অসময়ে জম্মু-কাশ্মীরের ২ বাঁধ থেকে পানি ছাড়ল ভারত

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর প্রথমবারের মতো কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে ভারতের পক্ষ থেকে জম্মু-কাশ্মীরের বাগলিহার ও সালাল বাঁধ থেকে হঠাৎ করে চেনাব নদীতে পানি ছাড়া হয়েছে।
 
সাধারণত প্রতিবছরের বর্ষাকালে, অর্থাৎ আগস্ট মাসে 'রিজার্ভার ফ্লাশিং' নামে পরিচিত এই প্রক্রিয়াটি চালু করা হয়। এর মাধ্যমে বাঁধে জমে থাকা পলি ও ময়লা সরিয়ে সংশ্লিষ্ট জলবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কার্যকারিতা বজায় রাখা হয়। তবে এবার নিয়ম ভেঙে আগেভাগেই পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।

ভারতের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দ্য হিন্দু'কে বলেন, 'গত কয়েকদিনে আমরা কিছু রিজার্ভার ফ্লাশিং করেছি। সিন্ধু পানি চুক্তির আওতায় সাধারণত আগস্টে এটি করা হয়, তবে এবার তা এগিয়ে আনা হয়েছে। এতে আগামী এক-দুইদিন পাকিস্তানে পানির প্রবাহ কিছুটা বাড়বে, কিন্তু তা গুরুতর নয়। তবে যেহেতু রিজার্ভারটি খালি করা হয়েছে, তা পূরণে সময় লাগবে এবং সে সময় পানির প্রবাহ কমে যেতে পারে।'
 
চুক্তি অনুযায়ী, ফ্লাশের মাধ্যমে এভাবে পানি ছাড়া হলে পাকিস্তানকে তা আগে থেকে জানানো বাধ্যতামূলক। তবে এবার তা করা হয়নি বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। চুক্তিটি ভারতের পক্ষ থেকে 'আংশিকভাবে স্থগিত' রাখা হলেও এভাবে ঘোষণা ব্যতীত পানি ছাড়া নিষিদ্ধ।

বাগলিহার বাঁধটি একটি ৯০০ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, যার পানি ধারণক্ষমতা ৪৭৫ মিলিয়ন কিউবিক মিটার। এটি 'রান-অব-দ্য-রিভার' প্রকল্প হওয়ায় এতে পানি ধারণক্ষমতা ক্ষমতা সীমিত এবং কেবল টারবাইন ঘোরানোর জন্য পানি ব্যবহৃত হয়।

প্রকল্পটির মালিক জম্মু-কাশ্মীর স্টেট পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দক্ষিণ হরিয়ানা ও উত্তর হরিয়ানা বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো ক্রয় করে।
সূত্র জানায়, 'এটি এমনিতেই খরার সময়, বিদ্যুৎ উৎপাদন এমনিতেই কম থাকে। ফলে এটি সাময়িক প্রভাব ফেলবে।'

জম্মু-কাশ্মীরের রেয়াসি জেলায় অবস্থিত সালাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটি ৬৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। এখান থেকেও একইভাবে পানি ছাড়া হয়েছে এবং বর্তমানে স্লুইস গেটগুলো বন্ধ করে জলাধার ভরার কাজ চলছে।তবে ঝিলাম নদীতে ৩৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কিশানগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে এখনই পানি ছাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
 
সিন্ধু নদীর শাখা হিসাবে পরিচিত ঝিলাম, চেনাব, রাভি, বিয়াস ও শতদ্রু নদীগুলো পাকিস্তানের পানি সরবরাহের মূল উৎস। দেশটির ৮০ শতাংশ চাষযোগ্য জমি এই পানি ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে ৯৩ শতাংশ পানি ব্যবহৃত হয় সেচকার্যে, যা পাকিস্তানের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির মেরুদণ্ড এবং দেশের মোট জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

পেহেলগামে হামলার পর ভারত ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা আইডব্লিউটি নিয়ে এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে যা আগে কখনো বিবেচনায় আনা হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে—চুক্তির নতুন বিরোধ নিষ্পত্তি আলোচনা থেকে সরে আসা, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর নকশায় পরিবর্তন এনে আরও বেশি পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং 'ড্রডাউন ফ্লাশিং' কৌশল প্রয়োগ।গত ২৬ এপ্রিল, জলশক্তি মন্ত্রী সি.আর. পাতিল ঘোষণা দেন, 'সিন্ধু থেকে একবিন্দু পানিও পাকিস্তানে যাবে না।'

এমআর/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ৮ জন May 07, 2025
img
ভারতের ৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতি করার দাবি পাকিস্তানের May 07, 2025
img
ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারালেন যুবক May 07, 2025
img
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের ওপর ছাত্রদল নেতার হামলা May 07, 2025
img
ভারতের আরও একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত, সবমিলিয়ে দাঁড়াল ৩ May 07, 2025
img
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানীতে বিস্ফোরণ! May 07, 2025
img
বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে নারীর পাশে দাঁড়াতে হবে : উপদেষ্টা May 07, 2025
img
ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আহছানিয়া মিশনের ৯ পরামর্শ May 07, 2025
দেশে ফিরেই অসুস্থ মাকে দেখতে স্কয়ার হাসপাতালে ডা. জুবাইদা রহমান May 07, 2025
img
ইতিহাস গড়েও সেমিফাইনাল শেষে বার্সার স্বপ্নভঙ্গ May 07, 2025