিদের সমন্বিত উদ্যোগে এই সম্ভাবনাকে আরও বিস্তৃত করার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরএ/টিএ