পারমাণবিক আলোচনা শুরুর আগে সৌদি আরব ও কাতারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ওমানে অনুষ্ঠেয় পরোক্ষ পারমাণবিক আলোচনার চতুর্থ দফার আগে সৌদি আরব ও কাতার সফর করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। রোববার এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

শনিবার (১০ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ গতি, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার—এই বিষয়গুলো আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।

শনিবার দোহায় এক বিবৃতিতে আরাগচি বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হয় আমাদের পারমাণবিক অধিকার কেড়ে নেওয়া, তাহলে তেহরান আমাদের কোনো অধিকার থেকে একচুলও পিছপা হবে না।

ইরান জোর দিয়ে বলেছে, তাদের কর্মসূচি শুধুই বেসামরিক উদ্দেশ্যে এবং তারা কোনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না।

আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আরাগচি বলেন, আমি আগেই বলেছি, যদি চুক্তির লক্ষ্য হয় নিশ্চিত করা যে ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করবে না—তবে সেটি ইতোমধ্যেই অর্জিত হয়েছে, এবং চুক্তি সম্ভব।

তিনি বলেন, কিন্তু যদি অপরপক্ষ অবাস্তব দাবি তোলে, তাহলে সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।

শুক্রবার ব্রেইটবার্ট নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, যিনি ওমানে আলোচনায় যুক্ত থাকবেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের কথাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে যে তারা পারমাণবিক অস্ত্র চায় না। তবে সেই অবস্থান যাচাইয়ের জন্য কিছু শর্ত দিচ্ছে ওয়াশিংটন।

তিনি বলেন, যদি তারা সত্যিই তাই চায়, তাহলে তাদের সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে হবে, সেন্ট্রিফিউজগুলো অপসারণ করতে হবে, তাদের জ্বালানি মজুদ মিশ্রিত করে দূরে পাঠাতে হবে এবং বেসামরিক প্রকল্পে রূপান্তর করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ইরান চাইলে বেসামরিক শক্তির জন্য বিদেশ থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আমদানি করতে পারে।

শনিবার উপসাগরীয় দেশগুলোতে আরাকচির সফরের আগে শুক্রবার তেহরান নিশ্চিত করে যে আলোচনা এগোচ্ছে।

আরাগচি ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, আলোচনা এগিয়ে চলছে এবং স্বাভাবিকভাবে যত এগোচ্ছে, তত বেশি পরামর্শ ও পর্যালোচনা প্রয়োজন।

ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ বাদর আলবুসাইদি শুক্রবার বলেন, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ের পর বিলম্বিত আলোচনা ওমানের রাজধানী মাসকটে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে রোমে ৩ মে আলোচনার সময় নির্ধারিত থাকলেও ওমান তা পিছিয়ে দেয় ‘লজিস্টিক কারণে’।

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বহুদিন ধরে আন্তর্জাতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই আলোচনা নতুন করে কূটনৈতিক সমঝোতার প্রচেষ্টা, যা কয়েক বছর ধরে স্থবির হয়ে আছে।

বারাক ওবামা প্রশাসনের আমলে একটি বহুপক্ষীয় চুক্তি ২০১৫ সালে সম্পন্ন হয়, যার নাম ছিল যৌথ সামগ্রিক কর্মপরিকল্পনা। এতে ইরান নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিনিময়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ হ্রাস এবং পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আন্তর্জাতিক পরিদর্শনের শর্তে রাজি হয়।

কিন্তু ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে আসে, ফলে তা কার্যত ভেঙে পড়ে।

এরপর থেকে পশ্চিমা অনেক দেশ ইরানের কর্মসূচিকে অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা হিসেবে দেখে আসছে। তবে তেহরান তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

নিজেই স্বীকার করেছেন ট্রাম্প, ইরান বিষয়ে তার নীতিতে দ্বিধা ছিল। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি বলেন, তার উপদেষ্টারা তাকে চাপ দিচ্ছিল, যদিও তিনি কূটনীতির মাধ্যমে সম্পূর্ণ যাচাইযোগ্য সমাধান চান।

