রাবিতে নিজ চেম্বারে ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষক, বরখাস্তের দাবি শিক্ষার্থীদের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ নিজ চেম্বারে ছাত্রীসহ আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়েছেন। বুধবার (১৫ মে) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। বন্ধের দিন তাদের হাতেনাতে ধরেন শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনায় মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহর প্রতি ধিক্কার জানিয়ে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্য। জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাকে দেখা গেছে।

ওই ছাত্রী ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তরের (এমবিএ) বেগম খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনি স্নাতকে (বিবিএ) ভালো ফল অর্জন করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের দিন বিকেল ৫টার দিকে বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের (এমবিএ) ওই ছাত্রীকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অ্যাকাডেমিক ভবনের ৩০৭ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করেন মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ। কক্ষে প্রবেশের পর বৈদ্যুতিক বাতি বন্ধ করে দেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই কক্ষের দরজায় কড়া নাড়েন। বেশ কিছুক্ষণ পর শিক্ষক দরজা খুলে দেন। শিক্ষার্থীরা কক্ষে প্রবেশ করে দেখেন- ছাত্রীর ওড়না-হিজাব শরীরে নেই। ছাত্রীর ব্যাগ, সেফটিপিনসহ অনেক কিছু শিক্ষকের টেবিলে ছিল। পাশেই রাখা ছিল বালিশ। ছাত্ররা ভিডিও করার সময় ওই ছাত্রীর মাথায় একটি রুমাল পরিয়ে মাথা ঢেকে দেন মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তখন জানতে চান, ছাত্রীর মাথায় কেন রুমাল পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে? জবাবে শিক্ষক বলেন, ‘সে মেয়ে মানুষ, তাই।’ এ সময় ওই শিক্ষক ও ছাত্রীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয় কক্ষে প্রবেশ করা শিক্ষার্থীদের। পরে বিষয়টি তাদের মধ্যে মীমাংসা হয়।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

এদিকে যৌন হয়রানি অভিযোগ ও চেম্বারে ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ায় মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে থেকে এই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘হেদায়েত উল্লাহ ধিক্কার, চাইছি তোমার বহিষ্কার’, ‘পাপুলের (হেদায়েত উল্লাহ) চামড়া, তুলে নেব আমরা’, ‘এক দফা এক দাবি, পাপুল তুই কবে যাবি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে আয়োজিত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, এ রকম শিক্ষককে আমরা শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতে চাই না। উনি আমাদের বিভাগের মানসম্মান সব নষ্ট করেছেন। তার ক্লাসও আমরা করতে চাই না। তাকে বিভাগ থেকে স্থায়ী বরখাস্তের দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে অনৈতিক কাজে জড়িতে সেই ছাত্রীকেও বিভাগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান তারা।

ফাইন্যান্স বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. শিবলী সাদিক বলেন, মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে আগে এক ছাত্রী বিভাগে যৌন হয়রানির অভিযোগ দিয়েছিল। তখন বিভাগের সভাপতি আরেকজন ছিলেন। পরে বিভাগের সভাপতি বসে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। তবে গত রোববার ছাত্রীর সঙ্গে কক্ষে আপত্তিকর অবস্থায় থাকার বিষয়টি তিনি জানেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবর রহমান বলেন, ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহর কক্ষে ছাত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়ার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না, কেউ অভিযোগ দেননি। তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখে ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নয়। আমি খোঁজ নিচ্ছি বিষয়ে। প্রথমে আমাকে জানতে হবে সেখানে আসলে কী ঘটেছে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।

টিকে/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
চট্টগ্রামে প্রথম দুই ব্যক্তির শরীরে জিকা ভাইরাস শনাক্ত Jul 08, 2025
img
শুবমান গিলকে থামাতে সেরা অস্ত্র হতে পারেন আর্চার : ব্রড Jul 08, 2025
img
সাবেক সচিব, বিচারক ও নির্বাচন কমিশনারসহ ১২ জন সরকারি কর্মকর্তার ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিল Jul 08, 2025
img
শুধু টাকার জন্য তো ক্রিকেটটা কেউ খেলে না: রনি Jul 08, 2025
img
বাবার তবলায় মায়ের গান, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিল্পী মা: জয়া Jul 08, 2025
আ.লীগ ছাড়া অন্য দলগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়ে ইসির চিঠি Jul 08, 2025
ঢাকাসহ ৪ বিভাগে অতি ভারী বর্ষণের শঙ্কা Jul 08, 2025
img
রণবীর, ইয়াশ ও সাই পল্লবীর ওপর আরোপ করা হয়েছে মিডিয়া ব্যান Jul 08, 2025
২০১৮'র নির্বাচনকে বৈধতা দিল বিএনপি: ফয়জুল করীম Jul 08, 2025
img
এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চাইলেন আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা Jul 08, 2025
মহাকাশ চালাল চ্যাটজিপিটি, সফল হলো পরীক্ষা Jul 08, 2025
img
প্রথমবারের মতো অনুমোদন পেলো শিশুদের ম্যালেরিয়ার ওষুধ Jul 08, 2025
রাষ্ট্রপতিকে না সরিয়ে গণঅভ্যুত্থানের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে: নাহিদ Jul 08, 2025
আদালতে হাজির মালয়েশিয়া ফেরত চারজন, রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে Jul 08, 2025
img
রাবাদা ও হ্যাজলউডকে পেছনে ফেলে শীর্ষে তাসকিন Jul 08, 2025
তাদের রাজনীতি বসুন্ধরার কাছে বর্গা দেয়া প্রশ্ন তুললেন হাসনাত Jul 08, 2025
নির্বাচন নিয়ে এতো দাবি করতে হবে কেন ইউনুস সাহেব? Jul 08, 2025
কুষ্টিয়ায় আবরার ফাহাদের ক ব র জেয়ারত শেষে কথা বলছেন নাহিদ Jul 08, 2025
ক্ষমতার উৎস জনতা;সিরাজগঞ্জে পদযাত্রার বক্তব্যে হাসনাত Jul 08, 2025
img
শামীম হায়দারের নেতৃত্বে আ. লীগের পুনর্বাসন হতে যাচ্ছে : রাশেদ খান Jul 08, 2025