জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) ও ভারতের অন্যান্য আন্তর্জাতিক সীমান্তে পাকিস্তানি হামলায় তুরস্কের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছে ভারত। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্ক থেকে সরবরাহকৃত ৩০০ থেকে ৪০০টি ড্রোন পাকিস্তান ভারতীয় সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় ব্যবহার করেছে।
‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে এক বিশেষ প্রেস ব্রিফিংয়ে ভারত সরকার জানায়, এসব ড্রোন লাদাখের লেহ থেকে গুজরাটের স্যার ক্রিক পর্যন্ত ৩৬টি স্থানে ভারতের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে হামলা চালায়। প্রায় ৪০০টি ড্রোনের বেশ কয়েকটি ভারতীয় বাহিনী কাইনেটিক ও নন-কাইনেটিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ধ্বংস করে এবং ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করে ফরেনসিক তদন্তে পাঠানো হয়েছে।
ড্রোনের ধ্বংসাবশেষের প্রাথমিক ফরেনসিক প্রমাণে দেখা গেছে, এগুলো তুরস্কের ‘আসিস গার্ড সোঙ্গার’ ড্রোন ছিল।ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, জম্মু ও কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করেনি তুরস্ক। পাকিস্তান-সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীদের দ্বারা নিহত ভারতীয় পর্যটকদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানায়নি তারা। তার পরিবর্তে পাকিস্তানকে কাশ্মীর ইস্যুতে সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে।
সম্প্রতি ছয়টি তুর্কি সামরিক বিমান পাকিস্তানে পৌঁছেছে বলে খবর ছড়ায়। যেগুলোতে তুরস্কে তৈরি অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। আঙ্কারা এই খবর অস্বীকার করেছে। তবে তুরস্ক তাদের সি-১৩০ সামরিক বিমানের উপস্থিতি অস্বীকার করতে পারেনি। কারণ এটি বিশ্বব্যাপী বিমান নজরদারি সিস্টেমে ধরা পড়েছে।কিন্তু তাতে তারা কোনো অস্ত্র পাকিস্তানে পাঠানো হয়েছে বলে অস্বীকার করেছে। আঙ্কারা এক বিবৃতিতে বলেছে, তুর্কি থেকে একটি কার্গো বিমান পাকিস্তানে জ্বালানি ভর্তি করার জন্য অবতরণ করেছিল। এ থেকে সন্দেহ আরও তীব্র হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বলেন, পাকিস্তান বৃহস্পতিবার ভারতের সেনাছাউনিকে নিশানা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ সময় ভারতের আকাশসীমাও লঙ্ঘন করার চেষ্টা করেছে তারা। এমনকি নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) ক্রমাগত গোলাবর্ষণ করেছে পাকিস্তানের সেনারা।
তিনি বলেন, রাতভর এ হামলায় ভারতে অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ বার ড্রোন হামলার চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। দেশটির এসব হামলা প্রতিহত করেছে সেনাবাহিনী। এমনকি বেশকিছু ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে।
কর্নেল কুরেশি বলেন, গোপনে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য পাকিস্তান এসব ড্রোন পাঠিয়েছে। এর মধ্যে যেসব ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে তার ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে এগুলো তুরস্কের বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা আরও তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভূরাজনৈতিক টানাপড়েনে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে তুরস্কের ভূমিকা এখন থেকে আরও বেশি নজরে থাকবে। বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার পটভূমিতে তুরস্কের পদক্ষেপ ভারতীয় প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক মহলে চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে তুরস্ক ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে গভীর হয়েছে। তুর্কি প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলো পাকিস্তানের সাবমেরিন আপগ্রেড প্রকল্পে সহায়তা করছে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। এসব মহড়ায় নিজেদের কৌশলগত শক্তি ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করছে পাকিস্তান।
আরএ/এসএন