রেডিও উপস্থাপক হিউ হিউইটকে বৃহস্পতিবার দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, আমি চুক্তি করতে চাই, যুদ্ধ নয়।

তবে তিনি আরও বলেন, দুই পথ খোলা—একটা হলো সুন্দরভাবে ধ্বংস করা, আরেকটা হলো নিষ্ঠুরভাবে ধ্বংস করা।

পারস্য উপসাগরীয় তৎপরতা
শনিবার সৌদি আরব ও কাতার সফরের বিষয়ে আরাগচি বলেন, এটি প্রতিবেশীদের সঙ্গে চলমান পরামর্শেরই অংশ। সফরের লক্ষ্য হলো উদ্বেগ ও পারস্পরিক স্বার্থ” নিয়ে আলোচনা।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে, তবে এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান আলোচনা নিয়ে আমাদের সৌদি সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করা।
তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত হতে চাই যে সবাই জানে কী হচ্ছে, এবং কারও উদ্বেগ না থাকে… আমি আশা করি চুক্তি হলে কারও আপত্তি থাকবে না।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই বলেন, শনিবার ওমান আলোচনায় ইরানের একটি কারিগরি প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল সম্পর্কে কিছু বলেননি।

এফপি/এস এন  

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৫৬ বন্দির সাজা মওকুফের আদেশ Jul 01, 2025
img
এক ডিআইজিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত Jul 01, 2025
img
পৃথিবীর অন্য কোনো শহরকে কলকাতার মতো মনে হয় না: জয়া Jul 01, 2025
img
রাতের ভোটের দায় স্বীকার করে আদালতে সাবেক সিইসি নূরুল হুদার জবানবন্দী Jul 01, 2025
img
সব মামলার অবসান ঘটিয়ে এক হলেন হিরো আলম-রিয়ামনি Jul 01, 2025
শাকিবকে ‘মেগাস্টার’ বলা নিয়ে আপত্তি জাহিদ হাসানের Jul 01, 2025
বিপিএলে দল নিতে আবেদন করেছে নোয়াখালী Jul 01, 2025
আগস্টে বাংলাদেশ সফরে আপত্তি ভারতের, সিরিজ পেছাতে চায় বিসিসিআই Jul 01, 2025
ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বিপিএল আয়োজন সম্ভব? দল গঠনে আসছে বড় পরিবর্তন! Jul 01, 2025
img
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার তৃতীয় দিনে অনুপস্থিত ২৪৮৬৪, বহিষ্কার ৬২ Jul 01, 2025
কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়ারাই পাবেন কোটা সুবিধা! Jul 01, 2025
img
এইচএসসি পরীক্ষায় নকল সরবরাহের অভিযোগ, ছাত্রদল নেতা আটক Jul 01, 2025
তাপপ্রবাহে জ্বলছে ইউরোপ, ফ্রান্সে রেড অ্যালার্ট জারি Jul 01, 2025
ড. ইউনূস শহীদদের প্রকৃতভাবে মূল্যয়ন করছেন না! Jul 01, 2025
img
যেসব ইস্যুতে ঐকমত্য, সেসবেই সংস্কার হবে : মান্না Jul 01, 2025
রাজনৈতিক দলগুলো হাসিনা স্টাইলে সংস্কারে বা'ধা দিচ্ছে! Jul 01, 2025
এনসিপি নেতা থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা! Jul 01, 2025
জুলাই স্মৃতি উদযাপন অনুষ্ঠানমালা নিয়ে যা জানাচ্ছেন উপদেষ্টা ফারুকী Jul 01, 2025
img
কঙ্গনাকে ছাড়িয়ে গেলেন কাজল Jul 01, 2025
img
নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিচ্ছেন নুরুল হুদা Jul 01, 2025